বাংলাদেশের সবচেয়ে রক্ষণাত্মক ব্যাটসম্যান কে? যারা বাংলাদেশের ক্রিকেটের টুকিটাকি খোজ খবর রাখেন তারাও বলে দিতেন পারবেন এক নিশ্বাসে! তিনি আর কেউ নন জাভেদ ওমর বেলিম (গুল্লু)। ১২ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার জুড়েই একটা “অপবাদ” সঙ্গী ছিল জাভেদের তিনি ব্যাটিংটা করেন ধীরলয়ে। শুধু আন্তর্জাতিক নয় ঘরোয়া ক্রিকেটেও তার ব্যাটিং একই ধরনের ছিল। তার ব্যাটিং ধরন শুধু টেস্টের সাথে যায়। এমন কথা বলা লোকের সংখ্যা নেহাত কম নয়।
বাংলাদেশের সেই টেস্ট ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট ম্যাচে ছিলেন না একাদশে। নামের পাশে টেস্ট ব্যাটসম্যানের তকমা লেগে থাকার পরেও বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক টেস্টের একাদশে না থাকা হয়তো এখনও পীড়া দেয় জাভেদ ওমরকে। টেস্ট ম্যাচ খেলার অপেক্ষা খুব বেশিদিন করতে হয়নি তাকে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচেই তিনি সুযোগ পেলেন। প্রথম টেস্ট ম্যাচে মাঠে নামার আগের রাতে এমনিতেই ভালো ঘুম হওয়ার কথা নয়।
জাভেদ ওমরেরও সে রাতে ঘুম হচ্ছিল না। কিন্তু সেটি যতটা না নিজের প্রথম টেস্ট খেলতে নামার রোমাঞ্চে, তার চেয়ে বেশি অ্যাংকেলের ব্যথায়। অনুশীলনে জাভেদ এমনভাবেই চোটটা পেয়েছিলেন যে মাঠ থেকে ড্রেসিংরুমে যেতে হয়েছিল সতীর্থদের কোলে চড়ে। সকল কনফিউশন দুর করে তিনি বুলাওয়েতে খেলতে নামলেন জীবনের প্রথম টেস্ট ম্যাচ আর প্রথম টেস্ট ম্যাচেই গড়লেন বিরল এক রেকর্ড। ক্যারি দ্য ব্যাট থ্রু দ্য ইনিংসের রেকর্ড টেস্ট ক্রিকেটে খুব বেশি লোকের নেই।
টেস্টে ওপেনিংয়ে নেমে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ার নজির টেস্ট ক্রিকেট আছে মোট ৫৬টি। অভিষেকেই এই কীর্তি আছে মাত্র ৩ জনের। টেস্ট ক্রিকেটের ১২৪ বছরের ইতিহাসে মাত্র তৃতীয় ওপেনার হিসেবে অভিষক টেস্টেই ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করেছেন জাভেদ ওমর বেলিম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে সেই কীর্তি গড়ে ঢুকে পড়ছেন ইতিহাসের পাতায়। গতকাল ছিল এই কীর্তি গড়ার ২০ বছর। বিশ বছর হয়ে গেলেও আজও এই রেকর্ড আছে অক্ষুন্ন।
প্রথম ইনিংসে ৬২ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেনিংয়ে নেমে জাভেদ অপরাজিত ছিলেন ৮৫ রানে। ৮৫* রানের ইনিংসটি সত্যিই ছিল প্রকৃত টেস্ট ব্যাটিং। বুলাওয়ের ঘাসে ভরা উইকেটে একের পর এক শর্ট বল করছিলেন জিম্বাবুয়ের বোলাররা। প্রথম টেস্টেই দিয়েছেন চরম ধৈর্যের পরীক্ষা। জাভেদ তার সীমাবদ্ধতা জানতেন তাই শর্ট বলগুলো ছেড়ে দিচ্ছেলেন। শুধু তার শক্তির জায়গা ড্রাইভ আর স্কোয়ার কাট খেলছিলেন বেলিম। অভিষেক টেস্টে রেকর্ড করেও আক্ষেপ নিয়ে সাজঘরের দিকে হেঁটেছেন তিনি। আক্ষেপটা অভিষেকেই শতকের।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেটিই কিন্ত প্রথম ক্যারি দ্য ব্যাট থ্রু দ্য ইনিংস নয়। এই কৃতির ১৪ দিন আগে ওয়ানডে ক্রিকেটেও করেছেন এই কীর্তি। ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল হারারেতে জিম্বাবুয়ের ২৩০/৭-এর চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ থেমেছে মাত্র ১০৩ রানে। জানেন ওই ম্যাচে প্রথম বল ফেস করতে এসে শেষ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন ছিলেন জাভেদ ওমর, মরনকামড় দিয়ে উইকেটে থাকা এই ওপেনার করেছেন সে ম্যাচে ৮৬ বলে ৩৩ রান ! তিনিই প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশী যিনি দুই ফরমেটেই এই কীর্তি করে দেখিয়েছেন।
সবমিলিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে ১২ জন ব্যাটসম্যান এই কীর্তি করেছেন। ৪০ টেস্টে ২২.০৫ গড়ে ১৭২০ রান এবং ৫৯ ওয়ানডে ম্যাচে ২৩.৮৫ গড়ে ১৩১২ কোন প্রেক্ষাপটেই একজন ব্যাটসম্যানের হয়ে কথা বলেনা কিন্ত এই মাঝারি মানের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দারুণ ২টি রেকর্ডের মালিক তিনি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন