রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। গন্ধ তীব্র বলে জানাচ্ছে অনেকে। কেউ কেউ আতঙ্কিত হয়ে তিতাসের জরুরি নম্বরে ফোন দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার ৯৯৯ এ ফোন দিয়েও সাহায্য চাচ্ছেন। এই অবস্থায় জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও তিতাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদের ছুটিতে চাহিদা কমে যাওয়ায় গ্যাস ওভারফ্লো হচ্ছে।
এর ফলে রাজধানীর যেসব এলাকার পাইপলাইনে সমস্যা আছে সেসব এলাকায় গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তিতাসের অপারেশন ডিভিশন এই বিষয়ে কাজ শুরু করেছে বলেও জানানো হয়। এদিকে ফায়ার সার্ভিস থেকে বলা হয়েছে, যেসব এলাকায় গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, আপাতত সেসব জায়গায় কয়েক ঘণ্টা চুলা জ্বালানো থেকে বিরত থাকাই নিরাপদ হবে।
অনাকাঙ্ক্ষিত অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিট রাস্তায় টহলে বের হয়েছে। গ্রীনরোডের বাসিন্দা জানান, বাসার আশেপাশে তীব্র গ্যাসের গন্ধ। অভিযোগ জানাতে তিতাসের জরুরি নম্বরে ফোন করেছিলাম। কেউ আসেনি এখন পর্যন্ত! বাসার জানালা দরজা খোলা রেখেছি। দারোয়ানকে দিয়ে প্রতিটি ফ্ল্যাটে আগুন জ্বালাতে নিষেধ করেছি।
মুহাম্মদ শাহরিয়ার খান নামে একজন রাত সাড়ে ১১টায় ফেসবুক পোস্টে জানান, ইস্কাটন রোড থেকে গ্রীনরোড পর্যন্ত গ্যাসের তীব্র গন্ধ। আশঙ্কা হচ্ছে, এই অঞ্চলের গ্যাস লাইনে বড় ধরনের লিক হয়েছে। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেছি, কিন্তু ব্যস্ত পাচ্ছি। ফ্রেন্ডলিস্টে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউ যদি থেকে থাকেন, দয়া করে ব্যবস্থা নিন।
গ্রিনরোড ছাড়াও নিউ ইস্কাটন-দিলুরোড এলাকার মসজিদ থেকে বার বার মাইকিং হচ্ছে বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। মাইকে বলা হচ্ছে, গ্যাস লাইন লিক করেছে। চুলা জ্বালাতে নিষেধ করা হয়েছে মালিবাগ, নয়াটোলা, মগবাজার, বাংলামোটর, নিউ ইস্কাটন, দিলুরোডের বাসিন্দাদের। এছাড়া মহাখালী ওয়ারলেস ও টিবি গেট, পূর্ব রাজাবাজার, মুগদা, নয়াটোলা এলাকা থেকেও গ্যাস লিকেজের অভিযোগ আসছে। এলাকার মসজিদে মাইকিং করে দুর্ঘটনার আশঙ্কার কথা জানানো হচ্ছে।
কাওরান বাজার ভোক্তা অধিদফতরের আশেপাশে, শাহজাদপুরে গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার খবর জানা গেছে। পিলখানায় বিজিবি ১ নম্বর গেটের আশেপাশের বাসাবাড়ি থেকেও একই অভিযোগ আসছে। এদিকে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানায়, ঈদে শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায়, সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনে গ্যাসের চাপ বেড়ে যাওয়ায় (ওভার-ফ্লো) গন্ধ বাইরে আসছে। তিতাসের জরুরি ও টেকনিক্যাল টিম বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে তিতাসের একটি সূত্র জানায়, অভিযোগ পাওয়ার পর তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ তিতাসের অপারেশন ডিভিশনকে দ্রুত কাজ শুরু করার নির্দেশনাও দিয়েছেন। তবে পরিচালক (অপারেশন) সেলিম মিয়াকে ফোন দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না। ফোন কেটে যাচ্ছে।
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি। এক থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। চুলা বন্ধ রাখতে হবে না। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার ফেসবুক পেজে জানান, ঢাকার বেশ কয়েকটি জায়গায় গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার খবরে নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। ঢাকার গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এদিকে রাজধানীর প্রতিটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনকে সর্তক করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের হেড অফিস থেকে। ইউনিটগুলোকে জরুরি অবস্থা বিবেচনায় স্ট্যান্ডবাই থাকতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিট রাজধানীতে টহলে বের হয়েছে। এদিকে ফায়ার সার্ভিস আপাতত কয়েক ঘণ্টা আগুন না জ্বালানোর পরামর্শ দিয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন