চীনে করোনা ভাইরাস আতঙ্কে গৃহবন্দি কয়েকশত বাংলাদেশি

চীনে করোনা ভাইরাস আতঙ্কে গৃহবন্দি কয়েকশত বাংলাদেশি

বিশ্বব্যাপী নতুন আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। মানুষ থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে চীনের হুবেই প্রদেশের থেকে দেশটির সব অঞ্চল এমনকি বিশ্বের ১২টি রাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাসটির শনাক্তস্থলে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছেন হাজারো মানুষ।

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি নিউজ বলছে, শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাত পর্যন্ত ভয়াবহ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৬০ জনে পৌঁছেছে। তাছাড়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২৮৭ জনে পৌঁছেছে। যদিও বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক।

চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। যে কারণে কর্তৃপক্ষ উহান থেকে বহির্গামী সব যানবাহন চলাচল আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে। আর এতেই আটকা পড়েছে শহরটিতে অবস্থানরত প্রায় পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।

রাকিবিল তুর্য (Rakibil Turja) নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর পোস্ট থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। তুর্য হুবেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে পড়াশোনা করেন। বর্তমানে তিনি উহান শহরে বসবাস করছেন।

শনিবার স্থানীয় সময় ভোর চারটা ৪৮ মিনিটে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে তিনি পোস্টটি করেন। সেখানে তুর্য লিখেছেন, ‘সম্প্রতি চায়নাতে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শহর উহানে আমি বাস করছি। এখানে আমরা প্রায় পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি উহানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচ.ডি প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত। উহান থেকে বহির্গামী সব বাস-ট্রেন ও বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন মারা গেছে এবং ৬০০-এরও বেশি মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছে।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমরা চাইলেও এখন নিজ দেশে ফিরে যেতে পারছি না। বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আমাদের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে এমন নিউজ বাংলাদেশের মিডিয়াতে প্রচার করা হলেও এ খবর ভিত্তিহীন। আমাদের এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি। আমরা সবাই এক কঠিন মুহূর্ত পার করছি। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সবাইকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করেন।’

এ দিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নতুন একটি হাসপাতাল নির্মাণ শুরু করেছে চীন। মাত্র ১০ দিনের মধ্যে হাসপাতালটি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার উপযোগী হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। খবর সিএনবিসি।

সংবাদমাধ্যমটিতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ২৫ হাজার বর্গফুটের হাসপাতালটিতে শয্যা সংখ্যা থাকবে এক হাজার। আর আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে হাসপাতালটিতে রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন।

অপর দিকে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ ভাইরাস মানুষ ও প্রাণীদের ফুসফুসে সংক্রমণ করতে পারে। ভাইরাসজনিত ঠাণ্ডা বা ফ্লুর মতো হাঁচি-কাশির মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাস। এ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার প্রধান লক্ষণগুলো হলো- শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি। শরীরের এক বা একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিষ্ক্রিয় হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে।

সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো ভাইরাসটি নতুন হওয়ায় এখনো কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা। তাই মানুষের শরীরে এমন উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চীনা বিজ্ঞানীরা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password