চিকিৎসার বদলে ঝাড়ফুঁক, মালদহে কুসংস্কারের বলি ২ শিশু

চিকিৎসার বদলে ঝাড়ফুঁক, মালদহে কুসংস্কারের বলি ২ শিশু

কুসংস্কার মুক্ত করার জন্য যতই সচেতনতার প্রচার চালানো হোক না কেন, আমরা যে তিমিরে, সেই তিমিরেই যে রয়েছি, আবারও তার প্রমাণ মিলল মালদহে। অন্ধ কুসংস্কারের বলি হতে হল নিষ্পাপ দুটি শিশুকে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরও দু’জন শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনাটি মালদহের গাজোল ব্লকের আলাল গ্রাম পঞ্চায়েতের কদমতলীর। জানা গিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সফিকুল ইসলাম (৬), মহম্মদ ফিরোজ (৮), কোহিনুর খাতুন (৭) ও শাবনুর খাতুন (৩) নামক চার শিশু বিকালে খেলতে যায়। খেলা শেষ করে বাড়ি ফেরার পর চারজনই অসুস্থ বোধ করে। ঘন ঘন বমি পেটব্যথা হচ্ছিল, সঙ্গে ছিল মাথাব্যাথা। অসুস্থ বুঝেও তাদের ‘ভূতে’ ধরেছে বলে চিকিৎসকদের কাছে না গিয়ে বাড়িতে ওঝা ডেকে ওই শিশুদের ঝাড়ফুঁক করানো হয়। ঘণ্টা দুয়েক অসুস্থ ওই চার শিশুদের উপর ঝাড়ফুঁক চালানো হয় বলে জানা গিয়েছে। নাগাড়ে ঝাড়ফুঁকের ফলে একসময় নেতিয়ে পড়ে শিশুগুলি। ক্রমাগত শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে বুঝে অবশেষে তাদের মালদহ মেডিক্যাল হাসপাতালে আনা হয়। ততক্ষণে অবশ্য অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় ফিরোজের। বাকি তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ ভোরে তাদের মধ্যে আরও এক শিশু মহম্মদ সফিকুলেরও মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। ঘটনাস্থলে কারণ অনুসন্ধানের জন্য গিয়েছে মেডিক্যাল টিম।
চিকিৎসকদের দাবি, খাদ্যে বিষক্রিয়া থেকেই এই দুর্ঘটনা। মনে হচ্ছে শিশুগুলি কোনও বিষ ফল খেয়ে থাকতে পারে আবার, এরা সকলেই একই পরিবারের সদস্য বলে বাড়িতেও খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়ে থাকতে পারে৷ যে দু’জন শিশুর চিকিৎসা চলছে তারা চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে বলেও জানান তাঁরা।
এদিন মৃত এক শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে ঝাড়ফুঁকের তত্ত্ব সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়ে জানানো হয়, বিকালে শিশুটি অসুস্থ বোধ করলে তাঁরা স্থানীয় এক চিকিৎসককেই ডেকে পাঠান এবং তাঁর পরামর্শ মতোই মালদহ মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনও রকম ঝাড়ফুঁক করা হয়নি বলেও দাবি তাঁদের। তবে যে স্থানীয় ডাক্তারকে বাড়িতে ডেকে আনা হয়েছিল তিনি ঝাড়ফুঁকও করেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন।
ঘটনার পর স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক দিপালী বিশ্বাস শনিবার ওই গ্রামে যান। শিশুদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুদেরও দেখতে যান তিনি। তৃণমূল বিধায়ক বলেন, "কুসংস্কার থেকেই এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে। না হলে এমন হতে পারে! শিশুদুটি প্রাণে বেঁচে যেতে পারত যদি ওঁদের বাবা-মায়েরা ওঝার কাছে না নিয়ে গিয়ে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতেন। আমি গ্রামবাসীদের সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলেছি, ওনাদের বুঝিয়েছি এই ধরনের কুসংস্কার বা অন্ধবিশ্বাস থেকে সরে আসার জন্যে"।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password