দিন দিন চালের দাম বেড়েই চলছে

দিন দিন চালের দাম বেড়েই চলছে
MostPlay

বন্যা আর মহামারির কারণে অর্থনৈতিকভাবে সংকটে থাকা মানুষ চালের চড়া দামে বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে গত এক মাসে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের চালের দামই কেজিতে দুই-তিন টাকা করে বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। তবে ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে চালের দামও বাড়াতে হচ্ছে বলে মিল মালিকরা দাবি করছেন।

রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর এলাকার চালের পাইকারি বিক্রেতা মহিউদ্দিন হারুন বলেন, অগাস্টের শুরু থেকেই চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। দেখা গেছে এই কয়দিনে বস্তায় (৫০ কেজি) অন্তত দেড়শ টাকা বেড়েছে। প্রায় সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। গত বছরের এই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে চালের দাম বস্তায় অন্তত ৩০০ টাকা করে বেড়েছে।

বর্তমানে মিনিকেট প্রতি বস্তা ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০, নাজির ২ হাজার ৫৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০, পাইজাম ও কাটারি ২ হাজার ৩০০, বিআর আটাশ ২ হাজার ১৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান হারুন।

দাম বাড়ার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন যে বাড়ছে তাতো বুঝে আসছে না। এবার তো ধানের ফলন ভালোই হয়েছিল। সরকার আমদানির সুযোগ দিয়েছে বলে শুনেছি, কিন্তু বাজারে এখন পর্যন্ত কোনো আমদানি করা চাল আসেনি।

বর্তমান বাজার মূল্যের সঙ্গে মিল রেখে স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি ৪৮ টাকা, বিআর আটাশ ৫২ টাকা এবং মিনিকেট ৬১ টাকায় করে বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির হিসাব অনুযায়ী, শনিবার (২৯ আগস্ট) নাজিরশাইল ও মিনিকেটের মতো সরু চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫৫ টাকা থেকে ৬৪ টাকায়, এক সপ্তাহ আগেও যা বিক্রি হয়েছিল ৫০ টাকা থেকে ৬২ টাকায়। আর গতবছর একই সময়ে ৪৭ টাকা থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছিল এসব চাল। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে চালের দাম ১৫ শতাংশ বেড়েছে।

একইভাবে মাঝারি মানের চাল (পাইজাম ও লতা) বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫৪ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ৪৪ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এসব চাল গতবছরের একই সময়ের তুলনায় আট শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মোটা চাল হিসেবে পরিচিত স্বর্ণা ও গুটি স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৪ থেকে ৪৮ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতবছর এই সময়ে এই চাল বিক্রি হয়েছিল ৩৪ থেকে ৩৮ টাকায়। সেই হিসাবে গতবছরের একই সময়ের তুলনায় দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ।

এদিকে চলতি বছর চাল সংগ্রহে পিছিয়ে আছে সরকার। বোরো ধান ওঠার পরপরই গত এপ্রিলের শেষ দিকে সরকার নতুন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করে। এতে ৩৬ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা কেজিতে আতপ চাল কেনার কথা জানানো হয়। যেখানে সরকারের চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ লাখ টন। সেখানে এ পর্যন্ত ৭ লাখ ২২ হাজার টন চাল সংগ্রহ হয়েছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ বলেন, মূলত চালকল মালিকেরা চুক্তি অনুযায়ী চাল না দেওয়ায় লক্ষ্যপূরণ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তবে যথেষ্ট পরিমাণে সংগ্রহ না হলে আমরা আমদানি করব। এ জন্য সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া আছে।

তিনি জানান, সরকারি গুদামে চাল সরবরাহের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর আগামী মাসে আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় থাকবে সংগ্রহ পরিস্থিতি। এখন সরকারের কাছে চালের মজুত আছে সাড়ে ১০ লাখ টনের মতো। অবশ্য করোনা পরিস্থিতি ও বন্যার কারণে সরকারের নিয়মিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাইরেও নতুন নতুন খাতে চাল বরাদ্দ করতে হচ্ছে।

এদিকে চালকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অটো, মেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশীদ বলেন, দুই মাস ধরেই ধানের দাম বাড়ছে। আমরা যে দামে ধান কিনছি, তাতে চাল বিক্রি করে লোকসান হচ্ছে। তাই চালের দাম বাড়ার জন্য আমাদের দোষ দেওয়া ঠিক না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের কাছে পর্যাপ্ত মজুত না থাকলে বাজারে দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। তবে সরকারি মজুত বাড়ানোর পাশাপাশি বাজারে যাতে চালের সরবরাহে কোনো সংকট না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, দেশে চালের উৎপাদন যতটা হয়েছে, তাতে কোনো সংকট হওয়ার কথা নয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password