নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা কোনোভাবেই কাটছে না। বাজেটে মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় না থাকলেও, নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ক্রেতাদের। যদিও বিক্রেতারা দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন পাইকারদের উপর।
বর্তমান সময়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য এক আতংকের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে বাজার। বাজার হচ্ছে এমন এক জায়গা যেখানে সমাজের প্রতিটি পর্যায়ের মানুষের আনাগোনা হয়ে থাকে। কিন্তু এর সিংহভাগ অংশই স্বস্তি সহকারে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে সক্ষম হন না।
দুঃসময় পার করছে দেশের অর্থনীতি। ডলার সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ, বারবার টাকার অবমূল্যায়নের ফলে কমে যাচ্ছে টাকার মান। এ অবস্থায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে পণ্যমূল্য। আর এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট দিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এটি এ সরকারের প্রথম বাজেট আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। যা বাংলাদেশের ৫৩তম বাজেট। তবে নিত্যপণ্য, কাঁচাবাজার, মাছ-মাংস, এমনকি মসলাজাত পণ্যের দাম দীর্ঘদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী।
সপ্তাহের ব্যবধানে আরও বেড়েছে বিভিন্ন সবজির দাম। বিশেষ করে ডিম, আলু, পেঁয়াজসহ কিছু সবজির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে। বাজেটের প্রভাবও পড়েছে বাজারে। ঈদের আগেই বাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। বাজারের যে পরিস্থিতি হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম-আয়ের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। তবে বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
নিম্ন আয় ও মধ্যবিত্ত (এক কথায় গরিব) মানুষের জীবন ধারণের নিত্যপ্রয়োজনীয় তিনটি জিনিসের দাম এখন আকাশচুম্বী। ডিম, পেঁয়াজ ও আলুর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এতটাই চড়া, যা বছরের যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ। বাজারে ডিম, পেঁয়াজ ও আলুর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অত্যন্ত চড়া। এই তিন পণ্যের উপর ভর করে টিকে আছে সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষ। আর সেই পণ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা।
সরেজমিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। হালি ৫৫ টাকা। একটি ডিমের দাম নেয়া হচ্ছে ১৪ টাকা। এ দাম প্রায় বছরের যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ। এক সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ৭০ টাকার কম ছিল। এক সময় গরিবের খাবার নামে অধিক পরিচিত ছিল আলু, সব কিছুর দাম বাড়লে নিম্ন আয়ের মানুষ এই আলুর উপর নির্ভর ছিল।
কিন্তু এখন আলু বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬০-৬৫ টাকা, যা গত ফেব্রুয়ারিতে ছিল ২৫-৩০ টাকা। এ ছাড়াও প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামই কমবেশি বাড়তি। যে কারণে বাজারে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বাজার খরচ বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম-আয়ের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।
কারওয়ান বাজারে বাজার করতে এসে বেসরকারি চাকরিজীবী কালাম বলেন, ‘ভাই বাজারে পণ্যের দাম ওয়েদারের মতো। ওয়েদার যেমন গরম বাজারে পণ্যের দামও তেমনি গরম। পেঁয়াজ, আলু, ডিম, রসুন আদার দাম তো এখন আকাশচুম্বী তাই আগে যেমন কিনতাম দুই কেজি করে আর এখন কিনলাম হাফ কেজি করে। এদিকে বেড়েছে শাক-সবজি, মসলা ও ডিমের দাম। তবে চাল, ডাল, আটা-ময়দা, মাছ, মাংস আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।
শাক-সবজির দাম বাড়ার পেছনে ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষেতের ক্ষয়ক্ষতি ও সরবরাহের ঘাটতিকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। সবজির চড়া দামের কারণ জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা কবির মিয়া বলেন, ঝড়ে সবজি ক্ষেত তছনছ হয়েছে। বাজারে সবজির সরবরাহ অনেক কমেছে। তাই দাম বাড়তি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকার কারণে দাম বাড়ছে। আর রসুন, আদা, জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ এলাচের দাম বৃদ্ধির মূল কারণ ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া। তবে ব্যবসায়ীদের দাবিকে ক্রেতারা অজুহাত বলে মনে করছেন। কারওয়ান বাজারে বাবুল মিয়া নামের এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ঝড় আর ডলারের দাম বৃদ্ধি এসব অজুহাত মাত্র। সামনে ঈদ। এ জন্য আগে থেকেই সব কিছুর দাম বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতোই উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে শাক-সবজি, চিনি, চাল, আটা, ডাল ও মাছ-মাংস। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও অনেক জায়গায় ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। স্থানভেদে পাকা টমেটোর কেজি ৫০-৬০ টাকা, পেঁপে ৫০-৬০ টাকা, জাত ও মানভেদে বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০-৬০ টাকা, বরবটি ৬০-৮০ টাকা ও পটোল ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
স্থান ও মানভেদে কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কমে কেজিতে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চিচিঙ্গা ৭০-৮০ টাকা, ঝিঙা ৬০-৭০ টাকা, কচুর লতি ৭০-৮০ টাকা, কচুর মুখী মানভেদে ১০০ টাকা, গাজর ৮০-১০০ টাকা, শসা ৫০-৬০ টাকা ও কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে বাদামি ডিমের দাম ডজনে পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহেও ছিল ১৫৫ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ জাতভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে।
বিভিন্ন জাতের এবং আমদানি করা রসুন ২০০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়। মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকা কেজি। আকার ও মানভেদে অনেকটা একই দামে বিক্রি হচ্ছে তেলাপিয়া। চাষের কই ২৮০-৩৫০ টাকার নিচে মিলছে না।
আকার ও মানভেদে রুই-কাতলার দাম হাঁকানো হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। আকারভেদে শিং মাছ ও বাইলা মাছ প্রতি কেজি প্রকারভেদে ৬০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০, পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৫০০, মলা ৫০০, কাচকি মাছ ৬০০, বাতাসি টেংরা ৯০০, অন্য জাতের টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৭০০, পাঁচমিশালি মাছ ৪০০-৫০০, বাইম মাছ এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা ও রূপচাঁদার কেজি এক হাজারে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, গরুর মাংসের কেজি ৭৮০-৮০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি স্থানভেদে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সোনালি ও লেয়ার জাতের মুরগির কেজি স্থানভেদে ৩৫০ থেকে ৩৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস আগের মতোই এক হাজার ১০০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন