মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বিরোধীদের সঙ্গে স্বশস্ত্র বাহিনীর সংঘর্ষ এখনো অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, মিয়ানমার জান্তা বিরোধী স্বশস্ত্র বিদ্রোহীরা উত্তর সীমান্তে একেকটি সেনা ঘাঁটি দখল করে এবার মংডুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ কারণে আগামী কয়েকদিন টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে উত্তেজনা বাড়তে পারে।
আজ সোমবার ভোররাত থেকে টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপ শুরু হয়েছে। উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়া ও হারাংঘাঘোনা সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা সীমান্তে মর্টারের বিকট আওয়াজ শোনে। তবে উত্তরের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু, উখিয়ার রহমতের বিল ও আনজুমান পাড়া সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারে গোলাগুলি ও মর্টারের শব্দ শোনা যায়নি গত তিনদিন।
সোমবার নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্ত এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার সকাল থেকে তমব্রু বাইশফাঁড়ি, উত্তর পাড়া, বাজার পাড়া, পশ্চিম কুল, জলপাই তলী এলাকা থেকে মিয়ানমারের মর্টার বা বিমান মহড়ার শব্দ শোনা যায়নি। স্থানীয়দের ধারণা খুব সম্ভবত এসব সীমান্তে গোলাগুলি বা মর্টারের আওয়াজ বন্ধ হচ্ছে। উখিয়ার আনজুমান পাড়া সীমান্তের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিমান হামলার পর আর কোনো গোলাগুলি বা বোমা নিক্ষেপের শব্দ শুনিনি।
এখন মানুষ অনেকটা স্বস্তিতে আছে। এদিকে নতুন করে টেকনাফ সীমান্তের মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মর্টার শেলের বিকট শব্দে স্থানীয়রা বেশ আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব এলাকার মানুষের নিরাপত্তার বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সীমান্তে বিজিবি জোয়ানদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে গোলাগুলির ঘটনায় মানুষ একটু আতঙ্কে আছে। পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে গেলে প্রশাসনের সহায়তায় নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে মিটিং হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের হারাংঘাঘোনার বাসিন্দা মোহাম্মদ জাফর বলেন, সোমবার ভোররাত থেকে মিয়ানমারে গোলাগুলির শব্দ শুনেছি। যেহেতু সীমান্তে বসবাস করি, তাই একটু আতঙ্কে আছি। কিন্তু আমরা তো সাধারণ মানুষ কি করব ভেবে পাচ্ছি না। হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরুল মোস্তফা লালু জানান, সকাল ৯টার দিকে যখন আমি বাড়ি থেকে বের হয়, তখনও মর্টারের আওয়াজ শুনি।
এর আগে রাতেও মর্টারের বিকট শব্দ শুনেছি। আমার নিজের বাড়িটিও সীমান্তে তাই নিজেও আতঙ্কে আছি। এ ব্যাপারে পরিষদের পক্ষ থেকে সীমান্তবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল। আমি আমার ওয়ার্ড থেকে সীমান্তের অতিনিকটবর্তী ৩৩০ পরিবারের তালিকা জমা দিয়েছি। উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নুরুল ইসলাম জানান, আমাদের বেশ কিছু আত্মীয় স্বজন এখনো মিয়ানমারে রয়েছে।
তারা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের সহিংসতার সময়ও সেখানে থেকে যায়। তাদের সাথে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হয়। আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে জেনেছি, মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী স্বশস্ত্র বিদ্রোহীরা তমব্রু থেকে একের পর এক এলাকা দখল করে এখন মংডুর পথে অগ্রসর হচ্ছে। তবে আশঙ্কা রয়েছে মিয়ানমার জান্তা সরকার মংডুতে নিজেদের অস্তিত্ব হারালে বিমান বা ড্রোন হামলার মতো বড় ধরনের হামলা করতে পারে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন