কারাতে দো একটি জাপানিজ
শব্দ। কারা অর্থ হাত, তে অর্থ যুদ্ধ এবং দো অর্থ করা অর্থাৎ কারাতে দো বলতে খালি হাতে
যুদ্ধ করাকে বুঝায়।
কারাতের উৎপত্তি নিয়ে
নানা রকম মতবিরোধ রয়েছে। তবে বলা হয়, ১২০০ সালের দিকে চীনের তিব্বতের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা
বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে যেতেন। যাওয়ার পথে গভীর বনে-জঙ্গলে হিংস্র
পশু-পাখি ও বনদস্যুদের দ্বারা আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য বৌদ্ধ ভিক্ষুরা খুবই গোপনে আত্নরক্ষার
জন্য “সাওলিন ট্যাম্পল” চর্চা শুরু করেন।
তবে বাংলাদেশীদের মতে,
১২০০ সালেরও পূর্বে সৌদি আরব থেকে সেই সময়ের বড় আলেমরা ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে
আসতেন। সে সময় বাংলার হিন্দুরা তাদের উপর নানা রকম আক্রমণ চালাত। আক্রমণ থেকে বাঁচার
জন্য তারা কুংফুর প্রচলন করেন।
তবে বিশুদ্ধ মত এই যে,
জাপানের ওয়াকিয়ানা দ্বীপকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন যাবৎ জাপান ও কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ
চলছিল। এই যুদ্ধ নিরসনে “ডঃ স্যার জিগারো কানো” ১৬৩৯ সালে তাঁর বন্ধু “ফুনাকো শি গিচি”
এর সহযোগিতা নিয়ে ওয়াকিয়ানা দ্বীপের সাধারন বাসিন্দাদেরকে খালি হাতে আত্মরক্ষার জন্য
কৌশল শিক্ষা দিতে লাগলেন। এরই ধারাবাহিকতায় মার্শাল আর্ট বা কারাতের উৎপত্তি। এই সময়কেই
আধুনিক মার্শাল আর্ট বা কারাতের উৎপত্তির সময় বলে ধরা হয়।
তাই মার্শাল আর্ট বা
কারাতে বলতেই আমরা জাপানকেই বুঝি। জাপান মার্শাল আর্ট চর্চা শুরু না করলে হয় তো আমরা
মার্শাল আর্ট বা কারাতে পেতাম না।
৮০’র শতকে বাংলাদেশে কারাতের চর্চা শুরু হয়। বাংলাদেশে প্রথম কারাতের চর্চা শুরু করেন হাসানুজ্জামান মনি। তাঁর অক্লান্ত চেষ্টার ফলে ৮০’র শতকে জাপান সরকার বাংলাদেশে প্রথম প্রশিক্ষক পাঠায়। বাংলাদেশে মার্শাল আর্টের যত ওস্তাদ আছেন হাসানুজ্জামান মনিকে তাদের শিরোমণি হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশে মার্শাল আর্টের অনেক ওস্তাদ আছেন এদের মধ্যে “ডঃ হুমায়ন কবির জুয়েল” অন্যতম। তিনি বাংলাদেশীদের মধ্যে মার্শাল আর্টের উপর সর্ব প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের আত্নরক্ষার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকতেন। আর মার্শাল আর্টে সর্বপ্রথম বাংলাদেশী তথা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে সর্ব কনিষ্ঠ হিসেবে ব্লাক বেল্ট অর্জন করেন মোঃ কামাল উদ্দিন জ্যাকি। তিনি বর্তমানে “ওয়ার্ল্ড ইউনিয়ন অফ কারাতে দো ফেডারেশন” এর রেফারি এবং “বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন” এর জাতীয় দলের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও আলী আহসান বাদল,
ডঃ রফিকুল আলম নিউটন, মেজর নুরুন্নবি, বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক মাসুম পারভেজ রুবেল,
জাহাঙ্গীর আলম, প্রফেসর ইউসুফ আলী, আওলাদ হোসেন অন্যতম।
কারাতের জনক হিসেবে প্রধানত
“ডঃ স্যার জিগারো কানো”কে ধরা হয়। তবে “ব্রুস লি”কে আধুনিক মার্শাল আর্টের জনক বলে
অভিহিত করা হয়। তিনি ১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই মৃত্যু বরন করেন। তিনি মার্শাল আর্টের ওস্তাদ
ও শিক্ষার্থীদের জন্য তাঁর সিনেমায় অনেক কলা কৌশল রেখে গেছেন, যা যুগ যুগ ধরে অবিস্বরনীয়
হয়ে থাকবে। ব্রুস লি ছাড়াও জ্যাকি চ্যান মার্শাল আর্টের ওস্তাদ ও শিক্ষার্থীদের জন্য
অনেক সিনেমায় করেছেন। যা যুগ যুগ ধরে মার্শাল আর্ট শিক্ষার্থীদের প্রেরণার উৎস হয়ে
থাকবে।
কারাতে দো মার্শাল আর্টের
একটি অংশ। বর্তমানে মার্শাল আর্টের চারটি পদ্ধতি প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। পদ্ধতি চারটি
হচ্ছে সোতোকান, সুতোরিও, ওদোরিও, গুদোরিও। তবে এর মধ্যে সোতোকান-ই সবচেয়ে উন্নত ও জনপ্রিয়।
এছাড়াও তাইকোয়ান্দো, কুংফু, বুথ্যান, নান চাকু, কুও বক্সিং, সিলামবাম, গিনিসিউর অন্যতম।
মার্শাল আর্ট বা কারাতে দো করাতে যেমন নানা রকম উপকারিতা আছে। তেমনি কারাতে করার ফলে
মনে সাহস সঞ্চার হয়, ধৈর্য শক্তি বৃদ্ধি পায়।
মার্শাল আর্ট বা কারাতের
করার ফলে আত্মরক্ষা ও সাহস সঞ্চার হয়, শারীরিক ব্যাধি দূর হয়, অপরাধমূলক মানসিকতা দূর
হয়, মার্শাল আর্ট আনুগত্যশীল হতে শিক্ষা দেয়।
মার্শাল আর্ট বা কারাতে
দো-তে উপকারিতা যেমন আছে তেমনি কিছু অপকারিতা আছে। বিশেষ করে কারাতে বা মারামারি জানা
থাকার কারণে নানা রকম অপরাধ মূলক কাজে জড়িয়ে পরার সম্ভবনা থাকে। তারপরও আত্নরক্ষার
কৌশল হিসেবে মারতে শিখার বিকল্প নেই।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন