আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার রিমান্ডে পাপিয়া অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন। পাপিয়ার কাছ থেকে জব্দকৃত বিভিন্ন মোবাইল ফোনে দেখা গেছে যে, আওয়ামী লীগসহ সরকারের বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে পাপিয়া ছবি তুলেছেন, সেলফি তুলেছেন, ফটোসেশনে পোজ দিয়েছেন। কিভাবে এটা সম্ভব হলো- যখন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা পাপিয়ার কাছে জানতে চেয়েছেন তখন পাপিয়া বলেছেন, একমাত্র শেখ হাসিনাকেই তিনি ম্যানেজ করতে পারেননি। শেখ হাসিনা ছাড়া সবাইকেই ম্যানেজ করা যায়। সবার সঙ্গেই তার সম্পর্ক রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ২০২০ সালের শুরু থেকেই পাপিয়া টার্গেট করেছিল যেকোন মূল্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। আর এজন্য বিপুল পরিমান টাকাও তিনি খরচ করেছিলেন। কিন্তু যারা তাকে সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে চেয়েছিল তারা কেউই শেষ পর্যন্ত তাতে সফলকাম হননি।
সূত্রগুলো বলছে, ২০১৯ এর ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পরপরই পাপিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। এই সময় তিনি একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে একটিবার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য অনুনয় বিনয় করেছিলেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক এক কর্মকর্তার কাছেও পাপিয়া ধর্ণা দিয়েছিলেন। ওই কর্মকর্তা তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে তাকে সাক্ষাৎ করিয়ে দেবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পারেননি।
গোয়েন্দা হেফাজতে পাপিয়া এটাও বলেছেন, অনেকের সঙ্গে তার সু সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এখন তার বিপদে কেউ তার পাশে নেই। জানা গেছে, ওই সময় মহিলা সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য পাপিয়া চেষ্টা করেছিলেন। সে কারণে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি শেখ হাসিনা পর্যন্ত যেতে পারেননি। শেখ হাসিনাকে ম্যানেজ করতে পারেননি এজন্যই পাপিয়ার অনুশোচনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, পাপিয়া মনে করেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বা প্রশাসনে একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া সবাইকে ম্যানেজ করা যায়।
জানা গেছে যে, পাপিয়ার মোবাইলে সরকারের প্রভাবশালী এমপি মন্ত্রীদের নাম্বার সেইভ করা আছে। প্রশাসনের উর্ধ্বতন আমলাদের নাম্বারও আছে পাপিয়ার মোবাইলে। এছাড়া ঢাকার একজন এমপিসহ অন্তত ৫জন এমপির সঙ্গে পাপিয়ার অন্তরঙ্গ মেসেজ বিনিময়ের তথ্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে আছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাপিয়া স্বীকার করেছেন যে, ৩জন এমপি নিয়মিত ওয়েস্টিনে তার অতিথি হতেন।
অনুসন্ধানে আরো দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের ৩৩ এমপিকে পাপিয়া বিভিন্ন রকম অনৈতিক উপঢৌকন দিয়েছিলেন। এর বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে নানা রকম সুবিধা আদায় করেছিলেন। গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া এটাও স্বীকার করেছেন যে, রাজনীতিবিদদের চেয়ে আমলারা অনেক বেশি লোভী এবং তাদেরকে বশে আনা অনেক সহজতর কাজ। আমলাদের দিয়ে তিনি বিভিন্ন কাজ বাগিয়ে নিতেন বলেও জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পাপিয়া নেটওয়ার্ক বিস্তার করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যাংককে পাচার করেছেন। ব্যাংককে তার স্কট ব্যবসা, ক্যাসিনো ব্যবসাসহ নানা রকম অবৈধ ব্যবসা রয়েছে বলে জানা গেছে। এই সমস্ত ব্যবসা দেখভাল করার জন্য তিনি নিয়মিত ব্যাংককে যেতেন বলেও জানা গেছে।
জানা গেছে, একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই পাপিয়ার এ সমস্ত অপকর্মের কথা জানতো। কিন্তু তারা পাপিয়ার প্রতি নানা কারণেই দুর্বল ছিলেন। যে কারণে তারা এই বিষয়গুলো নিয়ে কোন অ্যাকশনে যাননি। পাপিয়ার উশৃঙ্খলতা, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি অনিয়ম যখন সীমাহীন পর্যায়ে চলে যায়, তখনই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর নজরে প্রথম আনেন। প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে পাপিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
বিডিটাইপ সংবাদের লেখক হতে পারেন আপনিও। আপনার আশপাশে ঘটে যাওয়া যেকোনো ঘটনা, ভ্রমণ অভিজ্ঞতা, ক্যাম্পাসের খবর, তথ্যপ্রযুক্তি, বিনোদন, শিল্প-সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে লেখা পাঠান: [email protected] ই-মেইলে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন