বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবি

বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবি
MostPlay

তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহ (রা.)
সাঈদ বিন জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আবু বকর জান্নাতি। ওমর জান্নাতি। ওসমান জান্নাতি। তালহা জান্নাতি।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৫৩৪)।

পূর্ণ নাম তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহ। উপনাম জায়েদ। জন্ম আনুমানিক ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দ। (৬৫৬ সালের ৭ ডিসেম্বর মৃত্যুর সময় তালহার বয়স ছিল চান্দ্র সন অনুযায়ী ৬৪ বছর। ফলে তার জন্মসাল ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দের দিকে ধরা হয়)। জন্মস্থান মক্কা। তিনি রাসুল (সা.) এর একজন ঘনিষ্ঠ সাহাবি ছিলেন। ওহুদের যুদ্ধ ও জঙ্গে জামালে (উটের যুদ্ধে) অংশগ্রহণের জন্য তিনি অধিক পরিচিত। দ্বিতীয় যুদ্ধে তিনি শাহাদতবরণ করেন। ৬৫৬ সালের ৭ ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন।

জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.)

সাঈদ বিন জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আবু বকর এবং ওমর জান্নাতি। আলী জান্নাতি। তালহা জান্নাতি এবং জুবারের জান্নাতি। (মুসনাদে আহমদ : ১/১৮৭; আবু দাউদ : ৪৬৫০)।

পূর্ণনাম জুবাইর ইবনুল আওয়াম। উপনাম হাওয়ারিয়্যু রাসুলিল্লাহ। জন্মকাল হিজরতের ২৮ বছর আগে। বাবা আওয়াম। মা সাফিয়্যা বিনতে আবদুল মুত্তালিব। প্রথম পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.) অন্যতম। তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন।

হজরত জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.) ছিলেন দ্বীনের ব্যাপারে অত্যন্ত সাবধানী একজন সাহাবি। তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হওয়া সত্ত্বেও খুব কমসংখ্যক হাদিস বর্ণনা করেছেন। দানশীলতা, উদারতা, আমানতদারিতা, পরোপকারিতা ইত্যাদি গুণে তিনি ছিলেন গুণান্বিত। প্রথম পর্বে যারা ইসলাম কবুল করেছিলেন, তাদের সবার মতো হজরত জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.)ও কাফের-মোশরেকদের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি। তার চাচা তাকে ইসলামের পথ থেকে বিচ্যুত করতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেনি।

অবশেষে দ্বীন ও ঈমান রক্ষার তাগিদে জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করেন। তিনি হাবশায় হিজরত করেন। হাবশায় কিছুকাল অবস্থান করেন। অতঃপর ফিরে আসেন মক্কায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরত করার পর, তিনিও মদিনায় হিজরত করেন। মক্কায় অবস্থানকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হজরত জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.) এবং তালহা (রা.) এর মাঝে দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দিয়েছিলেন। হজরত জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.) অল্প বয়সে ইসলাম গ্রহণ করলেও ইসলামের জন্য নিজ জীবনকে বাজি রাখতে তিনি ছিলেন অগ্রগামী।

দুঃসাহসী একজন মর্দে মুজাহিদ ছিলেন হজরত জুবাইর (রা.)। বদর যুদ্ধে তিনি অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। শত্রুপক্ষের কাছে ‘জুবাইর’ নামটাই ছিল মারাত্মক ত্রাস সৃষ্টিকারী। তিনি যেসব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, সেসব ক্ষেত্রে শত্রুদের প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন। হজরত জুবাইর (রা.) এর শাহাদতের সনটি ছিল হিজরি ৩৬। শাহাদতের পর তার লাশ ‘আসা সিবা’ উপত্যকায় দাফন করা হয়।

আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘… এবং আবদুর রহমান ইবনে আউফ জান্নাতি।’ (মুসনাদে আহমদ : ১/১৮৮; আবু দাউদ : ৪৬৪৯)।

তার মূল নাম ছিল আবদুল আমর বা আবদুল কাবা। ইসলাম গ্রহণের পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নাম রাখেন ‘আবদুর রহমান’। ডাক নাম আবু মুহাম্মাদ। জন্মকাল আনুমানিক ৫৮০। জন্মস্থান মক্কা। বাবা আওফ। মা শেফা। তার মা-বাবা উভয়েই ছিলেন ‘জোহরি’ নামক গোত্রের। আবু বকর (রা.) আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) কে ইসলামের বিষয়ে বলেন এবং হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আমন্ত্রণ জানান। এখান থেকেই হজরত আবু বকর (রা.) এর দাওয়াতে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাজির হন এবং ইসলাম কবুল করেন। আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী প্রথম আটজনের মধ্যে অন্যতম।

আবদুর রহমান (রা.) এর বিচক্ষণতার জন্য, তার সিদ্ধান্তের কারণে অনেক বড় দুর্ঘটনা থেকেও মুসলিম সমাজ রক্ষা পেয়েছে। যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে। তিনি মদিনাবাসীর জন্য বেশ খরচ করতেন। রাসুল পরিবারের সঙ্গে তার ছিল সুসম্পর্ক। তিনি ছিলেন দুনিয়া বিরাগী। ছিলেন অত্যন্ত ধৈর্যশীল। আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) ৩৩ হিজরি মোতাবেক ৬৫৩-৬৫৪ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমান জর্ডানের আম্মানে তাকে দাফন করা হয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password