আজ ম্যাচের চতুর্থ দিনের খেলা হওয়ার কথা ছিল আহমেদাবাদে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনেক আয়োজন করে দিবারাত্রির টেস্টের ব্যবস্থা করেছিল ভারত। ১ লাখ ১০ হাজার দর্শকের গ্যালারি করোনার কারণে এমনিতেই ভর্তি হওয়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু জমজমাট এক ম্যাচে অর্ধেক গ্যালারিই পূর্ণ হয়ে উঠতে দোষ ছিল না। আচমকা নাম বদলে মোদির স্টেডিয়াম হয়ে ওঠা মোতেরায় খেলাই হয়েছে মাত্র দুই দিন। আরেকটু নিখুঁত হতে চাইলে পৌনে দুই দিন।
পাঁচ সেশনের মাত্র একটু বেশি সময় গড়ানো টেস্টের এমন স্বল্পদৈর্ঘ্যে মূল ভূমিকা উইকেটের। প্রথম দিন থেকেই উইকেটে ভয়ংকর স্পিন ধরেছে। আর স্পিনের ভয়ে থাকা দুই দলের ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন তুলনামূলক সোজা বলগুলোতেই। উইকেটের সমালোচনা করছেন সবাই। তবে কিছু সাবেক ক্রিকেটার এমন ভয়ংকর এক ম্যাচের পেছনে ব্যাটসম্যানদের দায়ও দেখছেন। নাসের হুসেইন সেই গুটিকয় সাবেকদের একজন। সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক নিজের উত্তরসূরিদের দোষই বেশি দেখছেন।
নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের উইকেট যে কঠিন ছিল, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। টেস্ট ইতিহাসেই এর চেয়ে কম রান হয়েছে মাত্র নয়বার। এবং এর কোনোটিই গত শতাব্দীর এদিককার কথা নয়। ১০ উইকেটের জয়ে ভারত চার ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ায় সমালোচনাও হচ্ছে বেশি। ঘরের মাঠে সুবিধা পেতে ভারত নৈতিকতার সীমা লঙ্ঘন করেছে, এমন সুর শোনা যাচ্ছে ব্রিটিশ মিডিয়ায়। জো রুটের মতো খণ্ডকালীন স্পিনার ৮ রানে ৫ উইকেট পেয়েছেন। ইতিহাসেই কোনো স্পিনার তাঁর চেয়ে কম রান দিয়ে পাঁচ উইকেট পাননি!
রুট উইকেটের সমালোচনা করতে বলেছিলেন, উইকেট কেমন সেটা তাঁর ৫ উইকেট নেওয়ায় সবার টের পাওয়া উচিত। নাসের হুসেইন স্বীকার করেছেন চেন্নাইয়ের চেয়ে আহমেদাবাদের উইকেট ব্যাট করার জন্য কঠিন ছিল। কিন্তু ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের খেলার ধরনটা ভালো লাগেনি তাঁর। উত্তরসূরিদের দেখে তাঁর মনে হয়েছে, সবাই ‘স্টার্টলড র্যাবিট!’ দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৮১ রানে গুটিয়ে গেছে ইংল্যান্ড। ভারতের বিপক্ষে এই প্রথম এক শর নিচে থামার এই রেকর্ডের পেছনে ব্যাটসম্যানদের আতঙ্কে ‘খরগোশ’ বনে যাওয়াই কাল হয়েছে বলে ধারণা হুসেইনের, ‘দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডকে দেখে আতঙ্কিত খরগোশ মনে হয়েছে। আমার মনে হয় না এটা ৮১ রানে অলআউট হওয়ার উইকেট ছিল। হ্যাঁ, চেন্নাইয়ের চেয়ে অনেক কঠিন উইকেট ছিল।’
স্কাই স্পোর্টসের ক্রিকেট পডকাস্টে উইকেটের দ্বিচারিতাকে ইংল্যান্ডের মূল সমস্যা বলে বলেছেন সাবেক অধিনায়ক, ‘এ উইকেটে একটা বল ভয়ংকর বাঁক নিচ্ছে, আরেকটা বল স্কিড করে ছুটছে, এতে আপনি সব ছন্দ হারিয়ে ফেলেন। এমন উইকেটে টানা ম্যাচ খেললে আপনার মনে প্রভাব পড়ে। আপনি চাইলে তর্ক করতে পারেন, চেন্নাইয়েও বল অনেক বাঁক নিচ্ছিল। কিন্তু এখানে প্রথম দিনে জ্যাক ক্রলির (প্রথম বল খেলা) বিপক্ষেই বল ঘুরেছে। সব ইংলিশ ব্যাটসম্যান ভেবেছে আমি স্পিনের জন্য খেলব কিন্তু অধিকাংশ আউট হয়েছে যে বল ঘোরেনি তাতে।’
দুই টেস্ট হেরে যাওয়ায় সিরিজ জেতার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে ইংল্যান্ডের। এ অবস্থায় শুধু সিরিজে হার এড়ানোই সম্ভব ইংলিশদের পক্ষে। গত সফরে ৪-০ ব্যবধানে হারা ইংল্যান্ড এবার সে ভাগ্য বরণ করতে না চাইলে একই ভেন্যুতে ৪ মার্চ শুরু হতে যাওয়া টেস্টে জিততেই হবে তাদের। এমন অবস্থায় জয়ের জন্য একটি অস্ত্রই মানছেন নাসের হুসেইন, ‘এখন পুরোটাই দলের মানসিকতার ওপর নির্ভর করছে। আর সত্যি বলতে উইকেট ও আম্পায়ার নিয়ে ড্রেসিংরুমের বাইরেই বেশি কথা হচ্ছে।
একজন ইংলিশ খেলোয়াড়কেও কন্ডিশন ভালো ছিল না—এমন বলতে শোনেনি। ওদের একটা উপায় খুঁজে নিতে হবে। প্রথম ইনিংসে জ্যাক ক্রলির ফিফটি ইতিবাচক দিক ছিল। আমি জানি স্পিন পিচে ধরার আগে বেশির ভাগ রান এসেছে। কিন্তু আমার দেখা কোনো ইংলিশ ব্যাটসম্যানের অন্যতম সেরা ফিফটি এটি। যে ছন্দে, যে অনায়াসে খেলেছে। জ্যাক যদি চোট থেকে ফিরে এটা করতে পারে, ওলি পোপও করতে পারবে, জনি বেয়ারস্টোও করতে পারে।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন