ঢেঁকি ও গাইন গ্রামগঞ্জে নজরে পড়েই না

ঢেঁকি ও গাইন  গ্রামগঞ্জে নজরে পড়েই না

অগ্রাহায়ণ-পৌষ মাসে কৃষকের ধান কর্তনের পর কিষানীদের ঘরে ঘরে ঢেঁকির শব্দ শোনা যেতো। কালের পরিবর্তনে ঢেঁকি ও গাইন এখন ঐতিহ্যের স্মৃতি। ঢেঁকি ও গাইন একই ধরনের কাজে ব্যবহৃত হতো শুধু পার্থক্যটা হলো আকার ও ব্যবহারের একটি দিক থেকে। ঢেঁকি চলতো পায় এ, কখনো একজন কখনো বা দুজন এবং সহকারী হিসেবে থাকত আরেকজন, ধান বা চালের গুড়ি ওলট-পালট করার জন্য।


তৃতীয় জন না থাকলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়া খাদ্যদ্রব্য গুলি একটি লম্বা কঞ্চির আগায় নারিকেলের ছোবড়া বেঁধে টেনে ঢেঁকির গর্তে দেয়া হতো। ঢেঁকি চালানোর জন্য গর্তের প্রয়োজন। এ গর্ত তৈরি করা হত বিশেষ পদ্ধতিতে। গর্ত থেকে যাতে মাটি উঠে না যায় সেজন্য ব্যবহার করা হতো ভাতের মাড় দেশি গাব এবং চালের তুষ বা কুড়া। আর গাইন বানানো হতো কাঠের গাছের গুঁড়ি দিয়ে।

গাছের তৈরি গোলাকার দুধ টি দণ্ড ব্যবহার করা হতো ধান ছাঁটাই বা চাল গুড়ি করার জন্য। এ কাজ কখনো একজন কখনো বা দুজন করতে দেখা যেত। ঢেঁকি একসময় নতুন ধান ঘরে উঠার পর চাল গুড়া করা, আটা দিয়ে পিঠা ফুলি, ফিন্নি, পায়েস তৈরি করার ধুম পড়ে যেতো।এছাড়াও নবান্ন উৎসব, বিয়ে, ঈদ ও পূজায় ঢেঁকিতে ধান ভেঙ্গে আটা তৈরির সময় গ্রামের বধূরা গান গাইতেন।চারিদিকে পড়ে যেতো হৈঁ-চৈঁ। কিন্তু কালের পরিবর্তনে ঢেঁকি ও গাইন যেন এখন শুধু ঐতিহ্যের স্মৃতি।

বধূরা কাজ করতো গভীর রাত থেকে ভোর সকাল পর্যন্ত। এখন ঢেঁকি ও গাইনের সেই ধুপধাপ শব্দ আর শোনা যায় না।আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন গ্রামে এগুলোর আর ছন্দময় শব্দ হারিয়ে গেছে।এরকম গান আর পাড়ায় মহল্লায় ও গ্রামগঞ্জে নেই। গাইন এখন ঢেঁকি ও গাইনের ব্যবহার নেই বললেই চলে। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে যেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানেও ঢেঁকি ও গাইনের ব্যবহার কমেছে।

তবুও গ্রামের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে কেউ কেউ সখের বেশে বাড়িতে ঢেঁকি রাখলেও এর ব্যবহার হয় না। এক সময় গ্রামীণ কৃষকেরা দারিদ্র নারীদের মজুরি দিয়ে ঢেঁকিতে চাল ও আটা বানিয়ে নিতো। এভাবেই চলত অনেক গরীব অসহায় মানুষের সংসার। তেল-বিদ্যুৎ চালিত বিভিন্ন মেশিন দিয়ে গ্রামগঞ্জে গিয়ে ধান ভাঙার কারণে ঢেঁকি ও গাইন, পালকির মত আজ বিলুপ্ত প্রায়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password