পাটজাত পলিথিন আমাদের আবিস্কার, উৎপাদনে ব্যবহৃত মেশিনারিজ জার্মানীর।

পাটজাত পলিথিন আমাদের আবিস্কার, উৎপাদনে ব্যবহৃত মেশিনারিজ জার্মানীর।
MostPlay

পাটের তৈরী পলিথিন নিয়ে শুরুর দিকে গুঞ্জন থাকলেও দেশব্যাপী পাটজাত পলিথিনের ব্যবহারের ব্যপারে তেমন কোন অগ্রগতি আসেনি। এরই মধ্যে ২০২২ এর জুন নাগাদ সারা দেশে পাট পলি তথা সোনালী ব্যাগ ব্যবহারের কথা থাকলেও তা কতটা বাস্তবায়িত হবে তাই দেখার বিষয়।অবশ্য,বাংলাদেশ সরকার এ খাতের জন্য ৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। শুধু পাট না আলু তথা সেলুলোজ সর্মৃদ্ধ নানা উপকরণেই বায়োডিগ্রেডেবল পলিব্যাগ বাজার আনা সম্ভব।এছাড়া ওয়ান টাইম চামচ,প্লেট সহ নানা সরঞ্জাম বাজারে আনার ব্যপারে সমাজের শিল্পপতি এবং উদ্দ্যোক্তাদের আরো মনযোগী হতে হবে। দেশব্যাপি পলিথিন ব্যান করবার আগে প্রতিদিন পলি ব্যাগের চাহিদা ছিল প্রায় ৯৩ লক্ষাধিক পলিব্যাগ আর আজ তার চাহিদা প্রতিদিন ১.৫ কোটির বেশী।

বর্তমানে ব্যবহত পলিব্যাগের ৭০% ই একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়।২ বার ব্যবহার করা হয় ১০% এর ও কম।আর বারবার ব্যবহার করা পলিব্যাগের শতকরা হার মাত্র ৩ শতাংশের কিছুটা বেশী। এসব ওয়ান টাইম পলিব্যাগের নুন্যতম গড় আয়ু প্রায় ২০০ বছর।এসব ব্যাগ ই পরবর্তীতে নদী,পুকুরের নিচের স্তরে জমা হয়।অনেক সময় শহর এবং গ্রামাঞ্চলের সুয়ারেজ এবং ড্রেনেজ সিস্টেম ও ব্লক করে ফেলে।বর্ষাজুড়ে সৃষ্ট অসহনীয় জলাবদ্ধতার অন্যতম কারন হল পলিথিন ব্যাগ। শুধু তাই নয় কর্ণফুলি নদীর গভীর থেকে প্রতিবার প্রায় ১০ টনের মত পলিথিন বজ্র অপসারন করা হচ্ছে।যার অর্থ চট্টগ্রাম বন্দর তথা কর্নফুলি নদীর ড্রেজিং এর সাকার যন্ত্রে বারবার পলিথিন জাত বজ্র জমা হয়ে ড্রেজিং এর কাজ ও বিলম্বিত হচ্ছে। চিপস,লজেন্স,মেডিসিন সহ নানা খাতে পলিথিন এবং প্লাস্টিকের জিনিস ব্যবহার করা হওয়ার মুল কারন তা সহজলভ্য।

অন্যদিকে,সোনালী ব্যাগের আবিস্কার এবং মুল উপাদান পাট বাংলাদেশী পণ্য হলেও এখনো সোনালী ব্যাগের ব্যপারে কাস্টোমারদের আগ্রহ সীমিত। অন্যদিকে,এ ব্যাগের নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় মেশিন কিনতে হয় জার্মানী হতে। দেশের সকল পলিব্যাগ নিষিদ্ধ করে পাটজাত সোনালী ব্যাগের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করে সোনালি ব্যাগকে জনপ্রিয় করতে হবে। ছোট এ দেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ পলিথিন এবং প্লাস্টিকজাত বজ্র উৎপন্ন হয় তার বড় অংশকে রিসাইকেল করা সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায়,সোনালি ব্যাগের মার্কেটিং,উৎপাদন শিল্পে সরকারী-বেসরকারি সহায়তা প্রদান আবশ্যক। বায়োডিগ্রেডেবল এ ব্যাগগুলোকে দেশের প্রোডাক্ট প্যাকেজিং এ অর্ন্তভুক্তিকরণ জরুরী।আরো গবেষণার মাধ্যমে প্রোডাক্টের শেলফ লাইফ বৃদ্ধি করতে হবে।যাতে অন্তত নুন্যতম ৪-৫ দিন থেকে ২-৩ বছর পর্যন্ত এদের ''সেল্ফ লাইফ'' এক্সটেন্ড করা যায়।এতে জেনারেল প্যাকেজিং এর ক্ষেত্রেও প্লাস্টিক এবং পলিথিন ব্যবহারের প্রবনতা হ্রাস পাবে.. পুরো পৃথিবী যেখানে পরিবেশের ব্যপারে সচেতন হচ্ছে আমরা এখনো তার উলটো পথে হাটছি।পরিবেশ রক্ষা ছাড়া বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে রক্ষা করা অসম্ভব বিষয়।

তাই আমাদের সবাইকেই এ ব্যপারে এগিয়ে আসতে হবে যার কোন বিকল্প নেই।সবচাইতে দু:খের বিষয় এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টে এখনো সরকারী ফান্ডিং,প্রশিক্ষিত জনবল এবং মেশিনারিজের অভাব রয়েছে। আমাদের পলিসি থাকলেও কোন কিছুই এক অজানা কারনে সম্ভব হয়না।এমনকি সামনের কুরবানীর ঈদের সময় পলিথিন ব্যাগের রমরমা বাণিজ্য হতে চললেও সোনালী ব্যাগের মার্কেটিং এর ব্যপারে অথোরিটি এখনো উদাসীন।অথচ চাইলেই কোরবানীজাত মাংস সংরক্ষণের নিমিত্তে সোনালী ব্যাগের মার্কেটিং ক্যাম্পেইন করা যেত। সরকারী অফিসে অন্তত সোনালী ব্যাগের প্রচলন করা যেতে পারে পরীক্ষামুলকভাবে।এমনকি সরকার পরিচালিত TCB তে আজো পলিথিন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।কিন্তু এখানেও চাইলে সোনালী ব্যাগের ব্যবহার করা যেত।

পরিবেশের জন্য ১০০% ক্ষতিকারক এবং ১০০% উৎপাদন নিষিদ্ধ হওয়া সত্বেও বাজারে পলিথিন ব্যাগের অভাব নেই।পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানাও বন্ধ নেই।চাইলেই উৎপাদন সেক্টরে অন্তত ১০% সোনালী ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা যেত। ভাবতে অবাক লাগে,বিশ্বের সবচাইতে মানসম্পন্ন পাট উৎপাদনকারী বাংলাদেশের সোনালী ব্যাগে পটেনশিয়ালের অভাব না থাকা সত্বেও এ ব্যাগ নিয়ে অথোরিটি কিংবা ভোক্তা মহলে কোন চিন্তাই নেই।অথচ,এটি উদ্দ্যোক্তা এবং কৃষক আর পরিবেশ উভয়ের জন্যই একটি অনন্য সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। উল্লেখ্য,ইতিমধ্যে জাপানে শতাধিক কেজি পাটজাত সোনালী ব্যাগ রপ্তানী করা হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password