চায়ের দোকানে গল্পচ্ছলে এক ব্যক্তিকে বলতে শোন যায়, ছোট এক ছেলে রাস্তার উপরে পড়ে থাকা একটি কেঁচো মেরে বয়স্ক এক ব্যক্তির কাছে বলেছে কেঁচো মারার ব্যাপার। প্রথম ব্যক্তি দ্বিতীয় ব্যক্তির কাছে রাস্তায়, একটি ছেলে সাপ মেরেছে। অর্থাৎ দ্বিতীয় ব্যক্তির কাছে যে খবর পৌঁছে তা কেঁচো মারার সাপ মারার। এভাবে কেঁচো হয়ে যায় রাসেলস ভাইপার। গুজব খবর এ ভাবেই রটছে।
দোহার, নবাবগঞ্জ ও কেরানিগঞ্জ সহ আশ পাশের এলাকায় রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে জনসাধারণ আতঙ্কের মধ্য সময় পার করছে। জিজ্ঞেস করা হলে বলছে ফেসবুক অথবা ইউটিউবে সাপ মারার অথবা সাপ দেখার সংবাদ পাওয়া গেছে। যে তথ্যের কোন ভিত্তিক খুঁজে পাওয়া যায়নি। উপরন্তু প্রচারিত হচ্ছে বিভিন্ন মিডিয়ায় ভুয়া সংবাদ।
বছর দুই আগে মারা যাওয়া শিশুর ছবি ছাপিয়ে রাসেলস ভাইপারে দংশনে মারা যাওয়ার খবর প্রচার করা হয়। রাসেলস ভাইপার স্থানীয়ভাবে চন্দ্রবোড়া ও উলুবোড়া নামেও পরিচিতি। বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ এমডি আবু সাঈদ সম্প্রতি একটি চ্যানেলের টকশোতে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলো, ২০১৩ সালে যখন প্রথম দেখা গেল সেটা চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে এক ছাত্র, তার বাড়ির পিছনে, অজগরের বাচ্চা মনে করে, রাসেল ভাইপারে বাইট খেয়েছে এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা গেছে।
এটা থেকে শুরু হয় বাংলাদেশে রাসেলস ভাইপারের ইতিহাস এবং হাসপাতালে মৃত্যু। রাজশাহী অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাসেলস ভাইপার পাওয়ার পর বন বিভাগ এই সবগুলো রেসকিউ করে পদ্মার পাড়ের খিদিরপুর, চর খিদিরপুর আইসোলেটেড অঞ্চলে ছেড়ে দেয়, যেখানে মানুষজন যেত না, সেখানে বংশ বৃদ্ধি করেছে।
আমাদের দেশের প্রতিবছরই বন্যা হচ্ছে, বন্যা হলে এসব জায়গা গুলো পানিতে সব ভেসে যায়, তখন বিভিন্ন উপায়ে, বিশেষ করে কচুরিপানায় সাপগুলো অবলম্বন করে, পদ্মার আশেপাশে জায়গায় চলে যাচ্ছে। সেখানে তারা ল্যান্ড করে বংশবৃদ্ধি করছে। রাসেল ভাইপার সাধারণত ১০, ১৫, ২০, ৩০, ৪০ টা বাচ্চা দিচ্ছে, ৬৩ হায়েস্ট, বিশ্ব রেকর্ড।
কিন্তু আমাদের কিছু লোক বলছে ৮০ টা ১০০ টা বাচ্চা দিচ্ছে, যেটা অতিরঞ্জিত। ২৮ জেলায় রাসেল ভাইপার দেখা গেছে, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি কালকে আমি এক জায়গায় যাব সেখানে আমাকে একটা সাপও দেখাতে পারবে না, সারাদিন ঘুরলেও না।
গত বছর সাতক্ষীরা কলারোয়া কিন্তু সাপ পাওয়া গেছে। তাহলে এটা তো পদ্মার নিকটবর্তী কোন জায়গা না । কলারোয়ায় কোত্থেকে এসেছে। নদীর পাড়ে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নদীয়া ডিস্ট্রিক্টে এভেলেবেল এই রাসেলস ভাইপার/চন্দ্রবোড়া, সেখান থেকে নোয়াখালীর হাতিয়াতে এবং পটুয়াখালীতে চলে গেছে ।
এখানে একটা জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ, রেপটাইল গ্রুপের মধ্যে বিশেষ করে সাপ এবং কাছিম, কাট্টা আছে। অনেকে বলে যে এরা এত ব্রিডিং করছে। মেইল ফিমেল কোথায় পাচ্ছে। তিনি বলেন এদের যখন একবার মেটিং হয়, ফিমেল কিন্তু তার স্পার্ম স্টোর করে রাখতে পারে মিনিমাম ৫ বছর এবং এই ফিমেল যখন মনে করবে তখন সে নিষিক্ত করবে এবং বাচ্চা প্রসব করতে পারে ।
তাছাড়া আপনাদের আর একটা জিনিস খেয়াল করতে হবে রাসেল ভাইপার হোক বা যে কোনো বিষধর সাপ হোক, জন্মগ্রহণের সাথে সাথে বিষ দাঁত এবং বিষ থলি থাকবে। সে যদি দংশন করে, পরিমিত বিষ প্রয়োগ করতে পারে তাহলে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী মারা যাবে ।
তিনি বলেন সাপ দংশন করলে আমাদের দেশের শতকরা ৮০ জন লোক প্রথমে ওঝা বা কবিরাজের কাছে গিয়ে সময় নষ্ট করে। অবশেষে আসে হাসপাতালে। এতে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয় যায়। উল্লেখ্য, রাসেলস ভাইপার বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ৬ (১) ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত প্রাণী।
রাসেল'স ভাইপার ইঁদুর খেয়ে যেমন ফসল রক্ষা করে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সাপের বিষ থেকে অনেক জীবন রক্ষাকারী ঔষধ তৈরি হয়। সাপ মারা দণ্ডনীয় অপরাধ, সাপ মারা থেকে বিরত থাকতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া আছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন