মৌমাছি ছোট একটি পতঙ্গের নাম। এটির নামে আল্লাহ তাআলা কোরআনের পুরো একটি সুরার নামকরণ করেছেন। যার নাম সুরাতুন নাহল। কোরআন ও হাদিসে আল্লাহ তাআলা ও রাসুলুল্লাহ (সা.) একাধিকবার মধু এবং মৌমাছির ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। এতে খুবই অবাক করার মতো তথ্য আছে। তা ছাড়া বিভিন্ন বিজ্ঞানী মৌমাছির ব্যাপারে গবেষণা করতে গিয়ে খুবই বিস্ময়কর কথা বলেছেন, যা একজন মুমিন বান্দার অন্তরকে আল্লাহর অপার সৃষ্টির ব্যাপারে অভিভূত করে।
মৌমাছির ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর আপনার পালনকর্তা মধু-মক্ষিকাকে আদেশ দিলেন, তোমরা পর্বত, বৃক্ষ ও উঁচু মাচা বা চালের মধ্যে গৃহ নির্মাণ করো। এরপর সব ধরনের ফল থেকে আহার গ্রহণ করো এবং আপন পালনকর্তার পথসমূহে চলো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৬৮)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা মৌমাছির পুরো জীবনাচার সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতে মৌমাছিকে নির্দেশ প্রদানের কথা বর্ণনা করেছেন। নির্দেশ অর্থটি ব্যক্ত করতে আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে আরবিতে ‘ওহি’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আরবি অভিধানে এর একটি অর্থ হলো, কারো অন্তরে বা মস্তিষ্কে কোনো বার্তা ঢেলে দেওয়া। এ অর্থ অনুসারে বোঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলা মৌমাছিদের মস্তিষ্কে উল্লিখিত আয়াতে বর্ণিত জীবন পদ্ধতিটি কুদরতিভাবে জানিয়ে দিয়েছেন।
অন্যদিকে একটি মজার ব্যাপার হলো, মৌ-গবেষকদের গবেষণায় প্রমাণিত যে মৌমাছিদের মাথায় যে শিং থাকে তা বর্তমান সময়ের যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মতো। ফলে কোনো মৌমাছি হাজার মাইল দূরে থাকলেও অন্যদের প্রতি তরঙ্গ বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যমে মৌচাকের অবস্থান নির্ণয় করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া গবেষকরা মৌমাছির ব্যাপারে আরো অনেক বিস্ময়কর তথ্য দিয়েছেন।
মৌমাছিদের বিশেষ ধরনের কিছু নাচ আছে। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। মৌমাছিদের মধ্যে সাংগঠনিক যোগ্যতাও আছে, যা খুবই বিস্ময়কর। আর সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায়ই তারা মধু সংগ্রহের কাজ আঞ্জাম দিয়ে থাকে। কোরআনের অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তার (মক্ষিকা) পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার আছে। নিশ্চই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন আছে।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৬৯)
আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে মৌমাছির পেট থেকে নির্গত মধুর গুণ বর্ণনা করেছেন। যাতে তিনি মানবজাতির জন্য রোগমুক্তির ওষুধ দিয়েছেন। চিকিৎসা গবেষকদের মতে, মানবদেহে যত ভিটামিন দরকার এর শতকরা ৭৫ ভাগ ভিটামিন মধুতে পাওয়া যায়।
হাদিসে এসেছে, জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের ওষুধের যেগুলোতে আরোগ্য আছে তা হলো, শিঙ্গা লাগানো, মধু পান করা...।’ (বুখারি ও মুসলিম, হাদিস : ৬১৭, ২০৩২)
এই হাদিসে রাসুল (সা.) কয়েক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে মধু সেবন রোগমুক্তির অন্যতম একটি উপায়।
অন্য এক হাদিসে আছে, আবু সাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমার ভাইয়ের ডায়রিয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, তাকে মধু পান করাও। সে গিয়ে তার ভাইকে মধু পান করাল। এভাবে দুইবার হলো। এবং প্রতিবারই সে রোগের অভিযোগ করল। তখন রাসুল (সা.) প্রতিবার তাকে মধু পান করাতে বলেন। লোকটি আবার এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! তার পায়খানা তো আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তখন তিনি বলেন, আল্লাহ সত্যবাদী এবং তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যাবাদী। সে আবার গেল এবং তাকে মধু পান করাল। এবার সে পুরোপুরি আরোগ্য হয়।’ (বুখারি, ৫/২৯১, তিরমিজি, হাদিস : ২০২৩)
এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ তাআলা মধুকে মানবজাতির রোগমুক্তি এবং কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মধু পানের ফলে যদি কারো রোগমুক্তি না আসে তার অর্থ এই নয় যে মধুর মধ্যে আরোগ্য নেই। বরং মধু সেবনের পরও রোগমুক্ত না হওয়া রোগীর অন্য কোনো কারণে।
আরেক হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন মধু সেবন করবে সে বড় ধরনের কোনো রোগে আক্রান্ত হবে না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২/১১৪২)
এ ছাড়া আরো বহু হাদিসে রাসুল (সা.) মধুর উপকারিতা বর্ণনা করেছেন। তাই দৈনন্দিন জীবনে সুস্বাস্থ্য, রোগমুক্তি ও দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চাইলে মধু সর্বোত্তম ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন