আমদানিতে সুবিধা দিতে গিয়ে মার খাচ্ছে দেশীয় শিল্প!

আমদানিতে সুবিধা দিতে গিয়ে মার খাচ্ছে দেশীয় শিল্প!

রপ্তানিমুখী দেশীয় শিল্পে দরকারি পণ্য কিনতে ধোলাইখাল গেলে গুণতে হয় কর, অথচ আমদানি করলে সেখানে নেই কোনো কর। এমন মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ।

রোববার (৭ ‍ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ানবাজারে এসএমই ফাউন্ডেশন ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-ইআরএফ আয়োজিত সেমিনার ও কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। 

তিনি বলেন, বিভিন্ন হারে কর আরোপের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়, তার চেয়ে কম খরচে সেই পণ্য আমদানি করা যায়, তাই বড় শিল্পগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাছ পণ্য কিনতে চায় না। এদিকে, সরকারের নজর দেয়া প্রয়োজন।

আবার এক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বিআইডিএস এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, এসএমই খাতের জন্য বরাদ্দ করা ঋণের ৯৬ ভাগই পাচ্ছেন পুরুষ উদ্যোক্তারা, নারীদের হাতে যাচ্ছে মাত্র ৪ শতাংশ। তিনি জানান, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এসএমই ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ বিতরণে কাজে লাগানো উচিত।

সেমিনারে আলোচকরা মত দেন, এমন সব নীতি সংকট আর ব্যাংক ঋণ জটিলতায় মাঠে মারা যাচ্ছে বহু দেশীয় উদ্যোগ। এসময়, করোনাকালীন প্রণোদনার ঋণ বিতরণের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানোর আহ্বান জানান তারা।

মোটাদাগে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার বাইরে নিজের শ্রমশক্তির উপর টিকে থাকা অর্থনীতির বড় উদাহরণ বাংলাদেশ। যেখানে ছোটখাটো একেকটি উদ্যোগকে এক সুঁতোয় গেঁথে একটি খাত হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে এসএমই। কিন্তু ঠিক সেই অর্থে সম্ভাবনা কিংবা সুযোগ কোনটাই পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছেন না ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। এক্ষেত্রে সরকারের নীতিকাঠামোর দুর্বলতাকে দায়ী করে সেমিনারে গবেষকরা জানান, গত ৪ অর্থবছরে এসএমই খাতে অনুমোদিত মোট ঋণ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার মধ্যে পুরুষ উদ্যোক্তারাই পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা, শতাংশের হিসেবে মাত্র চার ভাগ, অর্থাৎ ২০৫ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের।

এসময় জানানো হয় এসএমই ফাউন্ডেশন ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের উদ্যোগে এরকম তিনিটি সিরিজ আলোচনা ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এসময় অর্থনীতির স্বার্থেই এসএমইকে আলাদা কোনো খাত না বলে, বরং অন্য সব খাতের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে দেয়ার উপর গুরুত্ব দেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন, এসএমই খাত দেশের অর্থনীতির প্রায় সব খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, তাই এসএমই খাত যে দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি, তা শুধু বললেই হবে না, বরং এসএমই উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় নীতিগত ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামসহ অতিথিরা, অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের জন্য আয়োজিত দিনব্যাপী আলোচনা ও কর্মশালায় দেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান এবং উন্নয়নে গণমাধ্যমের করণীয় বিষয়েও আলোচনা করেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password