বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ বিজ্ঞানীর করোনাভাইরাস প্রতিরোধক স্প্রে আবিষ্কার

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ বিজ্ঞানীর করোনাভাইরাস প্রতিরোধক স্প্রে আবিষ্কার

কোভিড মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক তরুণ ব্রিটিশ বিজ্ঞানী সাদিয়া খানমের উদ্ভাবিত ভলটিক নামক জীবাণুনাশকটি একটি বড় ধরনের আবিষ্কার হিসেবে গণ্য হচ্ছে।

ছাব্বিশ বছর বয়সী সাদিয়া খানম ১৪ মাসের গবেষণার পর এই জীবাণুনাশকটি তৈরি করেছেন যা যেকোনো বস্তুর পৃষ্ঠে স্প্রে করা হলে সেটি দু'সপ্তাহের জন্য জীবাণুমুক্ত থাকবে। তাই ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এনএইচএসসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষও পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ভলটিক নামক এই জীবাণুনাশকটিকে অনুমোদন দিয়েছে।

জানা গেছে, কোভিড-১৯, ইবোলা ভাইরাস, এইচ আই ভি, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাকসহ অন্যান্য জীবাণুকেও ধ্বংস করতে সক্ষম এ জীবাণুনাশকটি।

এটি কেবল হাসপাতাল, হোটেল, রেস্তোঁরা বা বিমানই নয়, ব্যবহার করা যাবে নিউক্লিয়ার স্টেশনেও! এছাড়া এটি ব্যবহারের ফলে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা ৭০% সংরক্ষণ করা সম্ভব বলেও জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের হাসপাতালগুলো।

এ বিষয়ে সাদিয়া খানম বলেন, "এই জীবাণুনাশক প্রক্রিয়ার একটি অংশ হচ্ছে- কোনো জীবাণু যদি কোনো কিছুর সংস্পর্শে আসে তখন তা ধ্বংস করে ফেলা। অর্থাৎ কোনো বস্তুর পৃষ্ঠের ওপর যদি কোনো ভাইরাস থাকে, এর সাহায্যে তাকে সাথে সাথেই মেরে ফেলা যায়।

এটি চামড়া থেকে শুরু করে কাঠ, লোহা কিংবা কাপড়- সব ধরনের জিনিসের ওপরই কাজ করে বলে গবেষণায় দেখা গিয়েছে।"

ভলটিক জীবাণুনাশকটি কোনো কিছুর পৃষ্ঠের ওপর একটি কোভ্যালেন্ট বন্ড তৈরি করে যা সেখানে চৌদ্দ দিনের জন্য একটি শক্ত প্রাচীর তৈরি করে। এই বন্ড খুবই শক্তিশালী, কোনো কিছুই এটিকে ভাঙতে পারে না। এভাবে এটি টানা দুই সপ্তাহের জন্য যেকোনো জীবাণু থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে বলে পরীক্ষিত।

আবিস্কার করার প্রসঙ্গে সাদিয়া খানম বলেছেন, ইংল্যান্ডে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর তিনি তার আলঝাইমার্স রোগের ওপর পিএইচডি গবেষণা স্থগিত রেখে উত্তর পশ্চিম ইংল্যান্ডের চেশায়ারে তার পিতার রেস্তোরাঁতে করোনা ভাইরাসটি নিয়ে প্রাথমিক গবেষণা শুরু করেন।

কোভিড-১৯ সহ বাজারে উপস্থিত সমস্ত সাধারণ জীবাণুনাশক নিয়েও বিস্তর গবেষণা করেন তিনি। অবশেষে জীবাণু ধ্বংসের একটি কার্যকরী ফর্মুলা উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন। এরই নাম দিয়েছেন ভলটিক যা সংক্রামক রোগজীবাণু নাশক একটি প্রক্রিয়া। বিশেষ একটি মেশিন দিয়ে এই তরল স্প্রে করা হয়।

বিজ্ঞানী সাদিয়া খানম জানান যে এই ভলটিক স্প্রে খুবই উচ্চ-চাপের মধ্যে কাজ করে। এর বিভিন্ন রকমের উপকারিতা আছে, বিশেষ করে বৈজ্ঞানিক উপকারিতা।

তিনি বলেন, "আমি এমন একটা জিনিস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি যা যেকোনো জীবাণুকে ধ্বংস করতে পারে, ধ্বংস করতে পারে জীবাণুর যেকোনো ধরনের ডিএনএ।"

আরও বলেছেন, "বাজারে যতো ধরনের জীবাণুনাশক আছে আমি সেগুলোর সীমাবদ্ধতা নিয়ে গবেষণা করেছি। কারণ আমি এমন একটা জিনিস তৈরি করতে চেয়েছি যাতে সবকিছুর উত্তর পাওয়া যায় এবং বর্তমানে যেসব জীবাণুনাশক পাওয়া যায় সেগুলোর সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে পারে।"

এছাড়াও তিনি জানান, অনেক জীবাণুনাশক বিষাক্ত। কিন্তু তার ভলটিক স্প্রে যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিকর না হয় কিংবা বর্তমানে ও ভবিষ্যতে যাতে এর কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেয় সে বিষয়েও তাকে সতর্ক থাকতে হয়েছে।

সাদিয়া খানম এ বিষয়ে আরও জানিয়েছেন, পিতার রেস্তোরাঁতে ভলটিক স্প্রে ব্যবহার করে তিনি আংশিক গবেষণা চালিয়েছেন। এই রেস্তোরাঁকে তিনি ব্যবহার করেছেন গবেষণার একটি কেস স্টাডি হিসেবে। সেখানে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটান এবং রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন জিনিসের ওপর তার উদ্ভাবিত জীবাণুনাশক স্প্রে করে সফল হন।

আরও জানান, ভলটিক স্প্রে ব্যবহার করলে সব ধরনের জিনিস যেহেতু দীর্ঘ সময়ের জন্য জীবাণুমুক্ত থাকবে, সেকারণে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানে যতো অর্থ ও সময় খরচ হয় তার অনেক সাশ্রয় ঘটবে।

তবে সাদিয়া খানম বলেন, "এই জীবাণুনাশক নিয়ে আমার কাজ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। এটি উদ্ভাবন করতে গিয়ে এখনও শেখার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি।

যদিও আমি এটা তৈরি করেছি, তার পরেও প্রত্যেকটা দিনই আমার কাছে নতুন একটি দিন। প্রতিদিনই আমি এই পণ্যটির উন্নতি ঘটাতে কাজ করছি। প্রতিদিনই নতুন নতুন পরীক্ষা চলছে। এটি যাতে পুরোপুরিভাবে কাজ করতে পারে সেজন্য প্রতিদিনই এ নিয়ে গবেষণা করছি।"

সাদিয়া খানম স্যালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োমেডিকেল সায়েন্স এবং চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে জিনোমিক মেডিসিন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। ছোটোবেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি ঝোঁক ছিল তার।

সাদিয়ার ১৪ বছর বয়সে যখন তার দাদার আলঝেইমার্স ধরা পড়ে তখন থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখেছেন যে তিনি আলঝাইমার্স রোগের ওষুধ আবিষ্কার করবেন। কারণ এখনও পর্যন্ত এর কোনো চিকিৎসা বের হয়নি।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ বিজ্ঞানী সাদিয়া খানম আরও বলছেন, ভলটিক স্প্রের উদ্ভাবন আলঝাইমার্স রোগের ওষুধ আবিষ্কারের ব্যাপারেও তাকে অনেক আশাবাদী করে তুলেছে। তিনি বিশ্বাস করেন তার স্বপ্নও একদিন পূরণ হবেই।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password