ঈশার মা ছিলেন গুজরাতের সম্পন্ন ব্যবসায়ীর পরিবারের মেয়ে। তার বাবা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অস্ট্রেলীয় নাগরিক। এসেছিলেন বৌদ্ধধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করতে। পরিবারের অমতেই আর্থিক ভাবে দুর্বল এই বুদ্ধভক্তকে বিয়ে করেছিলেন ঈশার মা।
১৯৮৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঈশার জন্ম দিল্লিতে। শৈশব থেকেই তিনি অভাব দেখতে অভ্যস্ত। পাশাপাশি দেখেছেন সংসারে অনটনের দুঃখকে ভুলিয়ে দেয় নাচগানের সুর ও ছন্দ। অর্থের জন্য নয়, তিনি আজও নাচেন নিজের প্যাশনের জন্য।
পাঁচ বছর বয়সে বাবা মায়ের সঙ্গে ঈশা তার বাবা মায়ের সঙ্গে চলে গিয়েছিলেন বৃন্দাবন। সেখানে ঈশার কৃষ্ণভক্ত মা দক্ষা শেঠ বৈষ্ণব ধর্ম নিয়ে গবেষণা করতেন। বৃন্দাবন মন্দিরের স্মৃতি তার জীবনে বড় জায়গা নিয়ে আছে। পরবর্তী সময়ে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন ঈশা।
বৃন্দাবনে কয়েক বছর কাটানোর পরে ঈশার পরিবার ব্যাঙ্গালুরু হয়ে কেরলে চলে যায়। বার বার ঠিকানা পরিবর্তনের পরে ঈশার স্কুলজীবন শুরু হয় বেশ দেরিতে। তিনি প্রথম স্কুলে যান ৯ বছর বয়সে। আড়াই বছর পরে তাকে ভর্তি করা হয় অন্য স্কুলে। কিন্তু স্কুলজীবন তার ভালো লাগতো না। বরং তিনি আনন্দ খুঁজে পেতেন নাচের মধ্যেই।
নাচের ধারা ঈশা পেয়েছিলেন নিজের মা দক্ষার কাছ থেকে। তার মা ছিলেন পণ্ডিত বিরজু মহারাজের শিষ্যা। মায়ের সংস্থায় নৃত্যজীবন শুরু হয় ঈশার। কিন্তু তার মায়ের কড়া নির্দেশ ছিল, দলের বাকি সদস্যদের মতো তাকেও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বাড়তি কোনও সুবিধা পাবেন না।
ভোরে উঠে কঠোর অনুশীলন। তারপর পড়াশোনা। শৈশব থেকে এভাবেই বড় হয়েছেন ঈশা। শৈশবে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা হয়তো করতে পারেননি। কিন্তু তার বদলে নাচের কাছ থেকে পেয়েছেন শৃঙ্খলা আর নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা। নিজের কথা বলতে গিয়ে বার বার নৃত্যশিক্ষার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।
১১ বছর ধরে তিনি তালিম নিয়েছেন কত্থকের পাশাপাশি বহু লোকনৃত্যেও। মালকাম, কলারিপয়ত্তু, ছৌ-এর মতো লোকধারার নাচে ঈশার অনায়াস গতি। আবার আধুনিক এরিয়াল ডান্স বা শূন্যে ভাসমান অবস্থায় নৃত্যকলাতেও তিনি পটু।
২০০৫ সালে তার প্রথম অভিনয় হিন্দি ছবিতে। সুভাষ ঘাইয়ের পরিচালনায় ‘কিসনা: দ্য ওয়ারিয়ার পোয়েট’ ছবিতে ঈশার বিপরীতে নায়ক ছিলেন বিবেক ওবেরয়।
ছবিটি বক্স অফিসে সে রকম সফল হয়নি। কিন্তু পর্দায় ঈশার নাচ তাক লাগিয়ে দেয় দর্শকদের। এর পরেও বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘দরওয়াজা বনধ রাখো’, ‘রকি: দ্য রেবেল’, ‘গুড বয় ব্যাড বয়’, ‘লাক বাই চান্স’, ‘করিব করিব সিঙ্গল’তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য। অভিনয় করেছেন দক্ষিণের বেশ কিছু ছবিতেও।
কিন্তু অভিনেত্রী হিসেবে কোনওদিন প্রথম সারিতে আসতে পারেননি ঈশা। ধীরে ধীরে ইন্ডাস্ট্রিতে ‘বিস্মৃত নাম’গুলির মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়ায় তার নাম। যদিও ঈশার বক্তব্য, তিনি কোনওদিন নায়িকা বা অভিনেত্রী হতে চাননি।
সাবেক ভারতীয় পেসার জহির খানের সঙ্গেও এক সময়ে দীর্ঘদিন ঘনিষ্ঠ ছিলেন ঈশা। শোনা যায়, তাদের আলাপ হয়েছিল ক্রিকেট বোর্ডের এক অনুষ্ঠানে। সেখানে পারফর্ম করেছিলেন ঈশা।
দু’জনে কোনও দিন বিশেষ সম্পর্কের কথা স্বীকার করেননি। একে অন্যের ভালো বন্ধু হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন। ২০১২ সালে তার আর জহিরের সম্পর্ক ভেঙে যায়। পাঁচ বছর পরে জাহির বিয়ে করেন অভিনেত্রী সাগরিকা ঘাটগে-কে।
ঈশার জীবনের মূল মন্ত্র এখন নাচ। মায়ের প্রতিষ্ঠিত নৃত্যসংস্থার কর্ণধার এখন তিনি। থাকেন অস্ট্রেলিয়ার পারথ্-এ। সেখানেই ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যকলাকে জনপ্রিয় করে তুলছেন তিনি।
একমাত্র পুত্র সাত বছরের লুকার সিঙ্গল পেরেন্ট ঈশা। জানিয়েছেন, তিনি স্বাধীনচেতা। তাই বিয়ে না করেই নিজের মতো করে সন্তানকে বড় করতে চান। জানিয়েছেন এই নৃত্যশিল্পী।
ঈশার ভাই তাও ইসারো একজন নামী পারকশনিস্ট। ঈশা জানিয়েছেন, বাবা মা তাদের বড় করেছেন সৃষ্টিশীল ধারায়। তিনি-ও সেভাবেই বড় করতে চান ছেলেকে। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন