ভোলায় সিত্রাংয়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি, ভেসে গেছে পশু-ঘেরের মাছ

ভোলায় সিত্রাংয়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ হাজারের বেশি  ঘরবাড়ি, ভেসে গেছে পশু-ঘেরের মাছ
MostPlay
ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং চলে গেলেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে দ্বীপজেলা ভোলায় । ঝড়ের আঘাতে ঘর ও গাছপালা চাপাপড়ে মারা গেছেন ৪ জন। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে হাজারের বেশি ঘরবাড়ি। এর মধ্যে ২ শতাধিক সম্পূর্ণ ও বাকীগুলো আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব পরিবারগুলো অসহায় মানবের জীবন যাপন করছে।

ক্ষতিগ্রস্থ অধিকাংশই চরাঞ্চল ও বেড়িবাঁধের বাইরের বাসিন্দা। অস্বাভিক জোয়ারে ভেসে গেছে চরাঞ্চলের কয়েক হাজার গরু মহিষ ও হাঁস- মুরগি। ঢেউয়ের আঘাতে অর্ধশতাধিক ট্রলার ভেঙ্গে গেছে।  জালসহ ভেসে গেছে অর্ধশতাধি ট্রলারে। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে দরিদ্র মানুষরা। এদিকে দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।  

ঝড়ের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ সাগরকূলে উপজেলা চরফ্যাশন। সরেজমিনে দেখা যায়, তীব্র গতিতে আঘাত হানা ঝড়ে মুহুর্তে লন্ডভন্ড হয়ে যায় চরফ্যাশন উপজেলার হাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের চর ফকিরা গ্রামের বেরিবাঁধ এলাকা। স্থানীয় ইউপি মেম্বার ইউসুফ সিকদার জানান, খেজুর গাছিয়া এলাকায়  ঝড়ে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয় ৩০টি বসত ঘর। আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আরও অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। ঝড়ের আঁধার রাত বেড়িবাঁধে কাটানো এসব পরিবার মঙ্গলবার সকালে ভিটির উপর থাকা ভেঙে চুরমার হওয়া ঘরের মালামল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।

 

বেড়িবাঁধে আশ্রিত জেলে নাইম জানান, সোমবার রাতের ঝড়ের আঘাতে তার ঘরটি ভেঙ্ড়ে চুমার হয়ে যায়। চাল বেড়া সব ধুমরে মুচরে যায়। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাঁধের উপর রাত কাটিয়েছেন। ঝড়ের রাতে একই অবস্থা হয়েছে ঘরহারা সকল পরিবারের। ঘরবাড়ি হারিয়ে নতুন করে শংকায় পরেছে এসব পরিবার।

চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল নোমান জানিয়েছেন, উপজেলায় প্রায় আড়াইশত ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে আরও প্রায় ১ হাজার ঘরবাড়ি। 

চর ফকিরার মতোই চরফ্যাশনের ঢালচর, চর নিজাম, চর পাতিলা সহ বিভিন্ন এলাকার ২শ’ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও হাজারেরও বেশি  আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। 

এছাড়া বিছিন্ন মনপুরার ব্যবসায়ী আমির সোহেন জানান, সোমবার রাতের ঝড়ের সাথে জোয়ারের সময় বাঁধের উপর দিয়ে মুল ভুখন্ডে প্রবেশ করেছে। এতে উপজেলা সদর হাজিরহাট সহ বিভিন্ন এলাকায় ৫ থেকে ৭ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

১৯৭০ সালের পর এতো পানি আর মনপুরার মানুষে দেখেনি বলে প্রবীণদের কাছ থেকে জানা গেছে। এছাড়া মেঘনার মধ্যবর্তী কলাতলির চর, চর মোজাম্মেল, চর জহির উদ্দিন সহ বিভিন্ন চরে বিপুল সংখ্যক ঘরবাড়ি বিধস্থ হয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৭ ফুট উচ্চতার পানিতে প্লাতিব মনপুরা উপজেলাও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে বহু গরু, ছাগল মহিষ ও শত শত ঘেরের মাছ। 

ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকার কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্থ এসব মানুষ ঘুরে দাড়াতে সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন। 

জেলা সদরের সামান্য এলাকা ছাড়া পুরো জেলা গত ৩দিন বিদ্যুৎ বিহীন রয়েছে। এতে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন  হয়ে পড়েছে। ঝড়ের দিন সকাল থেকেই মোবাইল যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ের পরও বিদ্যু সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ায় দুর্ভোগে রয়েছে জেলাবাসী। 

চরফ্যাশনের খাজুর গাছিয়া মাছঘাটের মাকসুদ জানান, জাল, ইঞ্জিনসহ ওই এলাকার ৩গটি ট্রলার ভেসে গেছে। এতে তারা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন ঘাট থেকে আরও শতাধিক ট্রলার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় বড় ধনের ক্ষতির মুখে পড়েছে জেলেরা। 


ঘরবাড়ি হারা পরিবারগুলোর পূর্ণবাসনে সরকারি সহায়দার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। চর কুকরী মুকরীর চেয়ারম্যান আবুল হাসেন মহাজন, সবচেয়ে বেশিক্ষতিগ্রস্থ ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার জানান, প্রতিটি ঝড়েই ঐসব এলাকার বাসিন্দারা ক্ষতির মুখে পড়েন। এসব ক্ষতিগ্রস্থদের পূর্ণবাসনে সরকারী সহায়তা প্রয়োজন। 

এদিকে গতকাল দুপুরে সদর উপজেলার দূর্গত এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক ই লাহী চৌধুরী। এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য সহায়তার আশ্বাস দেন। জেলা ও উপজেলা কন্টোলরুম থেকে জানা গেছে সরেজমিন থেকে ক্ষয় ক্ষতির তালিকার এখনো পাওয়া যায় নি। ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধের পরিমাপ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন, পল্লী বিদ্যুৎ ও ওজোপাডিকো।

ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে ভোলায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেরার ধনিয়ায় মফিজল (৬০), দৌলতখান পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ৮০ বছরের বৃদ্ধা বিবি খাদিজা ঘরচাপায়, লালমোহনের ফাতেমাবাদ গ্রামের আয়েশা পানিতে ডুবে, চরফ্যাসনের হাজিরগঞ্জের মনির স্বর্ণকার গাছচাপায় মারা যান।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password