বিদেশবাসী হওয়া মানুষগুলোর সুন্দর একটি নাম প্রবাসী

বিদেশবাসী হওয়া মানুষগুলোর সুন্দর একটি নাম প্রবাসী

নিজের দেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে বসবাস করাই হলো প্রবাস। বাংলাদেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী প্রবাসে বাস করে। প্রবাস মানে বিদেশ বা দূরদেশ, প্রবাস মানে আত্মীয়স্বজন বিহীন বছরের পর বছর একাকী কাটিয়ে দেয়া, প্রবাস মানে দেয়ালবিহীন কারাগার, প্রবাস মানে শত দুঃখ কষ্টের সঙ্গে বিরামহীন জীবন যুদ্ধ করা। প্রবাস জীবন শুধু একটি ভৌগোলিক স্থানান্তর নয়, এটি আবেগ, ত্যাগ, এবং নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর এক গভীর গল্প। যারা দেশ ছেড়ে প্রবাসে পাড়ি দেয়, তাদের জন্য এই যাত্রা যতটা স্বপ্নপূরণের, ততটাই কষ্টের। যা আমাদের লক্ষ রেমিটেন্স যোদ্ধাদের মনের কথা। প্রবাসীদের জীবনে নানা রকম আবেগ মিশে থাকে দেশের জন্য টান, প্রিয়জনদের জন্য মায়া এবং নিজের শিকড়ের প্রতি ভালোবাসা। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় জীবিকার তাগিদে কারো ছেলে, কারো ভাই, কারো বাবা, কারো স্বামী অন্যের সুখের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে দেশান্তরী হয়। এই বিদেশবাসী বা দেশান্তরিত হওয়া মানুষগুলোর সুন্দর একটি নাম প্রবাসী। প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা অর্থাৎ রেমিটেন্স বাংলাদেশের আয়ের প্রধান উৎস। বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ প্রবাসী। এই এক কোটির সাথে পরিবারের ৫ জন করে সদস্য হিসাব করলে মোট ৬ কোটি মানুষের ভাগ্য জড়িত।

প্রবাসীরা মাসিক যে বেতন পায় তার এক- তৃতীয়াংশ নিজের রুম ভাড়া,খাওয়া, মোবাইল ও অন্যান্য খরচে চলে যায়। বাকি দুই- তৃতীয়াংশ পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয়, তাতে ঘর খরচ, ছেলে-মেয়ের স্কুলের খরচ, ভাই-বোনের বিবাহ, মা -বাবার চিকিৎসা খরচ ও সহধর্মিনীর হাত খরচ ইত্যাদি। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে। কিন্তু অনেকের ভাগ্যে ঠিকমতো বেতন জোটে না, বেতন বাকি থাকে ৪-৫ মাস পর্যন্ত । তখন ধার-কর্জ করে প্রিয়জনের সুখের জন্য টাকা পাঠিয়ে থাকে। কিন্তু সে দুঃখ কাউকে বুঝতে দেয় না। নিরাশার অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো চোখের নোনাজল উপেক্ষা করে বুকের কষ্ট বুঝতে না দিয়ে বলে মা আমি ভালো আছি, বাবা আমি ভালো আছি। প্রতিটি টাকা খরচ করতে থাকে দুইবার ভাবতে হয়।

বাংলাদেশে বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারীরা তাদের উৎপাদিত দ্রব্যাদি রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে নাকি সমবৃদ্ধি করছে কিন্তু শ্রমিকদের বেতন দেয়ার সময় সরকারের কাছে ঋণের জন্য কান্নাকাটি করছে, কথা হলো তাদের উৎপাদিত দ্রব্যাদির লভ্যাংশ কোথায় যায়। ঐ সব বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী ও বিদেশবাসী বা প্রবাসীদের মধ্য পার্থক্য এখানেই। ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারীরা 'কৈ এর তেল দিয়ে কৈ ভাজে' কিন্তু প্রবাসীদের সে সুযোগ নেই।

সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমা ও মা বাবার দোয়া বা আশীর্বাদে প্রবাসীরা অনেক বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পায়। প্রতিটি প্রবাসী এক একটি জীবন যুদ্ধের সৈনিক। প্রবাসীরা না হেসে, অন্যের হাসি দেখতে ভালোবাসে। আবার কেউ না খেয়ে অন্যকে খাওয়ানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যায়। আবার কেউ অন্যের সুখের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে দেয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password