বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর অসীম সাহসিকতায় ধরা পড়লো ছিনতাইকারী। কারও সহায়তা ছাড়া একাই পাকড়াও করে পুলিশে দিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, ছিনতাইকারীর আরেক সহযোগীকেও কৌশলে ধরিয়ে দেন এই শিক্ষার্থী। একসাথে দুই ছিনতাইকারী ধরিয়ে দেয়ার পরও, থানা পুলিশের কাছ থেকে সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর।
সাহস এবং প্রতিবাদী সত্ত্বা থাকলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে সিনাটান করে দাঁড়ানো যায়- তা আরেকবার প্রমাণ করলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী পারিশা আক্তার (২৫)। রাজধানীর কারওয়ানবাজারে অসীম সাহসিকতা দিয়ে একাই দুই ছিনতাইকারীকে ধরেছেন তিনি। পাকড়াও করে তুলে দিয়েছেন পুলিশের হাতে। তার সাহসিকতায় হতবাক হয়েছেন উপস্থিত শত শত জনতা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এরইমধ্যে ছিনতাইকারী পাকড়াওয়ের ভিডিও ভাইরাল হয় নেট দুনিয়ায়। প্রচন্ড সাহসিকতার সঙ্গে অপরাধীদের ধরে এখন দেশজুড়ে প্রশংসায় ভাসছেন পারিশা। ঘটনার সময় পারিশার সঙ্গে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তার সহপাঠী শাহরিয়ার সিয়াম। তারা প্রাণীবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। ঘটনার সকালে একটি থিসিসের কাজে মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলেন। কাজ শেষে বিকালে বাসযোগে পুরান ঢাকার দিকে ফিরছিলেন তারা।
বাসটি কারওয়ানবাজারের কাছাকাছি এলে বাইরে থেকে ছোঁ মেরে এক ছিনতাইকারী তার মোবাইল ফোনটি টান দিয়ে নিয়ে যায়। তখন পারিশা ফোনে কথা বলছিলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল পারিশা দ্রুতই সামলে নেন নিজেকে। বাস থেকে নেমে ছিনতাইকারীকে খুঁজতে থাকেন। এরই মধ্যে মানুষের ভীরে হারিয়ে যায় ছিনতাইকারী। পরবর্তী ঘটনার বর্ণনায় পারিশার সহপাঠী শাহরিয়ার সিয়াম বলেন, পারিশা যখন তার মোবাইলের ছিনতাইকারীকে খুঁজছিলেন, ওই সময়েই শিক্ষার্থী ঘটতে দেখেন আরেক ছিনতাইয়ের ঘটনা।
অপর একজনের মোবাইল নিয়ে পালাচ্ছিল আরেক ছিনতাইকারী। তৎক্ষণাৎ তাকে ঝাপটে ধরে ফেলেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। এ সময় কেউ এগিয়ে না এলেও পারিশা একাই শুরু করেন বেধড়ক পিটুনি। তখন ছিনতাইকারী মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ সময় তাকে নিজের মোবাইল হারানোর রাগ ঝাড়তে দেখা যায় এই ছিনতাইকারীর ওপর। ক্ষুব্ধ পারিশার চিৎকারে আশেপাশে অনেক মানুষ জড়ো হয়।
এ সময় পারিশা ছিনতাইকারীর কাছে থাকা ফোন থেকে কল করে অপর ছিনতাইকারীকেও ধরে ফেলেন। এরপর ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলে ছিনতাইকারীদের তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এদিকে আটকে রাখা দুই ছিনতাইকারীসহ অভিযোগ নিতে ভুক্তভোগীকেও থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। তার বক্তব্য, একজন ছিনতাকারীকে ধরে তার কাছ থেকে তথ্য আদায় করে আরেকজনকে ধরেছেন তিনি।
দুইজন ছিনতাইকারীকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছেন তিনি। এরপরও যদি পুলিশ তার ফোন উদ্ধার করতে না পারে, তবে এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কিছুই হতে পারে না। পারিশার সহপাঠী শাহরিয়ার সিয়াম জানান, থানায় গিয়ে তারা একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তবে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ছাত্রীর শাওমি ব্র্যান্ডের পোকো এম-৩ মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ । জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। ছিনতাই হওয়া মোবাইলটি উদ্ধারে কাজ চলছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন