মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ক্রিকেট খেলতে নেমেছে

মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ক্রিকেট খেলতে নেমেছে
MostPlay

বাংলাদেশ ক্রিকেট পাগল দেশ হিসেবে বেশ পরিচিত। বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট নিয়ে অনেক আবেগপ্রবন। আমরা আমাদের ক্রিকেট দলের জয়ে যেমন অনেক আনন্দ করি আবার হেরে গেলে অনেক কষ্ট পাই। আমাদের দেশের ক্রিকেট নিয়ে আমরা যেন একটু বেশি সিরিয়াস। ১৯৮৬ সালে পথ চলা শুরু করে আমাদের দেশের ক্রিকেট। অনেক সাফল্য ব্যার্থ্যতায় মোড়ানো আমাদের ক্রিকেট। ৩৪ বছরের পথচলায় ক্রিকেট আমাদের অনেক উৎসবের উপলক্ষ করে দিয়েছে আবার কিছু পরাজয় আমাদের অনেক ব্যাথিত করেছে। এমন কিছু পরাজয় নিয়ে বিডি টাইপের ধারাবাহিক আয়োজনের প্রথম তৃতীয় পর্ব আজ। লিখেছেন ফয়সাল আহমেদ শিহাব।  

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে আমাদের সেরা সাফল্য ২০১৫ বিশ্বকাপে। সেই বিশ্বকাপে আমরা কোয়াটার ফাইনালে উন্নত হয়েছিলাম। সেটাই আমাদের বিশ্বকাপে সেরা অর্জন অবশ্য সেই অর্জনটা আমরা আমাদের নিজেদের মাটিতে ২০১১ বিশ্বকাপেই করতে পারতাম। ২০১১ সালে যখন প্রথমবারের মতো আমরা বিশ্বকাপ আয়োজন করলাম তখন আমরা সবাই আশা করেছিলাম নিজেদের মাটিতেই আমরা প্রথম কোয়াটার ফাইনাল খেলবো কিন্ত আমরা সেই বিশ্বকাপে আমরা কোয়াটার ফাইনালে উঠতে ব্যার্থ হই তারচেয়ে বড় কথা হলো সেই বিশ্বকাপে আমরা ওয়েষ্ট ইন্ডিজের সাথে মাত্র ৫৮ রানে অলআউট হয়েছিলাম। ওয়েষ্ট ইন্ডিজের সাথে সেই হারটা বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের মন ভেঙে দিয়েছিল।আজ আমরা সেই পরাজয় নিয়ে আলোচনা করবো।

বিশ্বকাপে নিজ মাটিতে এমন একটি পরাজয়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না বাংলাদেশ। ২০১১ বিশ্বকাপে মিরপুরে সেটাই ঘটেছিল। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিজেদের সর্বনিম্ন রানের স্কোর গড়েই হেরেছে বাংলাদেশ। ২০১৫ বিশ্বকাপের সর্বনিম্ন ৫৮ রানে করে বাংলাদেশ হেরেছিল ৯ উইকেটের বিশাল ব্যাবধানে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের হাতে ছিল ২২৬ বল। যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালের স্বপ্ন দেখেছিল সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছেই রেকর্ড গড়ে হেরেছিল বাংলাদেশ। এই করুণ পরাজয়ের ফলে বাংলাদেশ মুলত কোয়ার্টার ফাইনালের উঠতে ব্যার্থ হয়েছিল।

সেই ম্যাচ হেরে বাংলাদেশের খেলোয়াড়য়েরা মানসিকভাবে অনেক ভেঙে গিয়েছিল। প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী ভারতের কাছে বাংলাদেশ ৮৭ রানে হারলেও লড়াই করে হেরেছে দ্বিতীয় ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ২৭ রানের ব্যবধানে হারিয়ে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। আশা ছিল এই ম্যাচটি জিতে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে কিন্তু বাংলাদেশ এতটাই বাজে ভাবে হেরেছিল যে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের কোন সামর্থ নাই বিশ্বকাপের মতো বড় ইভেন্টে কোয়াটার ফাইনাল খেলার। সেদিন যারা বাংলাদেশের ম্যাচ দেখেছিল তাদের কাছে মনে হতে পারে বাংলাদেশ বোধহয় প্রথমবারের মতো ক্রিকেট খেলতে নেমেছে।

