এক মানিকের পরিবর্তে কারাগারে আরেক মানিক

এক মানিকের পরিবর্তে কারাগারে আরেক মানিক

দুইজনের নামের প্রথমই মানিক। কিন্তু একজন মৃধা বংশের অপরজন হাওলাদার বংশের। কিন্তু মাদক মামলার আসামি মানিক মৃধা হলেও নামের সঙ্গে মিল থাকায় ৩ মাস ধরে কারাভোগ করছেন মানিক হাওলাদার (৪৫)। 

বিষয়টি জানিয়ে মানিক হাওলাদারের স্ত্রী তার স্বামীর মুক্তি চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। ৩ মার্চ আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার আদেশের জন্য রেখেছেন আদালত। ওই দিন শরীয়তপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা ছিল। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, আবেদনটি সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের সোমবারের তালিকায় আসবে। 

বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনটি আদেশের জন্য রয়েছে। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী পার্থ সারথী রায়। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মানিক মৃধা বেপারিকান্দির বাসিন্দা ইদ্রিস মৃধার ছেলে। অপরদিকে কারাগারে থাকা মানিক হাওলাদার শরীয়তপুরের সখিপুর থানার আলমচাঁন বেপারিকান্দির বাসিন্দা নজরুল হাওলাদারের ছেলে। তিনি পেশায় একজন সাধারণ জেলে

ভুক্তভোগীর স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, বিনাদোষে আমার স্বামী তিন মাস ধরে জেলে আছেন। আমার চার শিশুসন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছি। আমার স্বামী মাছ ধরত কিন্তু তাকে মাদক মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। তার পেছনে অনেক টাকা খরচ করেছি। কিন্তু কোনো সমাধান পাচ্ছি না। দণ্ডপাপ্ত মানিক আর আমার স্বামী এক নয়। তাদের নামের সঙ্গে মিল থাকায় পুলিশ তাকে ধরেছে।

সখিপুর থানা, মামলার এজহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা থেকে ফেনসিডিলসহ ৪ জনকে আটক করে র্যাব। ওই সময় সলঙ্গা থানায় মাদকদ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় চার বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হন বেপারিকান্দির বাসিন্দা ইদ্রিস মৃধার ছেলে মানিক মৃধা। কিন্তু পলাতক আসামি হিসেবে তার বাবার নাম উল্লেখ ছিল নজরুল হাওলাদার। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর তার নামে সখিপুর থানায় একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা আসে।

পরে ২০২০ সালের ২৮ নভেম্বর আলম চাঁন বেপারিকান্দি গ্রামের মৃত নজরুল হাওলাদারের ছেলে মানিক হাওলাদারকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় সখিপুর থানার এসআই শামসুর রহমান। দণ্ডপ্রাপ্ত মূল আসামি মানিক মৃধা পলাতক থাকলেও বর্তমানে সিরাজগঞ্জে কারাভোগ করছেন মানিক হাওলাদার।

ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, ইদ্রিস মৃধার ছেলে দণ্ডপ্রাপ্ত মানিক মৃধা পুলিশের কাছে তার বাবার নাম পরিবর্তন করে নজরুল হাওলাদের নাম বলেছিলেন। সে তথ্য অনুযায়ী পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছিল।  

আর সে কারণেই মানিক মৃধার পরিবর্তে মানিক হাওলাদারকে কারাভোগ করতে হচ্ছে। সে অনুযায়ী ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর ভুক্তভোগীর পরিবার শরীয়তপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মানিক হাওলাদার যে প্রকৃত আসামি নন তার সপক্ষেও কাগজপত্র উপস্থাপন করে জামিন আবেদন করেন। 

তখন আদালত সখিপুর থানার এএসআই শামসুর রহমানকে আদালতে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করার নির্দেশ দেন। পরে ৯ ডিসেম্বর এএসআই শামসুর রহমান আদালতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

তিনি দাবি করেন, নাম-ঠিকানার সঙ্গে মিল থাকায় তিনি তাকে গ্রেফতার করেছেন। এমতাবস্থায় তিনি সিরাজগঞ্জ আদালতে থাকা আসামির ছবির সঙ্গে ধৃত আসামির ছবি মিলিয়ে দেখার আবেদন করেন। সে অনুযায়ী মানিক হাওলাদারকে সিরাজগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে এলাকায় গিয়েও দুই মানিকের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। মানিক মৃধার বাবা ইদ্রিস মৃধা বলেন, ওই মামলায় আমার ছেলে মানিক আসামি। কিন্তু নামে মিল থাকায় মানিক হাওলাদারকে আটক করা হয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মানিক হাওলাদারের মুক্তি চেয়ে তার স্ত্রী সালমা বেগম হাইকোর্টে আবেদন করেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সখিপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামান হাওলাদার বলেন, যার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে আমরা তাকেই গ্রেফতার করে পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে যদি আদালতের কোনো নির্দেশনা পাই তবে আমরা তদন্ত করে দেখব।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password