এয়ার বাবলের পর এবার এয়ার এ্যাম্বুলেন্স চুক্তি

এয়ার বাবলের পর এবার এয়ার এ্যাম্বুলেন্স চুক্তি

এয়ার বাবলের পর এবার আসছে এয়ার এ্যাম্বুলেন্স চুক্তি। এতে বাংলাদেশ ছাড়াও অন্তত ৯টি দেশ এ সুবিধা পাবে। চুক্তির আওতায় চিকিৎসা সংক্রান্ত কয়েকটি ক্যাটাগরিতে প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতে ভিসা সুবিধা পাবে। এ চুক্তি বাস্তবায়িত হলে পরোক্ষভাবে ট্যুরিস্ট ভিসার সুবিধাই পাবেন ভ্রমণপ্রেমীরা। মূলত ভারতের ভঙ্গুর অর্থনীতি চাঙ্গা করতেই নেয়া হয়েছে এ ধরনের বিশেষ মেডিক্যাল ভিসার পলিসি।

জানা গেছে, করোনা মহামারীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কঠোর বিধিনিষেধের দরুন বিশ্বব্যাপী পর্যটন খাতে বিপর্যয় নেমে আসে। মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের পর ভারতই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনিতেই নানা কারণে ভারতের অর্থনীতিতে মন্দা পরিস্থিতির সঙ্গে করোনার আঘাত মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দেয়ায় এখন বিশেষ কৌশল গ্রহণ করতে হচ্ছে।

তারই অংশ হিসেবে এর আগে এয়ার বাবল চুক্তিতে বিশেষ ব্যবস্থায় বিশ্বের কয়েকটি দেশের সঙ্গে বিমান চলাচল চালু করা হয়। কিন্তু ট্যুরিস্ট ভিসার ব্যাপক চাহিদা থাকলেও তা চালু করতে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়ায় এয়ার এ্যাম্বুলেন্স চুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চলতি সপ্তাহে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১০টি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের চিকিৎসক ও নার্সের জন্য বিশেষ ভিসা প্রকল্পের ব্যবস্থা করতে একটি আঞ্চলিক এয়ার এ্যাম্বুলেন্স চুক্তির পরামর্শ দেন।

ভারত ছাড়া অপরাপর দেশ হলো বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, মালদ্বীপ, মরিশাস, নেপাল, সেশেলস ও পাকিস্তান। এয়ার এ্যাম্বুলেন্স চুক্তি করা হলে এই দশটি দেশের নাগরিক মেডিক্যাল ভিসার সুবিধায় পর্যটনের সুবিধাও পাবেন। এ কারণেই পর্যটনপ্রেমীরা এয়ার এ্যাম্বুলেন্স চুক্তির প্রতি উন্মুখ হয়ে আছে।

এদিকে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা: অভিজ্ঞতা, সুঅভ্যাস ও ভবিষ্যত পন্থা’ শীর্ষক কর্মশালায় দেয়া এক বক্তব্যে তিনি এ ধরনের বিশেষ চুক্তির পরামর্শ দেন। এর আগে এয়ার বাবলের আওতায়ও বিশ্বের কয়েকটি দেশের সঙ্গে ভারতের ফ্লাইট চলাচল শুরু করা হয়। সেই আদলেই এয়ার এ্যাম্বুলেন্স চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এ সংক্রান্ত এক বার্তায় বলা হয়- মূলত করোনা মহামারীর সময় এই দেশগুলো যেভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে তুলেছিল এবং সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্বে সর্বাধিক জনবহুল অঞ্চলে মহামারীসৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই কর্মশালায় তার প্রশংসা করেন। ওষুধ, পিপিই কিট এবং নমুনা পরীক্ষার সরঞ্জামের মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকরণ বণ্টন এবং মহামারী মোকাবেলায় তাৎক্ষণিক ব্যয় নির্বাহের জন্য কোভিড-১৯ জরুরী প্রতিক্রিয়া তহবিল গড়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

নমুনা পরীক্ষা, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য স্থাপনায় বিভিন্ন রাষ্ট্রের সেরা অনুশীলনগুলো ভাগ করে নেয়া এবং শিক্ষা নেয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারী থেকে আমাদের মূল্যবান শিক্ষা হলো সহযোগিতার মনোভাব। আমাদের উদারতা ও দৃঢ় সঙ্কল্পের কারণেই বিশ্বে এই অঞ্চলে মৃত্যুহার সর্বনিম্ন রাখতে পেরেছি, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আজ আমাদের ও সারা বিশ্বের আশা, সবার কাছেই দ্রুত টিকা পৌঁছে যাক।

এক্ষেত্রেও আমাদের অবশ্যই একই রকম সহযোগিতার মানসিকতা বজায় রাখতে হবে। এই প্রত্যাশা আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসক ও নার্সের জন্য একটি বিশেষ ভিসা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেন, যেন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যে কোন জরুীর পরিস্থিতিতে সেই দেশের অনুরোধক্রমে তারা আমাদের এই অঞ্চলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দ্রুত ভ্রমণ করতে পারেন।

দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই দশটি দেশের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রীরা চিকিৎসার জন্য একটি আঞ্চলিক এয়ার এ্যাম্বুলেন্স চুক্তি করতে পারেন কিনা সে বিষয়টি নিয়েও ভাবনা-চিন্তার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জনসাধারণের মধ্যে কোভিড-১৯ টিকার কার্যকারিতা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণের জন্য একটি আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার প্রস্তাবও তিনি দিয়েছেন।

ভবিষ্যতে মহামারী প্রতিরোধে মহামারী সংক্রান্ত প্রযুক্তিভিত্তিক গবেষণার বিষয়টি নিয়েও চিন্তাভাবনা করতে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। কোভিড-১৯ ছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী সফল জনস্বাস্থ্য নীতি ও পরিকল্পনার তথ্য বিনিময়ের পরামর্শ দিয়েছেন। আয়ুষ্মান ভারত ও জন আরোগ্য প্রকল্পের মতো সফল কর্মসূচীগুলো এই অঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় কেস স্টাডি হতে পারে। তার দৃষ্টিতে একবিংশ শতাব্দীকে এশীয় শতাব্দী হতে হলে দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশের মধ্যে বৃহত্তর সমন্বয় ছাড়া তা সম্ভব হবে না। মহামারীর সময় যে আঞ্চলিক ভ্রাতৃত্ববোধ আপনারা দেখিয়েছেন, তার মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে, এ ধরনের সংহতি গড়ে তোলা সম্ভব।

উল্লেখ্য, করোনা মহামারীর মধ্যে ভারতের সঙ্গে গোটা পৃথিবীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় অর্থনীতিতে ব্যাপক ধস নামে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কঠোর বিধি নিষেধের দরুন লকডাউনে কাটাতে হয়েছে দেশটিকে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক বিপর্যয় সামাল দিতে এয়ার বাবল নামের একটি বিশেষ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্তত ৩০টি দেশের সঙ্গে বিমান চলাচল শুরু করে। এতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করে অর্থনীতিতে। কিন্তু দেশটিতে এখনও ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্য খাত- হোটেল, মোটেল ও এয়ারলাইন্স সেক্টর এখনও নিষ্প্রাণ। সেটাকে চাঙ্গা করতেই মূলত এয়ার এ্যাম্বুলেন্স থিওরির ঘোষণা দেন মোদি। এতে আবারও ভারতসহ চুক্তিবদ্ধ দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password