ফিনল্যান্ডে পাঠানোর কথা বলে শতাধিক ব্যক্তির টাকা নিয়ে উধাও এজেন্সি

ফিনল্যান্ডে পাঠানোর কথা বলে শতাধিক ব্যক্তির টাকা নিয়ে উধাও এজেন্সি

ফিনল্যান্ডে যাবেন বলে রিক্রুটিং এজেন্সি মিনার ইন্টারন্যাশনালকে (আরএল-৫৪) তিন লাখ টাকা দেন সিয়াম। জমি বেচে ও সুদে ঋণ করে এই টাকা জোগাড় করেন ঢাকার কেরানীগঞ্জের এই বাসিন্দা। কিন্তু এক বছর পরও তিনি ফিনল্যান্ডে যেতে পারেননি।

মিরপুরের বাসিন্দা আজিজুল হাকিমেরও অবস্থা একই। তিনিও একইভাবে একই অঙ্কের টাকা দিয়েছেন মিনার ইন্টারন্যাশনালকে। আশায় থেকে থেকে এর মধ্যে তাঁরও এক বছর পার। সিয়াম ও আজিজুল বলছেন, মিনার ইন্টারন্যাশনাল তাঁদের ফিনল্যান্ডে পাঠানোর নামে টাকা নিয়ে ধোঁকা দিয়েছে।

সম্প্রতি এ বিষয়ে সিয়াম ও আজিজুল হাকিম প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বরাবর আলাদা দুটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগগুলোর বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। অভিযোগকারী দুজনের অভিযোগ, ফিনল্যান্ডে পাঠানোর নামে ওই রিক্রুটিং এজেন্সি অন্তত ১০০ জনের সঙ্গে একই প্রতারণা করেছে।

এ ব্যাপারে অনেক চেষ্টা করেও ওই এজেন্সির কারো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। ১৮ মার্চ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে সিয়ামের করা লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০২৩ সালের এপ্রিলে ফিনল্যান্ডে যেতে তিনি রিক্রুটিং এজেন্সি মিনার ইন্টারন্যাশনালকে তিন লাখ টাকা ও পাসপোর্ট দেন। প্রতি মাসে দুই লাখ টাকার বেশি বেতনের চাকরি দেওয়া কথা বলে এই টাকা নেয় তারা।

ফিনল্যান্ডে পাঠাতে এজেন্সি আট মাস সময় চায়। সাক্ষাৎকারের জন্য নয়াদিল্লিতে ফিনল্যান্ড দূতাবাসে সিয়ামকে পাঠাতে তারা ১০ হাজার টাকার চুক্তি করে। পরে ২৫ হাজার টাকা দাবি করে। এই টাকা দিতে অপারগতার কথা জানান তিনি। এখন সিয়াম এই রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে সব টাকা ফেরত চান। কিন্তু এজেন্সি টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এমনকি তারা সিয়ামের সঙ্গে যোগাযোগও করছে না।

সিয়াম বলেন, ‘ওই এজেন্সি আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমি আজও আমার সুদের টাকা দিতে পারছি না এবং গ্রামের বাড়িতেও যেতে পারছি না। আমার পরিবার এখন খুব অসহায় অবস্থায় আছে। আমি আমার সব টাকা ফেরত চাই।’

আজিজুল হাকিম তাঁর দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ফিনল্যান্ডে যেতে ওই এজেন্সিকে তিন লাখ টাকা ও পাসপোর্ট দেন। এজেন্সি তাঁকে ফিনল্যান্ডে পাঠাতে এক বছর সময় নেয়। এর মধ্যে ভারতে যেতে তারা আট হাজার করে দুইবারে ১৬ হাজার টাকা নিয়েছে।

ভারত থেকে আসার পর এজেন্সিটি আরো ছয় মাস সময় নেয়। কিন্তু প্রায় দেড় বছর পার হওয়ার পরও তাঁর ফিনল্যান্ডে যাওয়া হলো না। আজিজুল হাকিম বলেন, ‘তারা বারবার ঘুরিয়েও আমার টাকা দেয়নি। এখন আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখছে না—এমনকি ফোনও ধরছে না।’ সিয়াম ও আজিজুলের কাছ থেকে আরো অনেক ভুক্তভোগীর তথ্য পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে কেরানীগঞ্জের দুই ভাই মিরাজ ও স্বপন রয়েছেন। তাঁরা দুজন পাঁচ লাখ টাকা করে দেন বলে জানান। প্রতারণার একই অভিযোগ করেন ওই উপজেলার ফাহান, তাঁর বোন পপি ও ছোট খালা লামিয়া। এই তিনজনের ভাষ্য, ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে ফিনল্যান্ডে যাওয়ার কথা বলে অন্তত ১০০ জনের কাছ থেকে তিন লাখ করে টাকা নেন মিনার ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ডা. জে এস গাজী।

ফিনল্যান্ডে পাঠাতে কারো কাছে তিন মাস, কারো কাছে ছয় মাস, আবার কারো কাছে এক বছর সময় নেন তিনি। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও কাউকে ফিনল্যান্ডে পাঠায়নি এই এজেন্সি। এখন ফিনল্যান্ডে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা টাকা ফেরত চাইছেন। কিন্তু এজেন্সি নানা টালবাহানায় তাঁদের ঘোরাচ্ছে। অনেক ব্যক্তিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখছে না।

এমন প্রতিশ্রুতির বিষয়ে ওই এজেন্সি মালিকের সঙ্গে একজন ভুক্তভোগীর কথোপকথনের তথ্য-প্রমাণ  কাছে রয়েছে। সেখানে গত ফেব্রুয়ারি মাসে জে এস গাজী বলছেন, দুই দিনের মধ্যেই তাঁর টাকা তিনি পরিশোধ করবেন। কিন্তু তিন মাস পরও সেই টাকা পাননি বলে জানান ভুক্তভোগী ওই কর্মী।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মিনার ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ডা. জে এস গাজীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে বলে জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করছি। যারা সত্যিকারের দোষী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password