তামিমের সেঞ্চুরীতে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ

তামিমের সেঞ্চুরীতে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ
MostPlay

অধিনায়ক তামিম ইকবালের সেঞ্চুরীতে ওয়ানডে সিরিজের ৩য় ও শেষ ম্যাচেও জয় তুলে নিয়ে ওয়ানডে সিরিজে স্বাগতিক জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে ৫ উইকেটে জয় পেয়েছে টাইগাররা। আফ্রিকার দেশটিকে তাদের মাটিতে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ। এই নিয়ে দেশের বাইরে প্রতিপক্ষকে তৃতীয়বার হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ পেল টাইগাররা। ২০০৯ সালের পর বিদেশের মাটিতে প্রতিপক্ষকে প্রথমবার ধরলধোলাই করলো বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের পঞ্চাশতম ওয়ানডে জয়।

হারারে ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মঙ্গলবার সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে প্রথমে জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমে সাবধানী শুরু করে জিম্বাবুয়ে। রেগিস চাকাবা ও তাদিওয়ানাশে মারুমানির ব্যাটিংয়ে দলের রান বাড়ান। দুই ওপেনারের জুটি বড় হতে থাকলে সাকিবকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন তামিম। নবম ওভারে বোলিংয়ে এসেই ব্রেক থ্রু দেন সাকিব। তার বল সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন ৮ রান করা তাদিওয়ানাশে মারুমানি। ২য় উইকেটে মিডল অর্ডার থেকে ওপেনিংয়ে উঠে আসা চাকাভার সঙ্গে ৪২ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর। এ জুটি ভাঙেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দীর্ঘদিন পর বল হাতে নিয়ে জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ককে ফেরান তিনি। ৩য় উইকেট জুটিতে ৭১ রান পায় স্বাগতিকরা। এবারও ব্রেক থ্রু এনে দেন রিয়াদ। মেয়ার্সকে তিনি ফেরান ৩৪ রানে। আগের ম্যাচে ফিফটি হাঁকানো মাধভেরেকে ফেরান মুস্তাফিজ। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ওয়েসলে মাদভেরে (৩)। মোস্তাফিজুর রহমানের স্লোয়ার বুঝতে না পেরে ব্যাট পেতে দিয়ে মিডউইকেটে সাকিবের ক্যাচ হন তিনি। সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন রেগিস চাকাভা। কিন্তু তাসকিনের গতিতে পরাস্ত হয়ে সাজঘরে ফেরেন। তাসকিন পান ম্যাচের প্রথম উইকেট। ৯১ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৮৪ রান করে বিদায় নেন চাকাভা।

এরপর রায়ান বার্ল ও সিকান্দার রাজা আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী শুরু করেন। দুজনেই তুলে নেন ফিফটি। দুজনে মিলে মাত্র ৮০ বলে ১১২ রানের জুটি গড়েন। মোস্তাফিজের বলে মোসাদ্দেক হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে রাজার ব্যাট থেকে আসে ৫৪ বলে ৫৭ রান। পুরো ম্যাচে হতাশ করা সাইফউদ্দিন ৪৯তম ওভারে পর পর দুই বলে বার্ল (৫৯) ও ডোনাল্ড তিরিপানোকে বিদায় করেন। হ্যাটট্রিকের দেখা না পেলেও ওই ওভারের শেষ বলে টেন্ডাই চাতারাকে বোল্ড করে ফেরান ডানহাতি পেসার। ১৪ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। নির্ধারীত ৫০ ওভারের ৩ বল বাকি থাকতে ২৯৮ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। বল হাতে ৩টি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন সাইফউদ্দিন ও মোস্তাফিজ। ২ উইকেট গেছে মাহমুদউল্লাহর ঝুলিতে। ২৯৯ রানের বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং লিটন দাসের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা করে বাংলাদেশ। দুজনের জুটিতে ৮৮ রান উঠতেই তামিমের সঙ্গ ছাড়েন লিটন। মাধেভেরের স্পিনে মারুমানির ক্যাচে বন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই টাইগার ওপেনার। আউট হবার আগে ৩৭ বলে ৩২ রান তোলেন লিটন। তারপর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৬৯ রানের আরেকটি জুটি তামিমের। সেই জুটিটি ভেঙেছেন লুক জঙ্গি। জিম্বাবুইয়ান পেসারের স্লোয়ার এক ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ সাকিব। ৪২ বলে একটি করে চার-ছক্কায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে আসে ৩০ রান। সাকিব বিদায় নেওয়ার আগেই আগ্রাসী ব্যাটিং করে তামিম তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৪তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। মাত্র ৮৭ বল খেলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় তিন অংকে পৌঁছান তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তামিমের ১৪তম সেঞ্চুরি। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪র্থ।

সেঞ্চুরীর পর বেশিদূর যেতে পারেননি তামিম। তিরিপানোর বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক চাকাভার হাতে ক্যাচ দিলে শেষ হয় তার ৯৭ বলে ১১২ রানের ইনিংস, যেখানে ৮টি চার ও ৩টি ছক্কার মারও আছে। তারপরের বলেই মাহমুদউল্লাহ হাঁটেন ড্রেসিং রুমের পথে। টিরিপানোর পরের বলেই আউট হয়ে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। এক ওভারে দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে যখন বিপদে পড়ে বাংলাদেশ, তখন মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে হাল ধরেন সোহান। পঞ্চম উইকেটে মিঠুনের সঙ্গে গড়েন ৫৪ বলে ৬৪ রানের জুটি। যাতে মূল অবদান সোহানেরই (৩৯)। মিঠুন খেলেছেন ভীষণ ধীরগতিতে। একের পর এক শট খেলতে গিয়ে মিস করেছেন। একদমই আত্মবিশ্বাসহীন মনে হচ্ছিল তাকে। ২৬৮ রানে রেখে মাধেভেরের বলে চাতারার হাতে ক্যাচ তুলে দিলে শেষ হয় তার ৫৭ বলে মাত্র ১ চারে সাজানো ৩০ রানের ইনিংস। শেষ ৬ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৩০ রান। দির্ঘদিন পর বলে ফিরে দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন নুরুল হাসান সোহান। ৩৯ বলে ৪৫ রান অপরাজিত থাকেন তিনি। এদিকে আফিফ অপরাজিত ছিলেন ১৭ বলে ২৬ রানে।

ম্যাচ সেরার পুরষ্কার জিতেছেন তামিম ইকবাল এবং সিরিজ সেরার পুরষ্কার জিতেছেন সাকিব আল হাসান। ৩-০ ব্যাবধানে সিরিজ জেতায় আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের ৩০ পয়েন্টের সবকটি পেল বাংলাদেশ। বর্তমানে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password