নওগাঁর মহাদেবপুরে ঘরের সামনে বেড়া দিয়ে উচ্ছেদ চেষ্টার অভিযোগ

নওগাঁর মহাদেবপুরে ঘরের সামনে বেড়া দিয়ে উচ্ছেদ চেষ্টার অভিযোগ

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার হাতিমন্ডলা গ্রামে বসতঘরের সামনে বাঁশের বেড়া দিয়ে একটি পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখা ও বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুলিশ ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের দ্বারস্থ হয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী পরিবার।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের হাতিমন্ডলা গ্রামের এসএম মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে বসতবাড়ির জমির মালিকানা নিয়ে তার চাচাত ভাই মমতাজুল ইসলাম, দুলাল হোসেন ও হাবিবুর রহমানের বিরোধ চলে আসছে। তাদের অভিযোগ স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান বাচ্চু চাইলেই এসমস্যার সমাধান হতে পারে। আগে মোশাররফ ও তার চাচাত ভাইয়েরা পাশাপাশি মাটির বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তাদের দুই বাড়ির উঠান একটাই ছিল। আড়াই বছর আগে মমতাজুল ও তার অপর দুই ভাই তাদের পুরনো মাটির বাড়ি ভেঙে দিয়ে ইটের বাড়ি নির্মাণ শুরু করেন। ওই বাড়ি করার জন্য সে সময় তারা মোশাররফের মাটির বাড়ির একাংশ জোর করে ভেঙে ফেলেন।

এ ঘটনায় মোশাররফ প্রতিবাদ জানালে বসতবাড়ির জন্য অন্য জায়গায় জমি বুঝে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তাঁর চাচাত ভাইয়েরা। বাড়ি ভেঙে ফেলায় তিনি পরিবার নিয়ে ওই গ্রামেই তাঁর বোনের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। বসতবাড়ি থেকে এক প্রকার উচ্ছেদ হয়ে মোশাররফ পুরনো বাড়ির পাশেই নিজের জমিতে ইটের বাড়ি তৈরি করেন। এক বছর আগে বাড়ি নির্মাণ শেষে সেখানে ওঠতে গিয়ে আবারও পরিবার নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন তিনি। বাড়ির মূল দরজার সামনের অংশে দেড় শতাংশ জমির মালিকানা দাবি করে তার চাচাত ভাইয়েরা বাঁশের বেড়া দেন।

এতে ওই বাড়ির চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় বাধ্য হয়ে নতুন নির্মাণ করা বাড়ি ছেড়ে তিনি বর্তমানে নওগাঁ শহরে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। বসতবাড়ির জমি জোর করে দখল করে নেওয়া, চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ায় একাধিকবার থানায় অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না মোশাররফ। মোশাররফ হোসেন বলেন,আমার বাবারা তিন ভাই। তিন ভাইয়ের মধ্যে এক চাচা অন্য জায়গায় বাড়ি করে পরিবার নিয়ে চলে যান। আমি ওই চাচার বসতবাড়ির ১৪ শতাংশ অংশ কিনে নিয়েছি।

পৈত্রিক সূত্রে এবং ক্রয় সূত্রে বসতভিটায় আমার সম্পত্তির পরিমাণ ২৮ শতাংশ। অথচ বর্তমানে আমি আমার চাচাত ভাইদের শত্রুতার জেরে বসতভিটা থেকে এক প্রকার উচ্ছেদ হয়ে গেছি। প্রায় দশ লাখ টাকা খরচ করে নতুন বাড়ি করে সেখানে উঠতে পারছি না। প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ায় এবং সম্পত্তির দখল বুঝে নিতে পুলিশি সহায়তা চেয়ে এ পর্যন্ত থানায় তিন-চারবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার হয়নি। থানায় অভিযোগ করলে জমির দখল বুঝে দেওয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়ে দেন। চেয়ারম্যান বাচ্চুর কাছে বছরের পর বছর ঘুরেও তিনি এ বিরোধের কোনো সুরাহা করেননি। অথচ তিনি চাইলে যেকোনো সময় এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। মোশাররফের ভাগ্নে ও ঢাকার সেন্ট জোসেফ স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক খোরশেদ আলম বলেন, অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে আমার মামাকে বসতঘর থেকে উচ্ছেদের জন্য দীর্ঘ দিন তার চাচাত ভাইয়েরা চেষ্টা করছেন।

এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমার বাবা বিভিন্ন সময় মামার পক্ষ হয়ে কথা বলেন। এজন্য মমতাজুল ও তাদের সহযোগী একই গ্রামের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম কিছু দিন আগে আমার বাবাকে পাহাড়পুর বাজারে জনসম্মুখে হত্যার হুমকি দিয়ে আসেন। এছাড়া হয়রানি করার জন্য আরিফুল ও আব্দুস সালাম আমাদের বাড়ির সামনে আধা শতাংশ জমির মালিকানা দাবি করে সেখানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। অথচ তারাই আমাদের ৪০ শতাংশ আবাদি জমি জোর করে দখল করে রেখেছেন। এসব ঘটনায় থানায় জিডি করলেও কোনো প্রতিকার আমরা পাচ্ছি না। আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বসতবাড়ির আধা শতাংশ জমি খোরশেদেরা দখল করে আছে। অথচ তারা সেটা বুঝে দিচ্ছে না।

জমিজমার মালিকানা নিয়ে একদিন খোরশেদের বাবার সঙ্গে বাজারে কথাকাটাকাটি হয়েছে। হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনা সত্য নয়। তবে মমতাজুল ইসলাম বলেন,আমরা কারও জমি দখল করিনি, জমি দখল করতে যাইনি। আমরা আমাদের জমি বুঝে নিয়েছি। আপনার অনিচ্ছার জন্যই এসমস্যার সমাধান হচ্ছেনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামসুল আলম বাচ্চু বলেন, উভয় পক্ষই আমার কাছের মানুষ। বেশ কিছুদিন পারিবারিক ব্যস্ততার জন্য আমি এবিষয়টি নিয়ে বসতে পারিনি। তবে খুব শিঘ্রই দুপক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধোনের চেষ্টা করবো।

মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোজাফ্ফর হোসেন বলেন,আমি এই থানায় অল্প কয়েকদিন আগে যোগদান করেছি। শুনেছি এটা নিয়ে অনেকবার শালিশ দরবার হয়েছে। আমি আসার পরে কেউ এবিষয়ে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password