এনআইডির দায়িত্ব সরকারের অধীনে যাক, তা চান না: সিইসি

এনআইডির দায়িত্ব সরকারের অধীনে যাক, তা চান না: সিইসি

জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছ থেকে সরকারের অধীনে যাক, তা চান না সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনাররা (সিইসি)। তারা বলেছেন, এটা সরকারের কাছে গেলে গণ্ডগোল হতে পারে। এ ছাড়া নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়েও মতামত দেন তারা।

আজ বুধবার (১৯ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত মতবিনিময় শেষে তারা সাংবাদদিকদের কাছে এমন মতামত জানান। এনআইডি সেবা ইসির কাছ থেকে নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে নেওয়ার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়নের কাজও চলছে বলে গণমাধ্যমকে সম্প্রতি জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বিভিন্ন অফিসে থাকতে পারে। এতে অসুবিধা নেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যেহেতু এর প্যারেন্ট, মূলটা তারাই ইনিশিয়েট করবে। এটা তাদের কাছে না থাকলে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে যদি দেখেন এনআইডিতে একটা, ভোটার লিস্টে অন্যটা; তখন আরেকটা গন্ডগোল লাগবে। আমার কথা হলো, বেইজটা ইসির হাতে থাকবে। অন্যদের লাগলে সেটা নেবে।

সাবেক সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভোটার তালিকা থেকেই এনআইডি এসেছে। এনআইডি ইসির কাছে না থাকলে লোকজন ভোটার হতে চাইবে না। মানুষের ভোটার হওয়ার অতটা আগ্রহ নেই। এখন এনআইডির জন্যই আগ্রহ বেশি। এই অ্যাডভাটেন্সটা এখান থেকে সরানো উচিত নয়। এতে গন্ডগোল হতে পারে। এটা এখানে থাকা উচিত। এটাতে কোনো দুর্বলতা থাকলে সেটাকে সঠিক করতে হবে।

ইসির অনেক বড় ডাটাবেজ আছে এবং সেটা সুরক্ষিত আছে। এটা ভালো সিস্টেম হয়ে আছে। এটাকে আরো মজবুত করা উচিত। সাবেক সিইসি কেএম নূরুল হুদা বলেন, এনআইডি নির্বাচন কমিশনের তৈরি একটি জিনিস। এটা নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকলে সরকারের কোনো অসুবিধা হয় না। এনআইডির সাথে জাতীয় নির্বাচন, ভোটার তালিকার পুরোপুরি সম্পর্ক রয়েছে। এটাকে মাঝখান থেকে নিয়ে গেলে নির্বাচন কমিশনের কাজ করতে অসুবিধা হবে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি.জে (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এনআইডি সরকার কেন নিতে চাচ্ছে সেটা পরিস্কার নয়। আর এনআইডির পেছনে এতগুলো বছর সিস্টেম ডেভেলপ করেছে নির্বাচন কমিশন। এটা যদি আলাদা হয়ে যায়, তাহলে কোনো এক সময় ভোটার লিস্ট নিয়েই কথা উঠবে, যেটা করাটা ঠিক হবে না। এনআইডি ঠিক, না ভোটার তালিকা ঠিক এই প্রশ্ন উঠবে। কারণ কালকে আপনি গিয়ে বলবেন আমার বয়স ৩০ না, আমার বয়স ১৯; আর ভুল হয়েছে বলে সেটাই করে ফেলল। ভোটার লিস্টটার কী হবে?

আল্টিমেটলি এটা নিয়ে একটা গণ্ডগোল হবে। যেসব দেশে এটা আলাদা আছে সেখানে ভোটার লিস্ট নিয়ে গণ্ডগোল হচ্ছে। ইসিকে বলেছি এই জায়গাটাতে সরকারকে বোঝাতে হবে। ‘আমাদের করণীয় কী আছে’ এমনটি না বলে সরকারকে বোঝাতে হবে। এই সরকারের সময়ও তো আমার ভোটার লিস্ট তৈরি করেছিলাম। এর মাধ্যমে নির্বাচন হয়েছে। এখন তারা হঠাৎ এনআইডিটা কেন নিতে চায়? এর কোনো বোধগম্য উত্তর নেই।

সাবেক ইসি সচিব ও সাবেক পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, এনআইডি ও ভোটার তালিকা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। আপনি ডাটা শেয়ার করতে পারেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডাটা নিয়ে যাক। ডাটা তো যে কেউ নিতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এনআইডিটা এখানেই থাকা প্রয়োজন- এক বাক্যে সবাই একথাটা বলেছেন। এদিকে অন্যান্য বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে দেন সাবেক সিইসিরা।

