খরিদ্দার ঘুরে যাচ্ছে, মাথায় হাত দোকানে

খরিদ্দার ঘুরে যাচ্ছে, মাথায় হাত দোকানে

বাজারের মাস্কের চাহিদা হু-হু করে বাড়ছে। কিন্তু খরিদ্দারদের চেয়েও হতাশ দোকানিরা। কারণ এই মুহূর্তে মাস্কের চাহিদা যে রকম তুঙ্গে তাতে স্টকে থাকলে সব মুড়ি-মুড়কির মতো বিকিয়ে যেত। শুধু কি তা-ই? যে যা দাম হাঁকছে, সেই দামেই লোকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। 

স্টক ফুরিয়ে যাওয়ায় তেহট্টের এক ওষুধের দোকানি এম৯৫ ও থ্রি-লেয়ারড মাস্ক পাঠানোর অর্ডার দিয়েছিলেন সাপ্লায়ারকে। কিন্তু সেই সাপ্লায়ার জানিয়েছেন, কলকাতাতেই নাকি এন৯৫ মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, তা-ও আকাল চলছে। তার পরেও দোকানি তাঁর অর্ডার বাতিল করেননি। কিন্তু এখনও মাস্ক পাননি। খরিদ্দার এসে ফিরে যাচ্ছে। তেহট্টের হাইস্কুলপাড়ার ওই দোকানি বলছেন, “জোগানই তো নেই। বিক্রি করব কী করে? লোকে সব ফিরে যাচ্ছে।”

নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে নদিয়া জুড়ে আতঙ্ক এতটাই দানা বেঁধেছে যে প্রায় সর্বত্র একই চিত্র। তবে জেলার যত উত্তরের দিকে যাওয়া যাবে, ততই মাস্কের আকাল বেশি। কল্যাণী বা রানাঘাটে এখনও পর্যন্ত সে ভাবে মাস্কের অভাব না থাকলেও কৃষ্ণনগর, চাপড়া, তেহট্ট, করিমপুরের দিকে কিন্তু বাজারে ওই দুই ধরনের মাস্ক প্রায় পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে। দু’একটা যদি বা পাওয়া যায়, তা বিক্রি হচ্ছে অত্যন্ত চড়া দামে।

আর সেই সুযোগে অতি সাধারণ মাস্ক, যেগুলির ধুলোবালি ছাড়া অন্য কিছু আটকানোর ক্ষমতা নেই সে সব বিক্রি হচ্ছে মুড়ি-মুড়কির মতো। লোকের আতঙ্কের সুযোগে সেই সব মাস্ক নিয়ে চলছে কালোবাজারি। ওষুধের পাইকারেরা পরামর্শ দিচ্ছেন, অন্তত যে সব মাস্কের গায়ে ‘এম৩’ লেখা আছে, সেগুলিই কিনতে। কারণ ওই মাস্কগুলি সরকার অনুমোদিত। বাকি সব স্থানীয় ভাবে তৈরি। 

জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার মতে, “মানুষকে অহেতুক আতঙ্কিত করে মাস্ক নিয়ে কালোবাজারি চলছে।” শুক্রবার জেলাশাসক বিভু গোয়েল বলেন, “নদিয়ায় এখনও যা অবস্থা তাতে মাস্ক পড়ে ঘোরার কোনও প্রয়োজন নেই। অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে ভিড় এড়িয়ে চলা, বারবার হাত ধোয়া, নাক-মুখ ঢেকে কাশি বা হাঁচি দেওয়ার মতো বিষয়গুলি মেনে চললেই হবে।”

কিন্তু কে শুনছে সে কথা? 

করোনা নিয়ে অনেকে এতটাই আতঙ্কিত যে পরিবারের সকলের জন্য অন্তত একটা করে মাস্ক পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কৃষ্ণনগরের ওষুধের পাইকার তথা ‘বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর জেলা কমিটির সহ-সভাপতি গোপীনাথ দে-র মতে, “গোটা দেশ জুড়েই মাস্কের চাহিদা হঠাৎ মারাত্মক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহ নেই বললেই চলে। নদিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়। আগে এমনিতে তেমন চাহিদা ছিল না। ফলে খুব বেশি স্টকেও ছিল না। এখন অর্ডার দিয়েও পাচ্ছি না।” 

কৃষ্ণনগরের নেদেরপাড়া এলাকার এক ওষুধের দোকানের মালিক বলেন, “আরে, কোম্পানি মাস্ক পাঠাচ্ছে না তো বিক্রি করব কী করে?”  সদর মোড় এলাকার এক ওষুধের দোকানি বলছেন, “আমার স্টকে একটাও মাস্ক নেই। ফলে চাইলেও বেশি দামে বিক্রি করতে পারব না। সাধারণ মাস্ক গছিয়ে মানুষকে ঠকাতে পারব না।” জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ১২টি ওষুধের দোকান আছে অংশুমান দে-র। তিনি বলছেন, “প্রায় সর্বত্রই মাস্কের চাহিদা মারাত্মক। আমাদের কাছে এখনও সামান্য কিছু আছে। কোম্পানিতে অর্ডার দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।” 

শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের পাশে একাধিক ওষুধের দোকান আছে। তাদের কারও কাছেই এন৯৫ বা থ্রি-লেয়ারড মাস্ক নেই। নেই কম দামের সাধারণ মাস্কও। তাতে কী? ওই চত্বরেই ফলের দোকানে বিক্রি হচ্ছে রঙ-বেরঙের অতিসাধারণ মাস্ক। অন্য সময়ে যার দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা, এখন তারই দাম দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। কৃষ্ণনগর শহরে কোথাও-কোথাও তা এমনকি ৪৫ থেকে ৫০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। 

‘বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’ সূত্রে জানানো হয়, নদিয়া জেলায় তাদের প্রায় দু’হাজার সদস্যকে সতর্কিত করা হয়েছে। গোপীনাথ বলেন, “আমরা সদস্যদের বলে দিয়েছি, এই পরিস্থিতিতে কেউ যদি মাস্কের কালোবাজারি করেন এবং তা যদি প্রমাণিত হয়, সংগঠনের তরফে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।” কালোবাজারির খবর প্রশাসনের কাছেও পৌঁছেছে। এ দিন জেলাশাসক বলেন, “পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আমরা অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আতঙ্ক ছড়িয়ে কালোবাজারি করলে কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হবে।”

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতেও, “অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। এই জেলায় মাস্ক পরে ঘোরার মতো পরিবেশ আদৌ তৈরি হয় নি।” তবে যদি সত্যিই পরে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়, সে কথা মাথায় রেখে মাস্ক মজুত করতে শুরু করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। রাজ্য থেকে যেমন এন৯৫ মাস্ক জেলায় পাঠানো হচ্ছে, স্থানীয় ভাবেও কেনা হচ্ছে মাস্ক। বর্তমানে জেলায় দু’ধরনের মাস্ক যথেষ্ট পরিমাণে মজুত আছে এবং প্রয়োজন মতো বিভিন্ন হাসপাতালে তা সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password