সিনহা হত্যাঃ গুলি করেন লিয়াকত, বুট দিয়ে গলা চেপে ধরেন প্রদীপ

সিনহা হত্যাঃ গুলি করেন লিয়াকত, বুট দিয়ে গলা চেপে ধরেন প্রদীপ

প্রথমে সিনহার গাড়ি থামিয়ে গুলি করেন লিয়াকত, বুট দিয়ে গলা চেপে ধরেন ওসি প্রদিপ। কক্সবাজারের টেকনাফে আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আদালতে এসব কথা বলেছেন সাহিদুল ইসলাম সিফাত।

সাক্ষ্য প্রদানকালে সিফাত বলেন, ‘ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাহারছড়া চেকপোস্টে সিনহার গাড়ি থামান পরিদর্শক লিয়াকত আলী। তিনি (সিনহা) গাড়ি থেকে হাত উঁচু করে নামার সঙ্গে সঙ্গে লিয়াকত গুলি করেন। এতে সিনহা মাটিতে পড়ে গেলেও তিনি দীর্ঘ সময় বেঁচে ছিলেন। পরে আসামি ওসি প্রদীপ এসে প্রথমে সিনহার বুকের বাম পাশে লাথি মারেন। এরপর গলায় বুট জুতা দিয়ে চেপে ধরেন। পরে মেজর (অব:) সিনহা নিস্তেজ হয়ে যান।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ মামলায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন। মামলার আসামি প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলী ও লিটন মিয়ার পক্ষে তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, অ্যাডভোকেট সৈকত কান্তি দে এবং অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ বাদীকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত জেরা করেন। এরপর হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সিনহার সঙ্গী সাহিদুল ইসলাম প্রকাশ সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। রাত ৮টা পর্যন্ত তার সাক্ষ্যগ্রহণ চলে।

ওইদিন সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে আসামি লিয়াকত আলীর আইনজীবী বাদী শারমিন ফেরদৌসকে জেরা করতে শুরু করেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত তা চলে। জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল দুপুর ২টার পর এক ঘণ্টার জন্য আদালত বিরতি দেন। বিরতির পর ফের আদালত শুরু করলে লিয়াকত আলীর পক্ষে তার আইনজীবী আবার বাদীকে জেরা শুরু করেন। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত জেরা করেন অপর দুই আসামি ওসি প্রদীপ ও লিটন মিয়ার আইনজীবী।

আসামি প্রদীপ ও লিয়াকতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত দুপুরে বলেন, এই মামলায় এজাহার এবং সাক্ষীর বক্তব্যে যথেষ্ট গরমিল রয়েছে। আমরা আদালতেকে তা অবহিত করেছি।’

তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে আসামিদের চরিত্র হনন করা হচ্ছে। এতে বিচারের আগেই আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে।১ এর আগে সোমবার সকালে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে মেজর সিনহা হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিনে ১২ জন আসামির পক্ষে আইনজীবীরা বাদীকে জেরা করেন।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলামকে (সিফাত) পুলিশ আটক করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার অপর দুই সফর সঙ্গী শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।

সিনহা হত্যার ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password