নওগাঁয় একদিনে করোনার শনাক্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড

নওগাঁয় একদিনে করোনার শনাক্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড

নওগাঁয় শনাক্তকরণ পরীক্ষা বৃদ্ধি হওয়ায় বেড়েছে করোনা রোগীর সংখ্যা। তবে পরীক্ষা ও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও কমেছে সংক্রমণের হার। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা সংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সর্বশেষ আট দিনে (গত ৩০ মে থেকে গতকাল রবিবার পর্যন্ত) ১ হাজার ৭৪২টি নমুনা পরীক্ষায় ২৫৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। গত ২২ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত আট দিনে ৪১২টি নমুনা পরীক্ষায় ১৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। নওগাঁর শনাক্তের হার কমলেও স্বস্তির কোনো কারণ নেই বলে মনে করছেন জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ফোকাল পার্সন ও ডেপুটি সিভিল সার্জন মঞ্জুর-এ মোর্শেদ। তিনি দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘পরীক্ষা হওয়া নমুনায় করোনা শনাক্তের হার আগের পরিস্থিতির তুলনায় কম মনে হলেও স্বস্তির কোনো কারণ নেই। কারণ, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে অ্যান্টিজেন টেস্টের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

ফলে আগের তুলনায় বর্তমানে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা বেশি হচ্ছে এবং শনাক্তের সংখ্যাও বেশি হচ্ছে। প্রায় ৩০ লাখ জনসংখ্যার এই জেলায় এখন পর্যন্ত মাত্র ১৬ হাজার মানুষ করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করিয়েছেন। আরও বেশি পরীক্ষা হওয়া দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘নওগাঁতে করোনা পরীক্ষার জন্য কোনো আরটি-পিসিআর ল্যাব নেই। নওগাঁর সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা করোনা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে।

সেখানে নমুনার স্তুপ জমে যাওয়ায় ফলাফল পেতে চার থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে। ফলে মানুষজন সঠিক সময়ে ফলাফল জানতে পারছেন না। এতে করে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। এখনও প্রায় ছয় শতাধিক নমুনার ফলাফল ঝুলে আছে। ওই সব নমুনার ফলাফল আসলে সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র জানা যাবে।’ এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড নওগাঁয় ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ১১৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। জেলায় এটি এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড।

এর আগে গত বছরের ২৬ জুন ১ দিনে সর্বোচ্চ ৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। নতুন শনাক্ত ১১৯ জনকে নিয়ে জেলায় করোনা সংক্রমণের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫০৪। গত ২৪ ঘন্টায় করোনা সংক্রমিত হয়ে একজন এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ফোকাল পার্সন ডা. মঞ্জুর-এ মোর্শেদ আজ সোমবার সংবাদকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় আরটি-পিসিআর ও র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ১ হাজার ১৯২ জনের মধ্যে ১৩০ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ। শনাক্ত হওয়া ১৩০ জনের মধ্যে ১১ জনের দ্বিতীয়বার টেস্টে পজিটিভ এসেছে।

অর্থাৎ নতুন শনাক্ত রোগী ১১৯ জন। নতুন শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সদর উপজেলার ৩৫ জন, রাণীনগরে ৬ জন, মহাদেবপুরে ১৪ জন, মান্দায় ১২ জন, বদলগাছীতে ৩ জন, পত্নীতলায় ১৩ জন, ধামইরহাটে ৪ জন, নিয়ামতপুরে ১২ জন, সাপাহারে ৭ জন, পোরশায় ৮ জন এবং আত্রাই উপজেলায় ৫ জন রয়েছে। এদিকে চলতি জুন মাসের ১ম দিন ৬৭ জন করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যু বরণ করেছে ৩জন, ২য় দিন করোনায় আক্রান্ত ১৫জন, ৩য় দিন করোনায় আক্রান্ত ২৩ জন, ৪র্থ দিন করোনায় আক্রান্ত ২৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ১ জন, ৫ম দিন করোনায় আক্রান্ত ২৪ এবং মৃত্যুবরণ করেছে ১ জন এবং ৬ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৯৫ জন।

এ পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলার ১১১১ জন, রানীনগর উপজেলার ৯৩ জন, আত্রাই উপজেলার ৫৫ জন, মহাদেবপুর উপজেলার ১৮৪ জন, মান্দা উপজেলার ৮৯ জন, বদলগাছি উপজেলার ১৫৪ জন, পত্নীতলা উপজেলার ১৫৬ জন, ধামইরহাট উপজেলার ১১৪ জন, নিয়ামতপুর উপজেলার ১৭৪ জন, সাপাহার উপজেলার ১৫৮ জন এবং পোরশা উপজেলার ১৩২ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা হলো ২৫০৪ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ২০৬২ জন। নওগাঁয় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ১৩ মে।

সেই থেকে আজ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৮৩০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৫০৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় সর্বোচ্চ ১ হাজার ১১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা পুরো জেলার করোনা শনাক্তের ৪৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। জেলায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৬২ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪৬ জন মারা গেছেন। মৃত্যের হার ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। করোনা মোকাবিলায় নওগাঁ স্বাস্থ্য বিভাগ নওগাঁ করোনা চিকিৎসার জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ আধুনিক হাসপাতালসহ ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১টি শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ আধুনিক হাসপাতালে ৪৫টি, সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১টি এবং জেলার অপর ৯টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫টি করে মোট ১৩৫টি শয্যা রয়েছে। জেলার ১১টি সরকারি হাসপাতালের কোনোটিতেই আইসিইউ শয্যা নেই। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে চারটি হাসপাতালে।

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ আধুনিক হাসপাতাল, নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা আছে। বাকি ৭টি সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নেই। জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১ হাজার ৮২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। জেলায় বর্তমানে ৪৪২ জন করোনা রোগীর মধ্যে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ৪৮ জন রোগী জেলার সরকারি হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিদের অধিকাংশই বাড়িতে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া অনেকে রাজশাহী কিংবা বগুড়ায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password