নওগাঁয় প্রতারণার অভিযোগে আটকের পর র‌্যাবের হেফাজতে নারীর মৃত্যু

নওগাঁয় প্রতারণার অভিযোগে আটকের পর র‌্যাবের হেফাজতে নারীর মৃত্যু

নওগাঁয় প্রতারণার অভিযোগে আটকের পর র‌্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে র‌্যাবের পক্ষে জানানো হয়েছে।

নিহত সুলতানার স্বজনদের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে র‌্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে তিনি মারা গেছেন। শনিবার (২৫ মার্চ) বিকেলে খাস-নওগাঁ মাঠে জানাযা নামাজ শেষে তাকে দাফন করা হয়েছে। এর আগে গত বুধবার (২২ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের মুক্তি মোড় এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এছাড়াও নওগাঁ জেলা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নির্বাহী সদস্য ছিলেন তিনি। জানা গেছে, ১৭ বছর আগে সুলতানার সঙ্গে তার স্বামীর সম্পর্ক বিছিন্ন হয়। এরপর সন্তান শাহেদ হোসেন সৈকতকে নিয়ে নওগাঁ শহরের জনকল্যাণ এলাকায় একটা ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। ছেলে সৈকতকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন।

নিহত সুলতানার মামা এবং নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক বলেন, তার ভাগনি বুধবার সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র‌্যাবের ১০ থেকে ১২ জন তাকে ধরে নিয়ে যায়। সুলতানার খোঁজে থানা, ডিবি পুলিশসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বিভাগে যোগাযোগ করেও তার সন্ধান পায়নি। ২/৩ ঘন্টা কোন খোঁজ ছিল না। দুপুর ১২টার পর জানতে পারেন, সুলতানাকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে তিনি র‌্যাবের লোকজন দেখেন। কিন্তু ভাগনি কোনো কথা বলতে পারছিলেন না। কিছুক্ষণ পর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, রামেক-এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়েছে বলে র‌্যাবের পক্ষে জানানো হলেও তার লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে শনিবার দুপুরের পর। তাকে র‌্যাবের কোনো ক্যাম্পে নেওয়া হলো, সে ব্যাপারে তারা কিছুই জানতেন না।

এ বিষয়ে র‌্যাব-৫ (রাজশাহী) কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস সাকিব গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, সুলতানার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার একটি অভিযোগ পায় র‌্যাব। তার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ ছিল। ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখে র‌্যাব অভিযোগের সত্যতা পায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র‌্যাবের হেফাজতে নেওয়া হয়। কিন্তু আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকেরা তাকে রাজশাহীতে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজশাহীতে নেওয়ার পর তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক করে তিনি মারা যান। আইনি প্রক্রিয়া শেষে শনিবার দুপুরে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মৌমিতা জলিল জানান, বুধবার দুপুরে র‌্যাবের লোকজন অসুস্থ অবস্থায় এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। জরুরি বিভাগে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ওই রোগীর হৃদরোগ শনাক্ত হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত রাজশাহীতে পাঠানো হয়। তিনি আরও বলেন, তার শরীরের কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল কিনা সেগুলো ক্ষতিয়ে দেখা হয়নি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফএম শামীম আহাম্মদ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ায় সিটি স্ক্যান করে তারা জানতে পেরেছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। তবে তার মাথায় ছোট্ট একটি লাল দাগ ছিল। শরীরে অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

নিহত সুলতানার ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আমার মা চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। র‌্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে র‌্যাবের কর্মকর্তা মেজর নাজমুস সাকিব বলেন, আটকের পর ওই নারীকে র‌্যাবের কোনো ক্যাম্পে নেওয়া হয়নি। আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর থেকেই তার পরিবারের লোকজন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার সঙ্গেই ছিলেন। নির্যাতনের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটা সঠিক নয়। নিহত সুলতানার মামা নাজমুল হক বলেন, সুলতানা ভূমি কার্যালয়ের একজন সামান্য কর্মচারী। কোনো দিন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ কেউ করেননি। সুলতানার মৃত্যুর ঘটনায় পারিবারিক ভাবে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password