বাংলাদেশে নারী মুক্তির আন্দোলনে অগ্রণী নেত্রী ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল

বাংলাদেশে নারী মুক্তির আন্দোলনে অগ্রণী নেত্রী ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল

আজ ২১ জুন (২০২১) বিকাল ৩টায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মানিকগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে কবি, লেখিকা ও আধুনিক বাংলাদেশের নারী প্রগতি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব বেগম সুফিয়া কামালের ১১০তম জন্মদিন উপলক্ষে ‘বাংলাদেশে নারী মুক্তির আন্দোলন: সুফিয়া কামালের অবদান’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত ওয়েবিনারে নির্মূল কমিটি মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ-এর সভাপতিত্ব ও সাঞ্চলনায় আলোচক হিসাবে ছিলেন নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী কাজী মুকুল, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক শওকত বাঙালি, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, নির্মূল কমিটির খুলনা জেলার সহসভাপতি সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী, সর্ব ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সভাপতি সমাজকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, নির্মূল কমিটি মানিকগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট সাখাওয়াৎ হোসাইন খান, নির্মূল কমিটি মানিকগঞ্জ জেলার উপদেষ্টা অধ্যাপক উর্মিলা রায়, নির্মূল কমিটি মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সহসভাপতি নারীনেত্রী লক্ষী চ্যাটার্জী, নির্মূল কমিটি নারী ফ্রন্ট মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি রাজলক্ষী চৌধুরী, নির্মূল কমিটি মানিকগঞ্জ জেলা শাখার স্টুডেন্ট ফ্রন্টের সভাপতি রীক্তা রিতুসহ জেলার নেতৃবৃন্দ।

নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী কাজী মুকুল বলেন, বাংলায় নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সুফিয়া কামাল এক অবিস্মরণীয় নাম। কিন্তু আমাদের সমাজে বিরাজমান পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধের কারণে এ রাষ্ট্র গঠনে সুফিয়া কামালের যে ত্যাগ, তিতিক্ষা ও অবদান তা সম্পর্কে আমরা বর্ণাঢ্য আলোচনা দেখতে পাই না। বাংলায় গণমানুষের সামাজিক বঞ্চনা, সামাজিক অসাম্য বিশেষ করে নারী শিক্ষার অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, এমনকি আইনগত অধিকার নিয়ে আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রদত্ত গার্ড অব অনারে সরকারের নারী কর্মকর্তা বা পুলিশ বাহিনীর নারী সদস্যদের উপস্থিতির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি যে সুপারিশ করেছে গণমাধ্যমে এ বিষয়ে জানতে পেরে আমরা হতভম্ব হয়ে গিয়েছি।

বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নারীর মর্যাদা ও সমঅধিকার এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ মর্যাদার জন্য যে সব কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সংসদীয় কমিটি ধর্মের দোহাই দিয়ে কীভাবে এ ধরনের নারীবিদ্বেষী, মানবাধিকারবিরোধী, সংবিধানবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সুপারিশ করতে পারে তা আমাদের বোধের অতীত। নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক শওকত বাঙালি বলেন, একজন আটপৌরে সরল জীবনযাত্রার স্বকীয় সৌন্দর্যের নারীর দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে আমাদের দৃষ্টির সম্মুখে যে মাতৃমুখের অবয়ব অন্তরের মাধুর্য ও চরিত্রশক্তির দৃঢ়তা নিয়ে পরম মমতায় পাশে দাঁড়ান তিনিই সুফিয়া কামাল। নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান বলেন, তিনি নিজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও আজীবন নারী শিক্ষার অধিকারসহ নানাবিধ অধিকারের প্রশ্নে সংগ্রাম করে গেছেন।

তৎকালীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশে বাস করেও তিনি নিজ প্রচেষ্টায় হয়ে ওঠেন স্বশিক্ষিত। পরিবারে উর্দু ভাষার চর্চা থাকলেও নিজের সাধনায় বাংলা ভাষা রপ্ত করে আজীবন বাংলায় সাহিত্যচর্চা চালিয়ে গেছেন এই মহীয়সী নারী। নির্মূল কমিটির খুলনা জেলার সহসভাপতি সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী বলেন, ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময়কালে জাতীয় সকল সংকটে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-সামাজিক বিবেকের মতো দায়িত্ব পালন করেছেন কবি সুফিয়া কামাল। সামরিক শাসনের গণবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে, রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে, রবীন্দ্রশতবর্ষ উদযাপনের দাবিতে, দাঙ্গা প্রতিরোধে সুফিয়া কামাল সামাজিক গণমানুষের সর্বাধিনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

তিনি একাধারে ছায়ানট, কচি-কাঁচার মেলা, পূর্ব পাকিস্তান মহিলা সংসদ প্রতিষ্ঠা ও নারী আন্দোলনের মহিলা সংগ্রাম পরিষদ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। সর্ব ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সভাপতি সমাজকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী বলেন, সুফিয়া কামাল অত্যন্ত রক্ষণশীল পরিবারে বড় হয়েও দেশমাতৃকা, গণমানুষ, সমাজ ও সংস্কৃতির সংকট নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবতেন। তার চিন্তা ও কর্মতৎপরতার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৩১ সালে তিনি মুসলিম নারীদের মধ্যে প্রথম নারী হিসেবে ‘ভারতীয় মহিলা ফেডারেশন’-এর সদস্য নির্বাচিত হন। বেগম রোকেয়া ছিলেন তার সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে যোগদানের অনুপ্রেরণা।

তাই তো তিনি নিভৃতে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রতিষ্ঠিত ‘আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতিন’ প্রতিষ্ঠানের হয়ে দীর্ঘদিন বস্তি এলাকায় ঘুরে ঘুরে মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার কাজ করে গেছেন। ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষের সময় বর্ধমানে এবং ’৪৬-এর ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’র সময়ে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর বিপন্ন গণমানুষের সেবায়ও কাজ করেছেন তিনি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password