জেলা থেকে জেলায় বাইক চলাচল বন্ধ চায় টাস্কফোর্স

জেলা থেকে জেলায় বাইক চলাচল বন্ধ চায় টাস্কফোর্স
MostPlay

এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মোটরসাইকেল চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ চায় সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়ন সংক্রান্ত কমিটির ১১১ দফা সুপারিশমালা বাস্তবায়নের জন্য গঠিত টাস্কফোর্স। আজ বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সভা শেষে টাস্কফোর্সের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। শাজাহান খান বলেন, ১১১ সুপারিশের মধ্যে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীদের হেলমেট পরা, ট্রাকের বাস্পার-অ্যাঙ্গেল অপসারণসহ কয়েকটি বিষয় সরকার বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে। আমার বিশ্বাস প্রায় ৮০ ভাগ চাঁদাবাজি বন্ধ করে দিয়েছি।

বাকিটা বন্ধ করার বিষয়ে আজ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আইজি-সাহেবসহ মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনায় আমরা সেভাবে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেব। শহরে এখনও বাসগুলো প্রতিযোগিতা করে চলাচল করছে, একটি বাস আরেকটি বাসের গতি রোধ করে যাত্রী তুলছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শাজাহান খান বলেন, ‘আমরা আজও বিষয়টি আলোচনা করেছি এবং এটায় খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অনেক সময় আমাদের শ্রমিকদের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

শ্রমিকরা মালিকদের কাছ থেকে বাস ইজারা নেয়। এ অবস্থা আমরা ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিচ্ছি। এটা ক্ষতিকর। আমরা নির্দেশ দিচ্ছি, যাতে কোনোক্রমেই একটি বাস আরেকটি বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা না করে। গাড়ি রেখে রাস্তা আটকে রাখা- এসব বিষয়ে আমরা একটা সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আমরা কর্মরত ৬২ হাজার পরিবহন শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আরো পরিবহন শ্রমিককে আমরা প্রশিক্ষণ করাবো টার্মিনালগুলোতে’ বলেন সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।

শাজাহান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আরো কয়েকটি বাস টার্মিনাল করার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেগুলো হলে আর সড়কে পার্কিং করা যাবে না। আর পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি শুধু পুলিশ জব্দ করবে না, সেগুলো স্ক্র্যাপ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মোটরসাইকেল নিয়ে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, দূরপাল্লায়, আন্তজেলায় রাইডশেয়ারিং হবে না। আজও এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আপনারা জানেন ৪০ শতাংশ দুর্ঘটনা হয় মোটরসাইকেলে। সুতরাং আমরা সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন থেকে স্থায়ীভাবে দূরপাল্লায় রাইডশেয়ারিং হবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এটাকে বাস্তবায়নের জন্য বলেছি। তবে এখনও স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়নি। ’ অনেকে বলছেন বাসমালিকদের ষড়যন্ত্রে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে- এ বিষয়ে শাজাহান খান বলেন, ‘এটা হাস্যকর ব্যাপার ছাড়া আর কিছু না।

শাজাহান খান বলেন, ‘ইতোমধ্যে ড্রাইভারদের ডোপ টেস্ট করে লাইসেন্স নবায়ন করা বা নতুন লাইসেন্স দেওয়ার একটি সিদ্ধান্ত আছে। এই ডোপ টেস্টের বিষয়ে কয়েকটি সেন্টার আছে। আমরা এর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে বলেছি। এই টেস্ট করতে ৯০০ টাকা প্রয়োজন হয়, সেটাকে কমানোর জন্য অনুরোধ করেছি। এতে যাতে ড্রাইভারদের হয়রানি করা না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। ’ ‘আমরা বলেছি বিআরটিএ’র ৯৩১ জন কর্মীর জনবল কাঠামো রয়েছে।

এর মধ্যে ১২২টি পদ এখনও শূন্য। আমরা বলেছি যে আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে এদের নিয়োগ দিতে হবে এবং সংখ্যা বাড়াতে হবে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হাইওয়ে পুলিশের সংখ্যা প্রয়োজন আট হাজারের উপরে। সেখানে দুই হাজার প্লাস রয়েছে। এটাও যাতে বাড়ানো যায় আমরা সেই অনুরোধ করেছি। ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা এখন ঢাকা শহরে যা আছে আমরা মনে করি এটা খুবই সামান্য।

ট্রাফিক নিয়েন্ত্রণে পুলিশের সংখ্যাও আমরা বাড়াতে বলেছি। ’ পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নামে চাঁদাবাজি অনেকটাই বন্ধ হয়েছে দাবি করে শাজাহান খান বলেন, ‘তবে নতুন করে একটি সমস্যা তৈরি হয়েছে বিশেষ করে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা যারা সড়ক-মহাসড়ক থেকে টোলের নামে টাকা নিচ্ছে। অথচ ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সার্কুলারে বলা হয়েছে সড়ক-মহাসড়ক থেকে টোল আদায় করা যাবে না, শুধু টার্মিনাল থেকে টোল নিতে পারবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগকে পত্র নিয়ে অবিলম্বের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে যে চাঁদা আদায় হচ্ছে টোলের নামে তা বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ’ ‘মানসম্মত ড্রাইভিং স্কুল আমাদের দেশে অনেক কম। উত্তরায় বা অন্য জায়গায় প্রচুর অবৈধ স্কুল আছে। আমরা বিআরটিএকে নির্দেশনা দিয়েছি এসব স্কুল বন্ধ করে যাদের অনুমতি দেওয়া সম্ভব তাদের অনুমোদন দিতে। ’ তিনি বলেন, ‘হাইওয়ের পাশের হাটগুলো ইজারা দেওয়া হচ্ছে।

এগুলোকে ইজারা না দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। ’ টাস্কফোর্সের এ সদস্য আরো বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি নিয়োগপত্র নিয়ে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে একটা বিরোধ আছে। আমরা এটা আলোচনা করেছি এবং একটি সিদ্ধান্তও নিয়েছি। মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বসে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করবেন এবং কমিটিতে অবহিত করবেন।

সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের নিয়োগপত্রের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শাজাহান খান বলেন, ‘এখন শ্রমিকরা নিয়োগপত্র পাচ্ছেন না। এখন কেন্দ্রীয়ভাবে মালিক ও শ্রমিকরা এ বিষয়ে বসবেন। আমরা সবাই একমত হয়েছি সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একদিন ভার্চুয়ালি সারাদেশে একসঙ্গে নিয়োগপত্র দেওয়ার বিষয়টি উদ্বোধন করবেন। শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনেক আগের বাস্তবায়নটা একটু দুর্বল ছিল, এটাকে আমরা এভাবে ত্বরান্বিত করতে চাই।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password