মেহেরপুরে ৯টি হিন্দু বাড়িতে হামলা

মেহেরপুরে ৯টি হিন্দু বাড়িতে হামলা

অশান্ত পরিবেশের ফাঁকে বাংলাদেশে বিভিন্ন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় হামলার অভিযোগ ওঠে। পরে রাতের বেলা সেনার তরফ থেকে কমান্ডারদের ফোন নম্বর প্রকাশ করা হয়। হিন্দুদের ওপর হামলা হলে সেই সব নম্বরে ফোন করতে বলা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেয় আন্দোলকারীদের একাংশ।

সরকার বিরোধী আন্দোলনের আছিলায় বাংলাদেশে হামলা চলছে সংখ্যালঘুদের ওপরে। এমনই দাবি করল বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হল, সেদেশের ২৯টি জেলায় সংখ্যালঘুদের ওপরে হামলা চালানো হয়েছে। অরাজনৈতিক সাধারণ মানুষের বাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে অভিযোহ। ভাঙা হয়েছে মন্দির।

বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত এক বিবৃতি জারি করে সোমবার দাবি করেন, বাংলাদেশে ৪টি জেলাতে অন্তত ৯টি মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ঐক্য পরিষদের নেতাদের বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে এক শ্রেণির বিক্ষোভকারী। বহু জায়গায় হিন্দু সংখ্যালঘুদের বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ।

রিপোর্ট অনুযায়ী, গতকাল ফেনি শহরের দুর্গামন্দিরে হামলা চালানো হয়। দিনাজপুরের পার্বতীপুর কালীমন্দিরসহ পাঁচটি মন্দিরে ভাঙচুর করা হয়। এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের ২ নম্বর ইউনিয়নের শ্মশান মন্দিরে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এবং নেত্রকোনা শহরে রামকৃষ্ণ মিশন এবং ইসকন মন্দিরে ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা। মেহেরপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িসহ হিন্দুদের ৯টি বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার দুপুর থেকে এসব ঘটনা ঘটে। আজ মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, পৌর শহরের হোটেল বাজার এলাকার বাসিন্দা ও জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক পল্লব ভট্টাচার্যের দোতলা বাড়ির নিচতলা একেবারে পুড়ে গেছে। সেখান থেকে বই, আসবাব থেকে পোড়ার গন্ধ বের হচ্ছে।

এ সময় পল্লব ভট্টাচার্যের চাচাতো ভাই অঞ্চল ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘দাদা মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি। তাঁর বড় মেয়ে প্রিয়া ভট্টাচার্য সপরিবার জাপানে থাকেন। নবজাতক নাতিকে দেখতে তিনি জাপানে গেছেন। যখন দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়, তখন বাড়িতে কেউ ছিলেন না।’ প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে একদল যুবক লাঠি, রড ও লোহার পাইপ নিয়ে পল্লব ভট্টাচার্যের বাসায় হামলা করে। বাড়ির প্রবেশ গেটের তালা ভেঙে প্রথমে লুটপাট করে।

এরপর ঘরের আসবাব এক জায়গায় জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একই সময়ে বড় বাজার এলাকার চিত্ত সাহার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। ওই দোকান থেকে মালামাল লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এরপর হোটেল বাজারের রবীন্দ্রনাথ সড়কে লিনা ভট্টাচার্যের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়। বাড়িতে থাকা চারজনকে মারধর করা হয়।

লিনা ভট্টাচার্য বলেন, ‘১০-১২ জন ছেলে বাড়ির মূল ফটকের তালা ভেঙে দোতলায় গিয়ে আমাদের মারধর করে। পরে ঘরের আলমারি খুলে সোনার গয়না ও দামি জিনিসপত্র নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ঘরের আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে চলে যায়।’

এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় মালোপাড়ার ছয়টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। যাওয়ার সময় তারা পরিবারের সদস্যদের মারধর করে। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম শাহিন বলেন, গত সোমবার বিকেল থেকে তাণ্ডব চালায় দুর্বৃত্তরা। পুলিশের সাহায্য চেয়েও পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের সেবাও বন্ধ ছিল। এক রাতে মেহেরপুরের চিত্র পাল্টে গেছে।

সূত্রঃ প্রথম আলো

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password