কোভিড-১৯ এবং ক্ষুধা

কোভিড-১৯ এবং ক্ষুধা
MostPlay

দেশে কোভিডের থার্ড ওয়েভ চলছে এতে কোন সন্দেহ নেই।কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে আসা রোগীদের মাঝে বর্তমানে প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি শনাক্ত হচ্ছে।বিগত কয়েকদিনে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর মিছিলে নামের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে যা ২০০ এর কাটা ছুইছুই করছে। যদিও আন-অফিশিয়ালি আরো কয়েকশন খানেক রোগী জ্বর-সর্দি আর শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গিয়েছেন।দেশের কোভিড সেন্টারগুলোতে বেড়েছে রোগীর চাপ,ধীরে ধীরে অক্সিজেন স্বল্পতার খবর ও সামনে আসছে।

এরই মাঝে শনাক্ত হওয়া কোভিড রোগীদের ৭০% শতাংশ ভারতের ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত।অন্যদিকে শহরের তুলনায় রোগী বেড়েছে গ্রামে।যাদের অনেকেই স্বাস্থ্যের ব্যপারে অসচেতন।অনেকেই কোনমতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে চিকিৎসা নিতে এলেও জেলা সদর হাসপাতাল এবং টারশিয়ারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে রেফার হতে গিয়ে অথবা চিকিৎসা নিতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন।

শাটডাউন কিংবা লকডাউন প্রথম কিছুদিন সফল হলেও কার্যত তা বর্তমানে ভংগুর অবস্থার শামিল। এমতাবস্থায়,সবচেয়ে বেশী বিপদে পড়েছে নিম্ন এবং মধ্য আয়ের মানুষ। এরই মধ্যে অক্সফার্ম সতর্ক করেছে,পুরো বিশ্বে কোভিডে মৃত্যু হারের চাইতে ক্ষুধা-দারিদ্রে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের হিসেবে পুরো বিশ্বে প্রতি মিনিটে ১১ জন করে শিশু এবং বৃদ্ধ খাদ্য সংকটে মারা যাচ্ছেন।বাংলাদেশ ও এর ব্যতিক্রম না।

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় স্বাধীনতার পর থেকে বিগত বছরগুলোতে প্রায় ২ কোটি লোককে নিম্ন শ্রেনী থেকে উত্তোরন করা হয়েছে। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চের পর থেকে এ কর্মসূচিগুলোর সুফল ফিকে হতে থাকে। এ কথা সত্য,বাংলাদেশ দরিদ্রপীড়িত জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন এনজিও এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসুচী এবং বিভিন্ন ভাতার মাধ্যমে যথাসম্ভব সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু,শুধুমাত্র এসব কর্মসূচি দিয়ে দিনের পর দিন জনগোষ্ঠীকে সাপোর্ট দেয়া প্রায় অসম্ভব।

কারন বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম,দুর্নীতি এবং কোনভাবে এসব কর্মসূচীতে বিনিয়োগের পরিমান কমে গেলেই তা সরাসরিভাবে সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেগেটিভ প্রভাব ফেলে। সামাজিক,রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ব্যবস্থাপনার অভাব ছিল। একই সাথে বাংলাদেশীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা বর্তমান কোভিড পরিস্থিতির ভয়াবহ হওয়ার অন্যতম কারন।এ বছর স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বাড়ানো হলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এখনো কাংখিত পুনর্গঠন সম্ভব হয়নি। আর পুনর্গঠন হলেও সামগ্রিকভাবে জনগনের স্বাস্থ্যবিধির প্রতি অনীহা এ খাতকে তেমন কোন সহযোগীতা করবেনা।

আইসিইউ,অক্সিজেন,হাসপাতালের বেডের চাহিদা বাড়লেও বাংলাদেশের পক্ষে এত বিশাল জনগোষ্ঠীকে সাপোর্ট করবার কোন ব্যবস্থা রাতারাতি নেয়া অসম্ভব বিষয়। শুধুমাত্রশাস্তি,জরিমানা কিংবা গ্রেফতার করে কোভিড-১৯ মোকাবেলা সম্ভব না,কেননা যতক্ষন অবধি বাংলাদেশ তার সকল নাগরিকের অন্তত দু'বেলা খাদ্যের সংস্থান করতে পারবেনা,ততক্ষন এ অবস্থার পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকবে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় মাস্ক সবচাইতে বড় অস্ত্র হলেও নানা কারনে অনেকেই তা পড়তে আগ্রহী না।এই সময়ে বিয়ের অনুষ্ঠান বেড়েছে,অহেতুক ঘোরাফেরা ও বেড়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতে হাসপাতালে বাচ্চার জন্ম হওয়া থেমে নেই।একই সাথে থেমে নেই মৃত্যুর মিছিল।

যেহেতু সরকারি এবং বেসরকারিভাবে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় পরিপূর্ণভাবে ১০০ ভাগ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া প্রাকটিক্যালি সম্ভব নয় তাই বর্তমানে শুধুমাত্র ভ্যাক্সিনেশনে মনযোগী হওয়ার কোন বিকল্প হাতে নেই। বয়োজ্যেষ্ঠদের এবং একই সাথে দুরারোগ্য ব্যাধীতে আক্রান্তদের সর্বপ্রথম ভ্যাক্সিনেশন করে দ্রুতগতিতে ভ্যাক্সিনেশন এর যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিভিন্ন দেশ থেকে কোভিড ভ্যাক্সিন আসছে এবং চীন থেকে আরও দেড় কোটি সহ অস্ট্রোজেনকা,মর্ডানা,ফাইজার প্রায় সকল ভ্যাক্সিন ই দেশে খুব দ্রুত পৌছেছে। মোবাইল ভ্যাক্সিনেশন ফ্যাসিলিটির মত ভ্যাক্সিনেশন সেন্টারে ভ্যাক্সিন দেয়ার মত বিষয় নিয়ে এখনই চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশের ভ্যাক্সিনেশন এর কোল্ড চেইন বর্তমানে যথেষ্ট শক্তিশালী। পোলিও সহ বাচ্চাদের EPI শিডিউল এর মতো করে ভ্যাক্সিনেশন শুরু করা এখন সময়ের দাবী।

শুধুমাত্র শাটডাউন রেখে এবং কল-কারখানা চালু রেখে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বাড়ছে।যারা মারা গিয়েছে তাদের চিন্তা রেখে আর নতুন মৃত্যু এবং আক্রান্ত হওয়ার হার কমাবার কোন বিকল্প নেই। দেশে আইসিইউ,ডাক্তার,নার্সের সংখ্যা সীমিত। ডাক্তার,নার্স,ব্যাংকার,ব্যবসায়ী,উকিল সহ অনেকেই অন্যদের দ্বারা কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই মারা গিয়েছেন। দেশের অর্থনীতি,বিনিয়োগ সহ অসংখ্য প্রতিভা এবং মেধা নীরবেই কোভিডে হারিয়ে যাচ্ছে।যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য ভাল কিছু নয়।

দেশের জনগনকে কোভিড-১৯ মুক্ত করতে হার্ড ইমিউনিটির কোন বিকল্প নেই।কিন্তু এটির জন্য গনহারে ভ্যাক্সিনেশন চালু করতে হবে।যত দ্রুত ভ্যাক্সিনেশন করা সম্ভব হবে তত দ্রুতই অন্তত একটি জীবন বাচানো যাবে।প্রতিটি জীবনই মুল্যবান।শুধুমাত্র জনচলাচল সীমিত করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোভিড নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password