কিছু রোহিঙ্গা নিতে পারেন বড় মাতবরেরা

কিছু রোহিঙ্গা নিতে পারেন বড় মাতবরেরা

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। আমরা আর পারব না। আমাদের কাছে কোনো জায়গা নেই। বড় যাঁরা মাতবর, যাঁরা আমাদের উপদেশ দেন, আদেশ করেন, তাঁরাও রোহিঙ্গাদের নিতে পারেন।তাঁদের জায়গার কোনো অভাব নেই।’সাগরে ভাসা একদল রোহিঙ্গাকে নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আজ শুক্রবার দুপুরে তিনি গণমাধ্যমের কাছে এ মন্তব্য করেন।

ঘূর্ণিঝড় আম্পান বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানার আগে গত বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতেরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন। ওই সময় অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি সাগরে ভাসা রোহিঙ্গাদের বিষয়টি আলোচনায় তোলে ইউরোপের রাষ্ট্রদূতেরা।

প্রসঙ্গত মানবপাচারকারীদের খপ্পড়ে পড়া তিনশরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার পর এ মাসে ভাসানচরে রাখার ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ। বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে চাপ কমানোর বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে নোয়াখালীতে জেগে ওঠা ওই দ্বীপে এক লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো-সুবিধা গড়ে তুলেছে। যদিও ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সরানোর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিরোধিতা করে আসছে। আর রোহিঙ্গারাও এখন পর্যন্ত ভাসানচরে যেতে আগ্রহী নয়।

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে থাকার বিষয়টি এনে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘অনেকের ধারণা যেহেতু নতুন একটা দ্বীপ সেখানে পানি থাকে। আর ঝড়-বৃষ্টি হলে ভাসানচর ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। অন্যরা যেহেতু বলে আমাদেরও ভয় ছিল। বড় ঝড় হলে ভাসানচর বোধ হয় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। অথচ ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ছোবল হানার পর শ-পাঁচেক জেলে ভাসানচরে আশ্রয় নিয়েছিল। এবার ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আগে আমাদের ইউরোপীয় বন্ধু দেশ ও তাদের রাষ্ট্রদূতেরা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে আমরা ওখানে রেখেছি। তাদের জন্য তারা কিছু করবে কি না। ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের নিয়ে উনারা খুব চিন্তিত। ঝড়ে যদি রোহিঙ্গারা ভেসে যায়!’

তিনি জানান, ঐতিহাসিকভাবে ভাসানচরে পানির উচ্চতা ১৫ ফুটের বেশি নয়। ভাসানচরে দুটো বাঁধ আছে। প্রথমটা ১২ ফুট উঁচু আর দ্বিতীয়টি ৩৩ ফুট। রাখাইন থেকে মালয়েশিয়ায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে বাধ্য হয়ে ভাসানচরে নিয়েছে। তা ছাড়া তো কোনো বিকল্প ছিল না। কারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে অনেকেই চিন্তিত।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি সামনে আনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এতে বিরক্তি প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যখনই ঝামেলা হয়, তখন সবাই বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ভাবখানা এমন আমরা যেহেতু আগে ১১ লাখ আশ্রয় দিয়েছি, বাকিগুলোকেও দিই। রোহিঙ্গা দুনিয়ার যেখানেই হবে, তাকে আপনারা সাহায্য করেন। আমরা বলেছি, আমরা আর পারব না। আমাদের কাছে কোনো জায়গা নেই। অন্যদেরও দায়িত্ব আছে। রোহিঙ্গা একা আমাদের সমস্যা নয়। বিশ্বের সমস্যা। উপকূলীয় যে দেশগুলো রয়েছে তারা নিতে পারে। কিংবা বড় যারা মাতবর, যাঁরা আমাদের উপদেশ দেন, আদেশ করেন, তাঁরাও নিতে পারে। তাঁদের জায়গার কোনো অভাব নেই।’

গত বুধবার ইউরোপের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘সেদিন ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূত এসেছিলেন। আমি তাকে বলেছি আপনার যদি তাদের উন্নত জীবন দেওয়ার দরদ থাকে, আপনারা নিয়ে যান কোনো অসুবিধা নেই। কাউকে আটকাব না। তাদের যেকোনো জায়গায় নিয়ে যান। এখানে থাকলে তাদের ভবিষ্যৎ ভালো হবে না।’

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password