আর মাত্র দিন চারেক পরই ঘোষণা করা হবে ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। আসন্ন এই বাজেটকে সামনে রেখে তামাকজাত সকল পণ্যের দাম বাড়ানোর কথা জোরালোভাবে আলোচনায় উঠে আসছে। বিশেষত বিভিন্ন মহল থেকে মূল্যস্তর কমিয়ে সিগারের দাম দ্বিগুণ করার সুপারিশ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে মোট তামাপ ব্যবহারকারীর অর্ধেকেরও বেশি ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য ব্যবহার করলেও এসব তামাকপণ্যের দাম সবচেয়ে সস্তা ও রাজস্ব আয় খুবই কম।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেছেন, ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে করারোপের ভিত্তিমূল্য খুব কম। তাই কর বাড়ানোর পাশাপাশি মূল্যও বাড়াতে হবে। সম্প্রতি তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা’র যৌথ উদ্যোগে ‘কেমন তামাক কর চাই, বাজেট ২০২০-২১’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও একাধিক সংসদ সদস্য এমনই সুপারিশ করেছেন। সেখানে প্রজ্ঞা’র পক্ষ থেকে তামাক কর বিষয়ক ‘বাজেট প্রস্তাব ২০২০-২১’ তুলে ধরা হয়।
যার মধ্যে প্রথমটিই ছিল সিগারের মূল্যস্তর সংখ্যা ৪টি থেকে ২টিতে (নিম্ন এবং প্রিমিয়াম) নামিয়ে আনা। এক্ষেত্রে ৩৭+ টাকা ও ৬৩+ টাকা এই দুটি মূল্যস্তরকে একত্রিত করে নিম্নস্তরে নিয়ে আসা; নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
আর ৯৩+ টাকা ও ১২৩+ টাকা এই দুটি মূল্যস্তরকে এক করে প্রিমিয়াম স্তরে নিয়ে আসার পক্ষেও সুপারিশ করেছে প্রজ্ঞা। তামাকবিরোধী এই সংগঠনটি বলছে, এক্ষেত্রে প্রিমিয়াম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
এছাড়াও প্রজ্ঞা’র পক্ষ থেকে তামাক কর বিষয়ক ‘বাজেট প্রস্তাব ২০২০-২১’-এ বিড়ির ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার মূল্য বিভাজন তুলে দেয়া; ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের (জর্দা ও গুল) মূল্য বৃদ্ধি করা এবং সব ধরনের তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ৩ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ করার কথাও বলা হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, উল্লিখিত তামাক কর ও মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত রাজস্ব অর্জন হবে সরকারের। এছাড়াও ৩ শতাংশ সারচার্জ থেকে বাড়তি রাজস্ব আয় হবে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটি তামাক ব্যবহারকারী মারাত্মকভাবে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছেন বলে প্রজ্ঞার ওই ওয়েবিনারে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। একাধিক মূল্যস্তর ও বিভিন্ন দামে সিগারেট ক্রয়ের সুযোগ থাকায় ভোক্তা স্তর পরিবর্তন করার সুযোগ পায়। ফলে তামাকের ব্যবহার কমাতে কর ও মূল্য পদক্ষেপ যথাযথবাবে কাজে আসে না বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাই তামাক পণ্য ব্যবহারে মানুষকে নিরুৎসাহিত করতে করোনার এই বিস্তারকালকে কাজে লাগানোরও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন