যশোরে রমরমা ক্রিকেট জুয়া

যশোরে রমরমা ক্রিকেট জুয়া
MostPlay

যশোর শহরের চৌরাস্তায় সাধনা ঔষধলয়ের পাশে ফলের দোকানি বাপ্পি। দিন শেষে তার রোজগার পাঁচশ বা তার কিছু বেশি। কিন্তু যেদিন কোনো দলের ক্রিকেট খেলা থাকে সেই দিন তার ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ক্রেতাকে পণ্য দেওয়ার ফাঁকেই পাশের সাধনা ঔষধালয়ে থাকা টিভিতে চোখ বুলিয়ে নেয়। তার দোকানের সামনে ফুটপথে দুপুর গড়াতেই এসে ভিড় করেন স্থানীয় কিছু লোক। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, সবাই যেন ক্রেতা। আর বাপ্পি ব্যস্ত বিক্রেতা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।

বাপ্পি ও তার দোকানের সামনে ভিড় করা তারুণ, ছাত্র কিংবা মাঝ বয়সী ব্যবসায়ীসহ যারা আছেন, সবাই টেলিভিশনে ক্রিকেট খেলা দেখেন আর বাজি ধরেন। তাদের বাজি টাকার অংক বেশ বড়।
কিন্তু নেশাটা ভয়ঙ্কর। অনেকেই ইতিমধ্যে সর্বস্ব খুইয়েছেন। এদের মধ্যে শহরের চৌরাস্তার তালুকদার ফার্মেসির ছেলে। বিশ্বরুপ জুয়েলার্সের ছেলে ইন্দ্রসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেট জুয়া খেলে নিঃশ্ব হয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে তাদের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। বরং নানা কায়দায় অর্থ সংগ্রহ করে প্রতিদিন ক্রিকেট বাজির নামে জুয়া খেলায় মেতে উঠেন। যশোর কোতয়ালি থানার সামনে দক্ষিন পাশে ফলের দোকান ও থানার উত্তর পাশে কাপুড়িয়াপট্টি, চুড়িপট্টি দিয়ে গড়ে উঠেছে ক্রিকেট জুয়ার সিন্ডিকেটটি। সিন্ডিকেটটি দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠলেও ঢাকায় ক্যাসিনো অভিযানের পর আত্মগোপনে চলে যায়। বর্তমানে ক্যাসিনো পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হওয়ায় ক্রিকেট জুয়ার সিন্ডিকেটটি আবারো প্রকাশ্যে এসেছে।

চলতি বিপিএল নিয়ে ক্রিকেট জুয়া নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায় তর্কবিতর্ক হতে দেখা যায়। স্থানীয় কয়েক জন ক্রিকেট জুয়াড়ির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা খেলা শুরুর আগে কত উইকেটে কোন্ দল জিতবে, কোন্ খেলোয়াড়ের কত ওভার মেডেন হবে, কত ওভারে কত রান হবে, কোন্ খেলোয়াড় হাফ সেঞ্চুরি বা সেঞ্চুরি করবে এসব বিষয়ে বাজি ধরা হয়। অনেক সময় বলে বলেও বাজি ধরা হয়। আর বাজির টাকা নগদে পরিশোধ করতে হয় সঙ্গে সঙ্গে। টাকা না থাকলে সুদে ঋণ দেওয়ারও ব্যবস্থা আছে।

শুধু বাপ্পি নয়, চৌরাস্তা বস্তা পট্টির মাসুদ, শহরের লালদীঘির পূর্বপাড়ের অজয়ের ছেলে সুজন, ও চৌরাস্তার শিপ্রা জুয়েলার্সের পিংকুসহ অনেকেই ক্রিকেট জুযার মতো বেআইনি অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। এখন ক্রিকেট জুয়া মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। ক্রিকেট জুয়ার ছড়াছড়ি সমাজের অভিজাত-শিক্ষিত শ্রেণি ছাড়িয়ে তরকারি বিক্রেতা, নাপিত, হোটেল কর্মচারী, ফল বিক্রেতা, বিভিন্ন পরিবহনের শ্রমিক (হেলপার ও কন্ডাক্টর) নির্মাণ শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার লোকেরা জড়িয়ে পড়ছে। বাদ পড়ছে না স্কুল ও কলেজগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও। কোনো কোনো অফিসেও নাকি সহকর্মীরা নিজেদের মধ্যে বাজি ধরছেন। ক্রিকেট জুয়ায় টাকা-পয়সা খুইয়ে আত্মহত্যার মর্মান্তিক খবরও শুনতে হয় কখনো কখনো।

অনেকে এও বলছেন, কিছু ক্রিকেট জুয়াড়ি জুয়ার টাকা যোগাতে গিয়ে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডেও জড়িয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে ক্রিকেট জুয়ার হারজিতকে কেন্দ্র করে পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে। জুয়া একটি ঘৃণিত ও গর্হিত কাজ। এটি একটি মারাত্মক সামাজিক অপরাধ। যশোরবাসি ক্রিকেট জুয়ার হাত থেকে বাঁচতে জুয়াড়িদের আটক করে সমাজে শান্তি শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন। ক্রিকেট জুয়া সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কোতয়ালি থানার ওসি তমিজুল ইসলাম বলেন, তদন্ত পূর্বক ঘটনার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password