বস্তায় ভরে রাস্তায় ফেলে গেল শতবর্ষী বৃদ্ধাকে

বস্তায় ভরে রাস্তায় ফেলে গেল শতবর্ষী বৃদ্ধাকে

কনকনে ঠাণ্ডা। গভীর রাত। এই অবস্থায় শতবর্ষী এক বৃদ্ধাকে ছালার বস্তার মধ্যে ভরে রাস্তায় ফেলে যায় পরিবারের লোকজন। সারা রাত ওভাবেই পরে থাকেন। পরে পুলিশ গিয়ে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে।

ঘটনাটি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের। মঙ্গলবার রাতে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ বৃদ্ধার সৎ ছেলে ও নাতি জামাইকে আটক করেছে। শতবর্ষী বৃদ্ধার নাম হাসিনা বেগম (১০৫)।

পৌর শহরের ৪ নং ওয়ার্ডের চর জন্মেজয় এলাকায় থাকেন বৃদ্ধা হাসিনা বেগম। স্বামী আব্দুল খালেক মারা গেছেন ৩০ বছর আগে। একমাত্র মেয়ে জোসনাও মারা গেছেন বেশ ক’বছর হলো। নিজের ছেলে সাহিদ ও দুই সৎ ছেলে দুলাল (৬২), জালাল (৫৯) ও তাদের ছেলেমেয়ে ও বৃদ্ধার মেয়ে জোসনার ছেলে মেয়েরা নিজ নিজ সংসারে ভালোই আছে। কিন্তু তাদের কারও সংসারে শতবর্ষী বৃদ্ধার ঠাই হয়নি।

বৃদ্ধাকে খেতে-পরতে দিতে চায় না তার জীবিত কোনো সন্তান কিংবা সন্তানদের ছেলে-মেয়েরা। তাই কনকনে ঠাণ্ডা ও ঘন কুয়াশার মধ্যে মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দুরে গফরগাঁও-ভালুকা সড়কের ষোলহাসিয়া এলাকায় তিতাস গ্যাস অফিস সংলগ্ন একটি দোকানের সামনে হাসিনা বেগমকে ফেলে রেখে যায়।

বুধবার ভোরে একটি ছালার ভিতরে সারা শরীর ও বাইরে মুখ বের করা অবস্থায় হাসিনা বেগমকে দেখতে পথচারীরা। তা দেখতে পেয়ে তারা গফরগাঁও থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বৃদ্ধাকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। তার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু নেমে এসেছে। তিনি কি যেন বলতে চাইছেন। কিন্তু শতবর্ষী বৃদ্ধার ক্ষীণ কণ্ঠে তা বোঝা যাচ্ছে না। বৃদ্ধার বাড়ি হাসপাতাল থেকে আধা কিলোমিটারের মধ্যে হলেও বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নেওয়ার ৫ ঘণ্টার মধ্যে তার পরিবারের কোন সদস্য কিংবা কোন আত্মীয়স্বজন দেখতে হাসপাতালে যায়নি।

পুলিশ বৃদ্ধার সৎ ছেলে দুলাল (৬২) ও দুলালের মেয়ের জামাই আনোয়ার হোসেনকে (৪০) আটক করে থানায় নিয়ে আসে। বৃদ্ধার ছেলে সাহিদ ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া গ্রামে বাস করে।

স্থানীয়রা জানায়, ৩০ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ট করে সংসারের হাল ধরে রেখেছিলেন হাসিনা বেগম। এখন বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। চলাফেরাও করতে পারেন না তিনি। ছেলে ও পরিবারের লোকজনের কাছে হয়ত বোঝা হয়ে গেছেন তিনি।

গফরগাঁও থানার ওসি অনূকুল সরকার বলেন, এখন বৃদ্ধাকে তার ছেলেদের কাছে কিংবা নাতিদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। বৃদ্ধার যাতে কোন অযত্ন না হয় সেজন্য থানা পুলিশ তদারকি করবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password