যে কারণে বাংলাদেশে করোনা মহামারী হওয়ার সম্ভাবনা নেই

যে কারণে বাংলাদেশে করোনা মহামারী হওয়ার সম্ভাবনা নেই

বাংলাদেশে তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এদের মধ্যে একজন সুস্থ হয়ে ইতিমধ্যেই বাড়ি ফিরেছেন। অন্য দুইজনের দেহেও করোনার উপস্থিতি নেগেটিভ পাওয়া গেছে। দু’এক দিনের মধ্যে তারাও বাড়িতে ফিরে যাবেন। প্রথম তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে আর কোনো নতুন রোগী পাওয়া যায়নি। এ সময় শতাধিক ব্যক্তির রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে কাউকেই করোনা ভাইরাসে পজেটিভ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া এ পর্যন্ত সারাদেশে ২৬টি জেলায় অন্তত ১১শ’ মানুষকে গৃহে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে। আজ শনিবার ভোররাতে ইতালি থেকে যে ১৪২ জন দেশে ফিরেছেন তাদেরকেও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

এ সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণের পরও জনমনে নানারকম শঙ্কা এবং সন্দেহ রয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত করোনাভাইরাস বাংলাদেশে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করবে কিনা। কিন্তু বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের মহামারীর আশঙ্কা খুবই কম। এর প্রধান কারণ হলো পাঁচটি। এগুলো হলো-
প্রথমত; তারুণ্য
বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তরুণ। ৭০ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক কম।

করোনাভাইরাসে মূলত আক্রান্ত হচ্ছে প্রবীণরা। বিশেষ করে সত্তরোর্ধ মানুষ করোনাভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তাদেরই মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এখন পর্যন্ত বিশ্বে যারা করোনা ভাইরাসে মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৭০ বা তদোর্ধ্ব বয়সের মারা গেছে শতকরা ১৫ ভাগের কাছাকাছি। যেহেতু বাংলাদেশ একটি তরুণ অধ্যুষিত দেশ। এজন্য বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করার ঝুঁকি অনেক কম।


দ্বিতীয়ত; পূর্ব থেকেই সচেতনতা
বাংলাদেশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশের তালিকায় ১০৪তম দেশ। এর আগে ১০৩ টি দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর সে কারণে বাংলাদশ শুরু থেকেই এ ব্যাপারে সতর্কতা সচেতনতা এবং প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। এই সচেতনতা এবং প্রস্তুতিই বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ফল হিসেবে দেখা দিচ্ছে।


দেখা যাচ্ছে যে, বিশ্বে শেষের দিকে যে দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে এই ভাইরাসটি তেমন বিস্তার লাভ করতে পারছে না। মানুষের মধ্যে সচেতনতার কারণেই এটা ঘটছে।
তৃতীয়ত; আমাদের জীবন অভ্যাস
করোনা ভাইরাস যে কারণগুলোতে ছড়ায় সে কারণগুলো আমাদের অভ্যাসের বিপরীত। আমরা বাঙালিরা এমনিতেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। বিশেষ করে, মুসলিম অধ্যুষিত এ দেশে ওযু করাসহ নানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা হয়। যেটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো প্রায়ই করা হয় না। সেই বিবেচনা থেকেও বাংলাদেশ করোনা মহামারী আকারে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।


চতুর্থত; খাদ্যাভ্যাস
খাদ্যাভ্যাস করোনাভাইরাস ছড়ানোর একটি বড় কারণ। বিশেষ করে, কাঁচা কাতীয় খাদ্য করোনাভাইরাস ছড়াতে সহায়তা করে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস সেদিক থেকে একটি ইতিবাচক দিক। কারণ আমাদের এখানে কাঁচা খাবারের চেয়ে রান্না করা খাবারের ব্যাপারেই মানুষের ঝোঁক বেশি।


পঞ্চমত; বাংলাদেশের মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাংলাদেশের মানুষ স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন ভেজাল, নিম্নমানের খাবারে অভ্যস্ত। জ্বর, সর্দিসহ এসব নিম্বমানের বিভিন্ন খাবারের কারণে সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধ করেই এদেশের মানুষ বেঁচে থাকে। বিশেষ করে দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের এক বিশাল সক্ষমতা রয়েছে। এগুলো করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।


এছাড়া সর্বশেষ যে কারণে করোনাভাইরাস বাংলাদেশে মহামারী আকার ধারণ করবে না বলে মনে করা হচ্ছে, তা হলো করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চিকিৎসা পদ্ধতি এমনকি ভ্যাকসিন আবিষ্কারেরও দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে বিশ্ব। আগামী এক দেড়মাসের মধ্যেই করোনা ভাইরাসের একটি চিকিৎসার প্রটোকল বিশ্বে উপস্থাপিত হবে। তখন সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশও এখান থেকে উপকৃত হবে। কাজেই মহামারি হিসেবে ছড়ানোর আগেই করোনা মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ যথেষ্ট সময় পাচ্ছে। কাজেই করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password