বিচারপতি রউফ বলেন, যখন ভোটাররা ভোট দিতে পারে না। একজনের ভোট আরেকজন দেয় তখন নির্বাচন কমিশন বসে থাকবে কেন? স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের এই অধিকার আছে। তাদের চোখের সামনে ধরা পড়ছে। ভোট দিতে পারছে না। কারচুপি হচ্ছে। তারা গাইবান্ধার নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা বলেছি দরকার হলে বারে বারে বন্ধ করবেন। জাতিকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। মাগুরার নির্বাচনে এ ধরনের ঘটনায় কেন ব্যবস্থা নিতে পারেননি- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাই।

পেছনেরটা টেনে এনে জাতিকে আর আন্ধার মধ্যে ফেলবেন না। ইভিএম নিয়ে তিনি বলেন, কমিশন চেষ্টা করতে থাকুক। মানুষ যদি শিক্ষিত হয় তাহলে হবে। সাবেক সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশন সাংববিধানিক বডি। সংবিধান ও আইন মোতাবেক তারা কাজ করে যাবে- আমরা এই পরামর্শ দিয়েছি। ইভিএম নিয়ে আরো প্রচার প্রচারণা করতে হবে। এটা সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে।

তারা বলেছেন- নতুন ইভিএমটি খুবই উন্নতমানের। অলমোস্ট ডিজিটাল। কিন্তু এটা তো লোকজনকে জানতে হবে। এটা নিয়ে ইতিবাচক প্রচারণার দরকার আছে। সাবেক সিইসি কেএম নূরুল হুদা বলেন, আমাদের সময় যেভাবে রিপোর্ট আসত সেইভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে। এই কমিশন সিসিটিভিতে পর্যবেক্ষণ করেছে। তার আলোকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গাইবান্ধা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন যেটা নিয়েছে ঠিকই নিয়েছে।

বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছে এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার এই ক্ষমতা আছে। তারা তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে নতুনভাবে আর তথ্য-উপাত্ত যোগাড় করার দরকার নেই। ইভিএম নিয়ে তিনি বলেন, যেখানে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে সেখানকার ভোটাররা জানেন এটা কী? যারা ব্যবহার করেননি তাদের পক্ষে ইভিএম বোঝাটা একটু কঠিন। আমি বলেছি যতদূর পারা যায় আগামী জাতীয় সংসদে ইভিএম ব্যবহার করা উচিত। অন্যদিকে ইভিএম ব্যবহারের বদলে সিসিটিভির ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভালো হোক, মন্দ হোক ইভিএম নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। যে বাজেটে ১৫০টি আসনের জন্য ইভিএম কেনা হবে তার থেকে ভালো যতখানি সম্ভব সিসিটিভি তিনি বলেন, ব্যালট পেপারে ভোট চুরি করলেও সেটা খুঁজে বের করা সহজ। আপনাদের কাছে ভোটার লিস্ট (ছবিসহ) আছে। স্বাক্ষর আছে। সবকিছু আছে। ম্যাচ করা যায়। সূক্ষ্ম কারচুপি আপনারা যেটা দেখলেন ইভিএমে, বাইরের পরিবেশ ফার্স্ট ক্লাস! ঝামেলা নেই। হইচই নেই। কিন্তু ভেতরে কী হচ্ছে? অন্য সিস্টেমে (ব্যালটে) যখন এটা হবে বাইরেও হইচই হবে।

কারণ, একা তো পারবেন না। ভোট কাটতে হলেও পাঁচ থেকে ছয়জন লাগবে। এতে প্রতিপক্ষ তো হইচই করবে। এটা আপনারা আরো ভালো করে দেখতে পারবেন। ভোটকক্ষের সিসিটিভি তো কষ্ট করে দেখতে হয়। ’ গাইবান্ধা-৫ উপ নির্বাচনে ইসির নেওয়া পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, আপনারা যেটা করেছেন, সেটা ঠিক আছে। তবে পরের ধাপগুলোয় যেন স্লিপ না করেন। যদি স্লিপ করেন, তাহলে জাতির কাছে অন্য রকমের মেসেজ যাবে। আপনারা দেখানোর জন্য করেছেন। বাকিটুকু করলেন না।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password