সেদিন টসে জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়ে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। কোন ব্যাটসম্যানই দাঁড়াতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের সামনে। দলীয় আর ব্যক্তিগত শূন্য রানে দলের সেরা ওপেনার  তামিম ইকবাল কেমার রোচের বলে আউট হলে উইকেট পতন শুরু। একে একে সবাই তামিমের পথেই হেঁটেছিলেন। বোলারদের না বুঝেই খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। কেমার রোচ, ড্যারেন সামি আর সোলেমান বেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বোকা বানিয়ে একে একে তুলে নিয়েছিলেন উইকেটের পর উইকেট। ৪১ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ৫৮ রানে।

বাংলাদেশের পক্ষে তামিম, মুশফিক, শফিউল আর রুবেল রানের খাতা খুলতে পারেননি। নাইম ১ রানে, রাজ্জাক ২ রানে, রকিবুল ৪ রানে, ইমরুল ৫ রানে, আর অধিনায়ক সাকিব আউট হয়েছিলেন ৮ রান করে। এটাই ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং চিত্র। তবে জুনায়েদ ২৭ বলে ২৫ রান করে দলকে বিশ্ব রেকর্ডের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ খেলতে পারেনি তাদের নির্ধারিত ৫০ ওভার। মাত্র ১৮.৫ ওভারে বাংলাদেশ হারিয়েছে সবকটি উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সুলাইমান বেন ৪টি, কেমার রোচ আর ডারেন সামি নেন তিনটি করে উইকেট। বাংলাদেশের পক্ষে জুনায়েদ সিদ্দিকি সর্বোচ্চ ২৫ রান আর আশরাফুল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ রান করেন।অন্য কোন ব্যাটসম্যান ডাবল ফিগারে রান করতে পারেনি। দলের চার ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন শূন্য রানে।

জয়ের জন্য মাত্র ৫৯ রানের টার্গেট নিয়ে ব্যাট করতে নেমে ওয়েন্ট ইন্ডিজ ১২.২ ওভারে মাত্র এক উইকেট হারিয়ে ৫৯ রান করে ম্যাচ জিতে নেন ৯ উইকেটে। দলের পক্ষে ক্রিস গেইল ৩৭ রানে আর ব্রাভো ৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। স্মিথ আউট হয়েছিলেন ৬ রান করে। বিজয়ী দলের পক্ষে কেমার রোচ ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন। কেমার রোচ ১৯ রান দিয়ে নিয়েছে ৩ উইকেট। বাংলাদেশের পক্ষে নাইম ইসলাম ডেভোন স্মিথকে বোল্ড আউট করে একটি উইকেট নেন। এটাই ছিল বাংলাদেশের সান্ত্বনা।এখনো ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের এটাই সর্বনিম্ন স্কোর। এর আগে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর ছিল ১০৮ রান।

ম্যাচের আগে থেকেই ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছিলো বাংলাদেশের বোলিং যত শক্তিশালীই হোক না কেন তাদের লড়াই করার মতো পুঁজি দিতে হবে ব্যাটসম্যানদের। খুব বড় স্কোর গড়তে না পারলেও তা হতে হবে লড়াই করার মতো। পায়ে হেটে রিকশাকে কে হয়ত ধরা সম্ভব কিন্তু মোটরচালিত কোন যান কি ধরা সম্ভব? মোটেও না কিন্ত ব্যাটসম্যানরা সেদিন ছিলো পুরোপুরি ব্যার্থ।বিশ্বকাপের উইকেট আইসিসি তৈরি করে থেকে তাই উইকেটগুলো ব্যাটিং সহায়ক হয়ে থাকে। আইসিসি ইভেন্টগুলোতে এশিয়ার মাটিতে ২৭০-এর নিচে স্কোর করলে জেতার সম্ভাবনা থাকে ফিফটি কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কী করলেন? যা করলেন তা কি কেউ দুঃস্বপ্নেও ভেবেছিলেন? ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরাও কি ভেবেছিলেন তারা এত সহজে একটি জয় পেয়ে যাবেন? নিশ্চয়ই কেউ এমনটি ভাবেননি।খেলা শেষে গোটা দেশের মানুষ যখন লজ্জা আর হতাশায় ডুবে গিয়েছিল। ২০১১ বিশ্বকাপে সেই ম্যাচের পরে আমরা শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিলাম কিন্ত তাতেও লাভ হয়নি আমরা কোয়াটার ফাইনালে খেলতে পারি নাই।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password