আইপিএলে জয়ে শুরু করল কলকাতা নাইট রাইডার্স। নিজেদের প্রথম ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকে ১০ রানে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছে ইয়ন মরগান-সাকিব আল হাসানরা। রবিবার রাতে চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ১৮৮ রানের লক্ষ্যে নেমে ৫ উইকেটে ১৭৭ রানে তারা থেমেছে। তাতে এই আইপিএলে সাকিবদের শুরু হলো ১০ রানের জয়ে।
হায়দরাবাদকে লক্ষ্যচ্যুত করতে হরভজন সিং প্রথম ওভার বল হাতে নেন। চতুর্থ বলেই উইকেট পেতে পারতেন এই ভারতীয় স্পিনার। কিন্তু ডেভিড ওয়ার্নারের শটে পয়েন্টে প্যাট কামিন্সের হাত ফসকে মাটিতে পড়ে বল। শূন্য রানে পাওয়া জীবন বড় করতে পারেননি অধিনায়ক। পরের ওভারে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার বাউন্সে পেছনে দিনেশ কার্তিকের গ্লাভসবন্দি হন মাত্র ৩ রানে।
তৃতীয় ওভারে বল হাতে নিয়ে সাকিব বাজিমাত করেন। প্রথম ওভারে ছক্কা মেরে দারুণ শুরুর ইঙ্গিত দেওয়া ঋদ্ধিমান সাহার (৭) ব্যাট ছুঁয়ে বল নিচু হয়ে স্টাম্পে আঘাত করে। আইপিএলে ফিরে প্রথম বলে উইকেট নেন সাকিব। ওই ওভারে মাত্র ১ রান দেন তিনি।
১০ রানে ২ উইকেট হারানো হায়দরাবাদ ঘুরে দাঁড়ায় জনি বেয়ারস্টো ও মানীষ পান্ডের ব্যাটে। তৃতীয় উইকেটে ৬৭ বলে ৯২ রান তোলেন তারা। যাতে ৩২ বলে ফিফটি হাঁকান বেয়ারস্টো। ইংলিশ ব্যাটসম্যানের ঝড়ে ১২ ওভারে ২ উইকেটে ১০০ রান স্পর্শ করে হায়দরাবাদ। পরের ওভারে কামিন্স এই গুরুত্বপূর্ণ জুটি ভাঙেন। বেয়ারস্টো ৪০ বলে ৫৫ রান করে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে নিতিশ রানার সহজ ক্যাচ হন। তার বিদায়ে থমকে যায় হায়দরাবাদের রানের গতি।
মানীষের সঙ্গে মোহাম্মদ নবী বড় জুটি গড়তে ব্যর্থ হন, ২০ বলে ২৯ রান করেন তারা। নবীকে (১৪) এউইন মরগ্যানের ক্যাচ বানান প্রসিদ্ধ। ১৮তম ওভারে বিজয় শঙ্করকে (১১) মাঠছাড়া করেন আন্দ্রে রাসেল। শেষ ২ ওভারে দরকার ছিল ৩৮ রান। ১৯তম ওভারে দুটি ছয়ে সাজানো ইনিংসে ব্যবধান তা এক ওভারে ২২ রানে নামান আব্দুল সামাদ।
শেষ ওভারে সামাদ ও মানীষকে বোতলবন্দি করে রাখেন রাসেল। ওই ওভারে দুজনের ব্যাটে আসে ১১ রান, শেষ বলে ৬ মারেন মানীষ, ৪৪ বলে ২ চার ও ৩ ছয়ে সর্বোচ্চ ৬১ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ১৯ রানে খেলছিলেন সামাদ। কলকাতার হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন প্রসিদ্ধ। ৪ ওভারে ৩৪ রান খরচায় এক উইকেট নেন সাকিব। সমানসংখ্যক উইকেট পান হরভজন ও কামিন্স। এর আগে নিতিশের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৬ উইকেটে ১৮৭ রান করে দুইবারের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন কলকাতা।
ভুবনেশ্বর কুমারের প্রথম ওভারেই চার মেরে শুরু। এরপর সন্দীপ শর্মার দুই ওভারে ছয় বলের মধ্যে পাঁচটি বাউন্ডারি। নিতিশ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন এমন মারকুটে। রশিদ খানের এলবিডাব্লিউর আবেদনে আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নেন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থেকে এবং ৪০ রানে নিজেকে বাঁচানো এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান ৩৭ বলে প্রথম ছক্কা মেরে করেন ফিফটি, যাতে ছিল ৮টি চারও।
নিতিশ পাওয়ার প্লেতেই দলকে এনে দেন ৫০ রান, সঙ্গে ছিলেন শুভমান গিল। ৫৩ রানের জুটি গড়ে সপ্তম ওভারের শেষ বলে রশিদের কাছে বোল্ড হন তিনি ১৫ রানে। নিতিশকে সঙ্গ দিতে নামেন রাহুল ত্রিপাঠী। সপ্তম বল খেলে আইপিএলে হাজার রানের মাইলফলক ছোঁন তিনি। ২৮ বলে ৫ চার ও ২ ছয়ে ফিফটি করার পরের বলেই টি নটরাজনের শিকার হন ত্রিপাঠী। ৫০ বলে ৯৩ রানের এই জুটি ভাঙার পর বড় ধাক্কা খায় কলকাতা।
রাসেল, নিতিশ ও মরগ্যান বিদায় হন মাত্র ৩ রানের ব্যবধানে। রশিদ ৫ রানে ফেরান রাসেলকে। পরের ওভারে মোহাম্মদ নবীর বলে বিজয় শঙ্করের হাতে ক্যাচ দেন নিতিশ, ৫৬ বলে ৯ চার ও ৪ ছয়ে ৮০ রানে থামেন কলকাতা ওপেনার। পরের বলে মরগ্যানের (২) ক্যাচ নেন সামাদ। কার্তিক কাট করে নবীকে হ্যাটট্রিক বঞ্চিত করেন।
কার্তিকের সঙ্গে শেষ বল পর্যন্ত ক্রিজে ছিলেন সাকিব। সাত নম্বরে নেমে বেশি বল খেলার সুযোগ পাননি বাংলাদেশের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। অন্য প্রান্তে থাকা কার্তিক মেরে খেলেন। শেষ বলে সাকিব ভুবনেশ্বরের শিকার হন। ৫ বলে ৩ রানে সামাদের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৯ বলে ২২ রানে অপরাজিত ছিলেন কার্তিক। হায়দরাবাদের হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়ে সেরা বোলার দুই আফগান স্পিনার রশিদ ও নবী।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন