বানরদেহে করোনাভাইরাস দেওয়ার পর আশ্চর্য ফল, জাগল আশা

বানরদেহে করোনাভাইরাস দেওয়ার পর আশ্চর্য ফল, জাগল আশা

করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারে বড় ধরণের সফলতা পেয়েছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। বানরের শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রবেশ করানোর পর বেশ ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। করোনায় সংক্রামিত হওয়ার পরে বানরের অ্যান্টিবডিগুলি বিকশিত হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। একই ফলাফল মানবদেহে পাওয়া যাবে কি-না সেটা এখনও প্রমাণিত হয়নি। তবে, বানর ও মানুষ একই শ্রেনীভুক্ত হওয়ায় মানবদেহেও কাজ করবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা যে বানরগুলির শরীরে করোনভাইরাস ইনজেক্ট করিয়েছিলেন তারা সবাই কোভিড -১৯ এ সংক্রমিত হয়েছে। এবং আশ্চর্যজনকভাবে বানরদেহে এই রোগ প্রতিরোধে কার্যকর এন্টিবডিগুলির বিকাশ ঘটেছে।
বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরির জন্য প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছেন। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ব্রিটেন ও ইসরাইলের বিজ্ঞানীরা প্রতিষেধক আবিষ্কারে সফলতার দাবি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে করোনার ভ্যাকসিন প্রদান। সোমবার (১৭ মার্চ) কেপিডাব্লিউআরআইয়ে (কেইসার পারমানেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট) প্রথম কোন মানবদেহে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। প্রথমবারের মতো সিয়াটলে এই ভ্যাকসিন নিয়েছে জেনিফার হেলারসহ চারজন স্বেচ্ছাসেবক। এবং প্রথম ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলি এক মাসের মধ্যে চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এর আগে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের একটি দল জানিয়েছে যে, তারা কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক তৈরিতে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে সফল হয়েছেন। বর্তমানে ভ্যাকসিনটি আরো উন্নত করার কাজ চলছে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনটি জুনের মধ্যে মানবদেহে পরীক্ষার (ট্রায়াল) জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
তবে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে রোগীদের করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল এসেছিল। এবং তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হযেছিল। তবে কিছুদিন পরেই তারা আবার করোনা পজেটিভ হয়ে হাসপাতালে ফিরে এসেছেন। যেটা বিজ্ঞানীদের সংশয় বাড়িয়ে দিয়েছে। যদি দেখা যায় যে, একই রোগীদের শরীরে একই ভাইরাস পুনরায় সংক্রমণ করেছিল, তবে ভ্যাকসিনগুলি কার্যকর প্রমাণিত হবে না। তবে চীনা একাডেমি অফ মেডিকেল সায়েন্সেসের একটি দল বানরের শরীরে যে পরীক্ষা চালিয়েছেন সেটার ফলাফল ইতিবাচক হলে এই ভয় দূর হয়ে যেতে পারে।
গবেষক দলটি চারটি রিসাস বানরকে কোভিড -১৯ ভাইরাস দিয়ে সংক্রমিত করার পর দেখা গেছে করোনা স্ট্রেনগুলো বানরের দেহে সাড়া দিচ্ছে। তিন দিন পরে প্রাণীগুলির মাঝে অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। বানরগুলো জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, তাদের ক্ষুধা কমে গেছে এবং ওজন হারাতে শুরু করেছে।
পরীক্ষার সপ্তম দিন, গবেষকরা বানরগুলির মধ্যে একটিকে আলাদা করে দেখেন সেটার শরীরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে এবং ফুসফুসের টিস্যুতে দৃশ্যমান ক্ষতিসাধন করেছে। একই সঙ্গে বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন বানরটির নাক থেকে মূত্রাশয় পর্যন্ত সারা শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। অবশিষ্ট বানরগুলো দ্রুত সুস্থ হযে উঠছে এবং তাদের মাঝে করোনার লক্ষণগুলি তেমন প্রকাশ পাচ্ছে না।
প্রায় এক মাস পরে বানরগুলিকে পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাদের মাঝে আর করোনাভাইরাস নেই এবং এক্স-রে করে দেখা যায় যে তাদের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি পুরোপুরি সেরে গেছে। বিজ্ঞানীরা বানরগুলির শরীরে অস্থায়ীভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি হতে দেখেছেন, এছাড়া বাকি সবকিছু স্বাভাবিক ছিল।
অবশ্য পরীক্ষার সময় দুটি বানর মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে মারা যায়। তবে ময়নাতদন্তে গবেষকরা তাদের দেহে কোন ভাইরাসের চিহ্ন খুঁজে পাননি।
এদিকে, দ্বিতীয় সপ্তাহের পরে বানরগুলির দেহে খুব উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবডি সনাক্ত করা হয়েছিল। যেটা এটা প্রমাণ করছিল যে বানরগুলোর দেহ ভাইরাস প্রতিরোধে প্রস্তুত ছিল। এটা থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে ভাইরাসগুলো একই দেহে একাধিকবার ফিরে আসতে পারে না। গবেষকদের যুক্তি, কিছু মানুষের শরীরে পুনরায় কোভিড-১৯ সনাক্তের বিষয়টি ভিন্ন কোন কারণে হতে পারে। এটা করোনা পরীক্ষার ত্রুটির কারণে হতে পারে। অথবা তাদের যখন করোনামুক্ত বলে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করা হয়েছিল তখনও হয়তো তাদের শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাসের উপস্থিতি ছিল।
বেইজিংয়ের একটি সরকারী হাসপাতালে কোভিড -১৯ রোগীদের দেখাশোনা করা একজন চিকিৎসক বলেছিলেন যে, এই পরীক্ষাটি অত্যন্ত মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করেছে। কারণ বানরগুলি জিনগতভাবে মানুষের কাছাকাছি। তবে বানরের উপর যা ঘটে তা সবসময় আমাদের শরীরে কাজ নাও করতে পারে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password