স্টার্টাসে দুঃখ প্রকাশ করল এমএম কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক

স্টার্টাসে দুঃখ প্রকাশ করল এমএম কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক
MostPlay

স্বাধীন মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর থেকে:- ছাত্র শিক্ষকের মধুর সম্পর্ক অনেক পুরাতন।একজন শিক্ষক একটা ছাত্রের পিতা মাতার পরে অভিবাবকও বটে।সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে একটা ছাত্রকে সমাজ, দেশ তথা জাতীর কাছে শ্রেষ্ট উপহার হিসাবে তুলে দেন একজন আদর্শ শিক্ষক। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই শিক্ষকে আজ অপমানিত হতে হয় উঠতে বসতে। কিছু অসাধু শিক্ষকের কারণে যেমন কালিমা লেপটে গেছে পুরো শিক্ষক সমাজের কপালে তেমনি কিছু ছাত্র নামধারি বখাটে, অছাত্র, সন্ত্রাসীদের জন্যে বদনাম হচ্ছে পুরো ছাত্র সমাজের।

সরকারি এম এম কলেজের বাংলা বিভাগের সবার প্রিয় শিক্ষক জনাব মেহেদী হাসান ছাত্রদের অশোভন আচারণ দেখে ব্যথিত হয়েছেন। সাথে সাথে প্রতিবাদ নি করতে পেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেছেন সেই ঘটনার বিবরণ এবং মনের ভিতর জমানো কিছু কষ্টের কথা। নিম্নে পুরো স্টার্টাস টি তুলে ধরা হচ্ছে;

"অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে পৃথিবীতে আজ"
মেয়েকে  স্কুলে দিয়ে ৯.০০ টার ক্লাস নেওয়ার জন্য খুব দ্রুত যশোর সার্কিট হাউজ পাড়ার ভেতর দিয়ে কলেজে আসছি। পাড়ার ভেতরে চায়ের দোকাটি পার হতেই কানে আসলো মেহেদী যাচ্ছে, মেহেদী যাচ্ছে। ভাবলাম কোন সহকর্মী বোধ হয় চা খাচ্ছেন। পেছন ফিরে দেখি ইউনিফর্ম পরা একাদশ শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থী আর কুণ্ডলী পাকিয়ে পাকিয়ে উড়ছে সিগারেটের ধোঁয়া।

খুব দ্বিধায় পড়ে গেলাম, কী করব! এগিয়ে গিয়ে কী কিছু বলব সে শক্তি পেলাম না একেবারেই! কী নিরাপত্তা আছে আমার?  কোন শিক্ষক কী অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আহত হলে রাষ্ট্র স্বেচ্ছায় পাশে দাঁড়িয়েছে কখনো? এদেশে শিক্ষককে পা ধরে ক্ষমা চাইতে , কান ধরে ওঠবস করতে বাধ্য করার নজির আছে। বহু শিক্ষকের নকল প্রতিরোধ করতে গিয়ে কেন্দ্রের বাইরে মাথা ফেটেছে, রক্ত ঝরেছে। বহিরাগত সন্ত্রাসীদের / সব কালেই ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

একজনকেও স্বপ্রণোদিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করতে পারেন নি কখনো। উল্টো বিচারের আশায় আমার দেশের অভাগা শিক্ষকদের মানববন্ধন করতে হয়েছে। আমি সিগারেট খাওয়ার অপরাধে বা শিক্ষকের নাম ধরার অপরাধে কিছু বলতে গেলেও যদি মানসিক নির্যাতনের অপরাধে চাকরি হারায়! আমি তখন সরকারি হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলাম। একদিন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরএক অভিভাবক আমাকে ধরলেন আমি যেন তার ছেলেকে একটু চাপে রাখি, নেশার টাকা দিতে দিতে পরিবার শেষ হয়ে যাচ্ছে।

বললাম আপনার ছেলেকে আপনি জন্ম দিয়েছেন, খাওয়ায় -পরায়, বুকেপিঠে করে মানুষ করছেন আর আপনিই ভয় পান; সেখানে আমি ২৪ ঘণ্টায়( ছুটির সময় বাদে এবং চালু কালীন যদি ক্লাসে আসে তবেই )  ৪৫ মিনিটের একটি ক্লাস নিই মাত্র। আমার মুখের মিষ্টি কথা ছাড়া তো আর কোন উপায় জানা নেই। আমার জানা মতে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর বড় কোন অপরাধেও টিসি দেওয়ার ক্ষমতা (রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে) নেই বললেই চলে।

পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে দেখে সরল বিশ্বাসী (সমাজের চোখে আনস্মার্ট) শিক্ষকরাও ধীরে ধীরে স্মার্ট হয়ে যাচ্ছেন যা সত্যি সত্যি উদ্বেগের বিষয়। আর এ অবস্থার জন্যে রাষ্ট্র, সমাজ ও আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি দায়ী। এই যে শিক্ষাব্যাধি প্রাইভেট / টিউশুনির কথা বলেন সেটাও কিন্তু পুঁজিপতিদের সৃষ্টি। কেউ কেউ বলবেন আমার এগিয়ে গিয়ে কিছু বলা উচিত ছিলো। অনেকেই নীতি অনৈতিকতা, সাহসের প্রশ্ন তুলবেন। আমি তখন নিরব অভিমানেই মুখ ফিরিয়ে পা বাড়িয়েছি। বড্ড ভালোবেসেই এই পেশা গ্রহণ করেছিলাম, এখন পারিপার্শ্বিকতা দেখে মাঝে মধ্যে কিঞ্চিত থমকে যাই আর জীবনানন্দ আওড়াই -
'জীবনের এই স্বাদ-সুপক্ক যবের ঘ্রান হেমন্তের বিকেলের-  
 তোমার অসহ্য বোধ হ’লো;  
 মর্গে কি হৃদয় জুড়ালো  
 মর্গে - গুমোটে-  
 থ্যাঁতা ইঁদুরের মতো রক্তমাখা ঠোঁটে।'  

মো: মেহেদী হাসান 
প্রভাষক, বাংলা 
সরকারি এম এম কলেজ, যশোর 
যশোর : ০২/০২/২০২০

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password