টেকনাফের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ৪-৫ দিন অবস্থানের পর নোয়াখালীয়াপাড়া থেকে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে ১৩৮ জন রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষকে নিয়ে দালালেরা সাগরপথে মালয়েশিয়া যাত্রা শুরু করে। তিনটি ছোট বোটে করে নিয়ে এরপর এসব রোহিঙ্গাদের বড় ট্রলারে তোলা হয়।
খান থেকে সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপের কাছাকাছি গিয়ে ভোর ৩টার দিকে বড় পাথরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বোটটি দুর্ঘটনায় পড়ে। এ সময় দালালরা এসব রোহিঙ্গাদের ফেলে পালিয়ে যায়। আর এতে বঙ্গোপসাগরে ডুবে ১৫ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় টেকনাফ কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লে. সোহেল রানা বিডিটাইপকে জানান, এখন পর্যন্ত ১৫ মরদেহ ও জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৭৩ জনকে। নিহতদের মধ্যে ১২ জন নারী, বাকি তিনটি শিশু।
জীবিত উদ্ধার ব্যক্তির মধ্যে ২৪ জন পুরুষ, ৪৬ জন নারী এবং তিনজন শিশু। আর উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে দুইজন বাঙালি রয়েছে। এরা দালাল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। রোহিঙ্গাদের দেওয়া তথ্যে তিনি জানান, বোটটিতে ১৩৮ জন রোহিঙ্গা ছিল। তাদের মধ্যে ১০০ জন নারী, ৩০ জন পুরুষ ও ৮ জন শিশু।
তিনি আরো জানান, উদ্ধার হওয়াদের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি, দালালেরা বিভিন্ন প্রলোভনে কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়ার ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এসে টেকনাফের নোয়াখালীয়াপাড়া সংলগ্ন বিভিন্ন পাহাড়ে জমায়েত করে। সেখান থেকে সোমবার রাত সাড়ে সাতটা-আটটার দিকে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাদের ট্রলারে তোলে।
স্টেশন কমান্ডার লে. সোহেল রানা বলেন, ছোট ছোট তিনটি বোটে করে নিয়ে পরে তাদের বড় ট্রলারে তোলা হয়। ট্রলারটি সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপের কাছাকাছি গিয়ে বড় পাথরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনার শিকার হয়। পরে দালালেরা এসব রোহিঙ্গাদের ফেলে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ দুর্ঘটনায় হতাহতদের টেকনাফে নিয়ে আসা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।এদিকে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারাও জানিয়েছেন টেকনাফের নোয়াখালীয়াপাড়ার আব্দুল আলীর ছেলে দালাল সাইফুলসহ বেশ ক’জন দালালের হাত ধরে তারা মালয়েশিয়া পাড়ি জমাচ্ছিল।
উখিয়ার বালুখালী ১২ নম্বর ক্যাম্পের এইচ ব্লকের কামাল হোসেনের ছেলে জিয়াবুল রহমান (৩০) বিডিটাইপকে বলেন, আমার এক ভাই মালয়েশিয়া থাকেন। সে আমাদের দালালের নম্বর দেয়। ওই নম্বর ধরে দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নেই।
তিনি বলেন, দালালের সঙ্গে কথা হওয়ার পরে চার-পাঁচদিন আগে আমি টেকনাফের নোয়াখালিয়াপাড়ায় চলে আসি। সেখানে জঙ্গলের ভেতরে আমাদের রাখা হয়। একবেলা করে খাবার দিতো। চার-পাঁচদিন জঙ্গলে থাকার পর সোমবার সন্ধ্যায় আমাদের প্রথমে একটি ছোট বোটে সেখান থেকে বড় একটি বোটে তোলা হয়। পরে বোটটি ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে বোটটি ওখানে (সেন্টমার্টিন) পৌঁছে দুর্ঘটনায় পড়ে।
তিনি বলেন, বোটটি দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার পর আমাদের কিছু না বলে দালালেরা বোট থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় পরিস্থিতি বুঝতে পেরে পুরুষেরা কেউ কেউ সাগরে ঝাঁপ দেয়। মহিলারা কান্নাকাটি শুরু করে।
নুর আহম্মদ নামের অপর এক ভুক্তভোগী রোহিঙ্গা বলেন, টেকনাফের নোয়াখালীয়াপাড়ার সাইফুল নামের এক দালালের সঙ্গে কথা বলে গত বৃহস্পতিবার আমরা টেকনাফ যাই। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নোয়াখালীয়াপাড়া পাহাড়ে নিয়ে আমাদের রাখে। রাত আটটার দিকে বোটে তোলে, নয়টার দিতে বোট ছাড়ে। রাত তিনটার দিকে বোটটি দুর্ঘটনার শিকার হয়।
উদ্ধার হওয়া মো. আজিম জানান, টেকনাফ জুম্মপাড়া সংলগ্ন পাহাড়ে তিন রাত রাখার পর আমাকে সোমবার বোটে তোলা হয়। নোয়াখালীয়াপাড়ার আব্দুল আলীর ছেলে সাইফুল আমাকে মালয়েশিয়া নিয়ে যাচ্ছিল।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন