বিদেশেও রফতানি হয় চুয়াডাঙ্গার খেজুর গুড়

বিদেশেও রফতানি হয় চুয়াডাঙ্গার খেজুর গুড়

চুয়াডাঙ্গার খেজুর গুড়ের সুনাম সারাদেশে। এখানকার খেজুর বিদেশেও রফতানি হয়। এই জেলার খেজুরের গুড় ও নলেন পাটালির সুখ্যাতি আছে। স্বাদে-গন্ধেও অতুলনীয়। খেজুর গুড় ও নলেন পাটালি বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে এখন জমজমাট ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ ও জয়রামপুরের সাপ্তাহিক হাট। হাটের দিন এখানে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ব্যাপারিসহ হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতা।

চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে দেশের সবচেয়ে বড় খেজুরের গুড়ের হাট বসে। সপ্তাহে দুদিন। শুক্রবার ও শনিবার। আর একটি খেজুরের গুড়ের হাট বসে এ জেলার দামুরহুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামে। রেলস্টেশন সংলগ্ন। এখানেও সপ্তাহে দুদিন। শনিবার ও মঙ্গলবার। শনিবার তুলনামূলক বেশি জমজমাট হয়। এখন সিজন হওয়ায় হাট জমে উঠেছে। এখানকার খেজুড়ের গুড়ের স্বাদ অতুলনীয়। মানও ভালো। বিদেশেও রফতানি হয়।

গুড়ের বাজার গমগম করছে। যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। খুচরা বিক্রেতা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী কিংবা চাষি থেকে ব্যাপারি সবাই ব্যস্ত। ইজারাদার খাজনা তুলতে ব্যস্ত। হাটের কর্মীরা অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে অতি ব্যস্ত। বাজারজুড়ে কর্মচাঞ্চল্য বেশ লক্ষ্য করার মতই। সাথে রয়েছে কাঁচা শাক-সবজির বাজারও। মাঝেমধ্যে ট্রেনের হুইসেল মাতিয়ে তুলছে হাট এলাকা। লোকাল ট্রেনে গুড়ের ভাড় তুলতে কুলিরা ব্যস্ত। ট্রেনে করে ঐতিহ্যবাহী চুয়াডাঙ্গার গুড় পৌঁছে যাবে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে।

সকাল ৮টা থেকেই শুরু হয়ে যায় হাট। দুপুর ১২-১টা পর্যন্ত জমজমাট চলে। এরপর ট্রাক ও ভ্যান বা আলমসাধু ভর্তি হয়ে চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। হাট ঘুরে দেখা যায়, ব্যাপারিরা খুচরা চাষিদের কাছ থেকে গুড় কিনে নেন। চাষি ও ব্যাপারিদের মধ্যে দর কষাকষি করতে দেখলাম। মান অনুযায়ী দাম পেলে চাষিরা গুড় বিক্রি করেন। এরপর ব্যাপারিরা গুড়ের ভাড় (কলসি) নিয়ে জড়ো করেন। তার আগে ওজন করে বিভিন্ন সংকেত লেখেন। এতে বাছাই করতে সুবিধা হয়। এ কাজে জড়িত একজন বললেন, ‘কেনা দামের সাথে যাতায়াত, লেবার ও অন্যান্য খরচ যোগ করে বিভিন্ন বাজারে বা মোকামে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়।’

এভাবেই ভাড়ের গায়ে গুড়ের ওজন (পরিমাপ) লেখা হয়। বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিভিন্ন সাইজের কলসে গুড় নিয়ে আসেন গাছিরা। ব্রিটিশ আমল থেকেই শনিবার ও মঙ্গলবার বসে বিখ্যাত এ হাট। ফলে ব্রিটিশরা জয়রামপুর রেল স্টেশন নির্মাণ করে। এটি দেশের নির্মিত প্রথম রেলস্টেশনের একটি।

জয়রামপুর গুড়ের হাটের ইজাদার স্বপন বলেন, ‘এ এলাকার খেজুর রসের গুড় ব্যাপক প্রসিদ্ধ। এ গুড়ে কাঁচা রসের ঘ্রাণ পাওয়া যায়। তাই ব্যবসায়ীদের কাছে আমাদের এলাকার গুড়ের অনেক সুনাম। তাছাড়া শীত মৌসুমে গুড় দিয়ে অনেক পিঠা তৈরি হয়। শীতে কেনা গুড় ব্যবসায়ীরা সারা বছর বিক্রি করে থাকেন। তবে এ ২-৩ মাস প্রচুর কেনাবেচা হয় এ হাটে।’ আশঙ্কার কথাও বললেন তিনি। বলেন, ‘ইটভাটা মালিকরা খেজুর গাছ কিনে পুড়িয়ে ফেলছেন। অনেক গাছি গাছ কাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই এখন আর আগের মতো হাটে গুড় আসছে না। অফ সিজনে গুড়ের পরিমাণ কম থাকে।’

জয়রামপুর স্টেশনসংলগ্ন গুড়ের এ হাটে সহজেই যে কেউ আসতে পারেন। একটু দূরেই দেশের বৃহত্তম গুড়ের হাট। চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ মূল সড়কে সরোজগঞ্জে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ও সোমবার গুড়ের হাট বসে। জয়রামপুর হাটের আগের দিন এ ঐতিহ্যবাহী হাটটিও দেখে নিতে পারেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password