কেউ চাইলে জাতীয় দল ছেড়ে দিতে পারবে। ইচ্ছা করলে তিন সংস্করণের যে কোনো একটিতে খেলতে পারবে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের এ কথায় অভিমানের ছোঁয়া থাকলেও এটাই যে এখন বাস্তবতা। জাতীয় দলে খেলা না খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা ক্রিকেটারদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে বিসিবি। এই স্বাধীনতার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে কঠিন শর্ত। যে শর্ত মেনে একবার কেউ চুক্তিতে স্বাক্ষর করলে জাতীয় দলে খেলার বাধ্যবাধকতা থাকবে।
২০২১ সাল থেকে কার্যকর হবে যেটা। সোমবার নরম সুরে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের আরও অনেক গরম বার্তাই দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। যার একটি এমন, কেউ চাইলে জাতীয় দল ছেড়ে দিতে পারে। সবার জন্যই পথ খোলা রাখা হবে, অনেকটা আফ্রিকার সেই 'ডোর অব নো রিটার্ন'-এর মতো। স্বেচ্ছায় জাতীয় দল থেকে বেরিয়ে গেলে আর ফেরার সুযোগ থাকবে না।
আসলে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া উপায়ও ছিল না বিসিবি কর্মকর্তাদের। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাছে একপ্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছিল বোর্ড। নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজেদের স্বার্থ নিয়েই বেশি ভাবছিলেন পঞ্চপাণ্ডবের অনেকে। বিশ্বকাপের পর সাকিব আল হাসান গিয়েছিলেন ছুটিতে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ও ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে ছুটি নেওয়া সাকিব ভারত সফরের ঠিক আগে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন পারিবারিক কারণ দেখিয়ে। নিরাপত্তা ভীতিতে পাকিস্তান সফর করেননি মুশফিকুর রহিম।
সিনিয়রদের দেখাদেখি জুনিয়ররাও ছুটি সংস্কৃতিতে ঢুকে পড়েছেন। পরিশ্রমের খেলা টেস্ট ছেড়ে টি২০ আর ওয়ানডের দিকে ঝুঁকছিলেন বেশিরভাগ জুনিয়র ক্রিকেটার। বাধ্য হয়েই এতদিন ক্রিকেটারদের বেশিরভাগ আবদার মেনেও নিচ্ছিল বোর্ড। সাকিবের বাড়াবাড়ির কারণে বিসিবি কর্মকর্তাদেরও নড়েচড়ে বসতে হয়েছে এবার। দেশসেরা এ অলরাউন্ডার শ্রীলঙ্কায় টেস্ট না খেলে আইপিএল খেলতে চাওয়ায় কষ্ট পেয়েছেন ও বিস্মিত হয়েছেন কর্মকর্তারা।
জোড়াজুড়ি করে বোর্ড সভাপতি পাপনের কাছ থেকে ছুটিও আদায় করে নিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এ অলরাউন্ডার। একে জিম্মি দশার সঙ্গেই তুলনা করছেন পাপন, 'এটা একেবারে অস্বীকার করার পথ নেই (ক্রিকেটারদের কাছে জিম্মি হয়ে যাওয়া)। তবে এখন একটা ব্যাপারে আমরা পরিষ্কার। আমরা কাউকে জোর করে কোথাও পাঠাব না, যারা খেলতে চায় না, তারা খেলবে না। কারও যদি জাতীয় দলের চেয়ে অন্য কোথাও খেলতে ভালো লাগে তাহলে তারা যেতে পারে, কোনো বাধা নেই।'
ক্রিকেটারদের কাছে আর জিম্মি না হতেই কেন্দ্রীয় চুক্তিতে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বিসিবি। চুক্তির আগে খেলোয়াড়দের কাছ থেকে লিখিত নেওয়া হবে, কে কোন সংস্করণে খেলতে চায়। পাপন বলেন, 'নতুন চুক্তিতে কিছু জিনিস যুক্ত হবে। ওখানে পরিস্কারভাবে লেখা থাকবে, কে কোন সংস্করণে খেলতে চায়। ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলবে না জাতীয় দলে খেলবে, সেটাও লেখা থাকবে। এই শর্ত মেনে চুক্তিতে স্বাক্ষর করলে জাতীয় দলের খেলার সময় ছাড়পত্র দেওয়া হবে না। আগে যেটা ছিল মৌখিক, এখন সেটা কাগজে-কলমে লিখিত নেব। যে খেলতে চায় না, সে খেলবে না।'
বিসিবি থেকে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের দুটি বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলা সীমিত করে দিয়েছিল। এই নিয়মও করা হয়েছিল সাকিবের কারণেই। এ ছাড়া মুস্তাফিজুর রহমানকে চোটমুক্ত রাখতে আইপিএল ও পিএসএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে ছাড়পত্র দেয়নি বিসিবি। বোর্ডের নতুন নিয়মে চাইলেই আইপিএলে খেলতে পারবেন মুস্তাফিজ। কারণ জাতীয় দলে খেলা না খেলার স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে বিসিবি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন