চামড়া সংরক্ষরণে প্রস্তুতি নিচ্ছেন আড়তদাররা

চামড়া সংরক্ষরণে প্রস্তুতি নিচ্ছেন আড়তদাররা

আসন্ন কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে প্রস্তুত হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ চামড়ার আড়ত। ধুয়ে-মুছে ও রং করে নাটোরের চকবৈদ্যনাথ এলাকার আড়তগুলোকে প্রস্তুত করছেন ব্যবসায়ীরা। লবণের দাম বৃদ্ধি ও পাওনা টাকা নিয়ে কিছুটা সংশয় থাকলেও এবার পশুর চামড়ার ভালো বেচাকেনা হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তারা। চকবৈদ্যনাথ এলাকায় ছোট বড় মিলে প্রায় দুই শতাধিক চামড়ার আড়ত রয়েছে।

প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ৩০ থেকে ৩৫টি জেলার চামড়া এই আড়তে আসবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এবার ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়ার নির্ধারিত দাম ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। খাসির চামড়ার নির্ধারিত মূল্য ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়ার নির্ধারিত মূল্য ১২ থেকে ১৪ টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া দামেই চামড়া কিনবেন বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা। তবে লবণের দাম কমানোসহ নির্বিঘ্নে চামড়া পরিবহনে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এবার কোরবানিতে ১৫ লাখ পিস পশুর চামড়া এখানকার আড়তে কেনাবেচা হবে। তবে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে ৫০ কোটি ঢাকা বকেয়া পড়ে থাকায় ব্যবসায়ীরা পুঁজি সংকটে রয়েছেন।

এই টাকা পেলে পুঁজি সংকট দূর হয়ে যাবে।’ নাটোর বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক দিলরুবা দিপ্তি বলেন, ‘বর্তমানে নাটোরে লবণের চাহিদা ৭৫ মেট্রিক টনের বিপরীতে মজুদ রয়েছে ১০০ মেট্রিক টন। সাত দিন আগে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) লবণের দাম ছিল ৮৮০ থেকে ৯০০ টাকা। বর্তমানে প্রতিমণ লবণের দাম ৮৩০ থেকে ৮৪০ টাকা। ব্যবসায়ীদের জানান, ঈদের দুই সপ্তাহ আগে লবণের দাম কমাটা যেমন স্বস্তিদায়ক, অপরদিকে উদ্বেগেরও।

কেননা ঈদের দুই-একদিন আগেও হঠাৎ করে লবণের দাম বৃদ্ধির রেকর্ড রয়েছে। কী পরিমাণ কাঁচা চামড়া সংক্ষণ করা হবে তা ব্যবসায়ীরা নির্ধারণ করেন শিল্প মন্ত্রণালয় চামড়ার দাম বেঁধে দেওয়ার পর। ফলে লবণ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মূলত ঈদের দুই-একদিন আগেই।

চামড়ার আড়তদার হাজী লুৎফর রহমান বলেন, ‘যেহেতু কোরবানির ঈদ তীব্র গরমের মধ্যে, সেহেতু চামড়া সংরক্ষণে প্রচুর লবণের প্রয়োজন হবে। বলা হচ্ছে, এবার লবণের সরবরাহ বেশি। অথচ লবণের দাম কাঙ্খিত হারে কমছে না। ফলে ব্যবসায়ীরা শুরুতেই বড় ধাক্কা খাচ্ছেন। লবণের সিন্ডিকেট ভেঙে দিলে ব্যবসায়ীরা কিছুটা উপকৃত হবেন।’ চামড়া ব্যবসায়ী হালিম সিদ্দিকী বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত চামড়া ও লবণের দামে সামঞ্জস্য থাকা দরকার।

সেই সঙ্গে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। সিন্ডিকেট মূলত টার্গেট করে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। তারা (মৌসুমি ব্যবসায়ী) না বুঝে, কী পরিমাণ চামড়া তারা সংগ্রহ করবে তার হিসেব না করে বিপুল পরিমাণে লবণ মজুত করেন। তখন লবণের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। মৌসুমি ব্যবসায়ী না, আড়তদার ও অনান্য ব্যবসায়ীরা চামড়া সংরক্ষণ করে। তাই সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া।’

চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি এসএম মকছেদ আলী বলেন, ‘বর্তমান বাজারমূল্যে একটি খাসির চামড়া প্রক্রিয়াজাতের জন্য অন্তত ১ কেজি লবণ ব্যবহার করতে হবে। অনান্য প্রক্রিয়া খরচ শেষে একটি চামড়ার দাম হওয়া উচিত ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। অথচ খাসির চামড়ার দাম ২০ থেকে ২৫ টাকার বেশি নয়। চামড়া শিল্পের গুরুত্ব আলাদাভাবে বিবেচনা করতে হবে। শুধু চামড়ার জন্য ভর্তুকিমূল্যে লবণ সরবরাহ করা উচিত।’

তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকরা কিছু টাকা পরিশোধ করবেন বলে জানিয়েছেন। বিভিন্নভাবে চামড়া ব্যবসায়ীরা টাকা সংগ্রহ করছেন। আশা করা হচ্ছে, চামড়া সংগ্রহে কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে না। এবছর ১৫ থেকে ১৬ লাখ পিস কোরবানির চামড়া বেচাকেনা হবে। যার মূল্য ৫০০ কোটি টাকা।

জেলায় লবণের সরবরাহকারী একতা ট্রেডার্সের মালিক দীলিপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘বর্তমানে জেলায় চাহিদার তুলনায় কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতের লবণের সরবরাহ বেশি আছে। ফলে লবণের কোনো ঘাটতি হবে না। দামও বাড়বে না। বর্তমানে লবণের দাম নিম্নমুখী।’ নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, ‘দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও ঐতিহ্যবাহী আড়তে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা যাতে নিরাপদে এবং নির্বিঘ্নে চামড়া বেচাকেনা করতে পারেন সেজন্য পুলিশ তৎপর থাকবে।

কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’ নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভুঁইঞা বলেন, ‘লবণ ব্যবসায়ী ও চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত লবণ থাকায় আমরা আশা করছি, দাম বৃদ্ধিজনিত কোনো সংকট সৃষ্টি হবে না। এছাড়া এবারই প্রথম চামড়া সংগ্রহে সক্ষম মাদরাসা ও এতিমখানায় জেলা প্রশাসন ও বিসিক থেকে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করা হবে।’

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password