নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র আইভীর উদ্দেশে মসজিদ-মাদরাসা ভাঙা নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র আইভীর উদ্দেশে মসজিদ-মাদরাসা ভাঙা নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর উদ্দেশে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তাকে (আইভী) মন্দিরে গিয়ে সিঁদুর লাগিয়ে পূজা করে মসজিদ মাদরাসা ভাঙার চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলেছেন।

গতকাল শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নে ওলামা পরিষদ উদ্যোগে আয়োজিত ওয়াজ মাহফিলে আইভীকে ইঙ্গিত করে শামীম ওসমান বলেন, ‘চাষাঢ়ায় বাগে জান্নাতের মসজিদ ও মন্ডলপাড়ার মসজিদের জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে। এসব নিয়ে বলতে চাই না। কিন্তু হায়াৎ কতদিন জানি না। তাই এসব নিয়ে বলতে হয়। নতুবা আমি আমার আল্লাহর কাছে ঠেকা থাকব। আমি অচিরেই এর জবাব দিব। ডকুমেন্ট নিয়ে জবাব দিব। আমি একা আছি, কারও ক্ষমতা থাকলে মসজিদ ও মাদরাসায় হাত দিয়ে দেখাক।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীর আরও বলেন, ‘আমি চুপ করে থাকলে আমার মৃত্যুর পর আল্লাহ আমাকে ধরবেন যে “আমি তোকে বানাইসি তুই কী করসোস”। আল্লাহ সম্মান প্রদানকারী এবং আল্লাহই সম্মান কেড়ে নিতে পারেন। সেই আল্লাহর ঘরে যদি আঘাত আসে আর আমি চুপ করে বসে থাকি তাহলে মৃত্যুর পর আমাকে তার জবাব দিতে হবে। আল্লাহ আমাকে সম্মান দিয়েছেন। আর আল্লাহর ঘরে আঘাত আসলে আমিতো চুপ থাকতে পারি না। আল্লাহর ঘরে আঘাত করতে হলে আমার বুকের ওপর দিয়ে করতে হবে।’

 

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে আমার বাসার সামনেই বাগে জান্নাত মসজিদটি। আমি ছোট বেলায় সেখানে খেলেছি। সেখানে একটি কবরস্থান ছিল। যেখানে অনেক কামেল লোকের কবরও ছিল। সেখানে মসজিদ ও মাদরাসা হয়েছে। পর্চায় লেখা আছে, এখানে কবরস্থান ছিল এবং এই জায়গা শুধু ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় কাজে ব্যবহার হবে। তাই হয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জে এক মহিলা (আইভী) আছেন, তিনি গিয়ে বললেন মসজিদ ও মাদরাসা ভাঙতে হবে। মসজিদটি ভেঙে পেছনে নেওয়া হবে আর মাদরাসা উঠিয়ে দেওয়া হবে। মাদরাসা উঠিয়ে সেখানে পার্ক করবেন, মসজিদের নিচে দোকান করবেন। ধর্মে আছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা বাজার আর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট জায়গা মসজিদ। আমি বলতে চাই, কারও ক্ষমতা থাকলে মসজিদ মাদরাসায় হাত দিয়ে দেখুক। তখন আমরাও ক্ষমতা দেখাব।’

শামীম ওসসান আরও বলেন, এ মাসের পর আমি মাঠে নামব। আমার জন্য শুধু দোয়া করবেন। মনে রাখবেন, হিন্দুদের জমি কিংবা আল্লাহর ঘর কিংবা জমিতে কোনো হাত দেওয়া হলে আমার বুকের ওপর দিয়ে গিয়ে হাত দিতে হবে। নতুবা পারবেন না।’

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সারা বাংলাদেশে একসঙ্গে ৫৬০টি মডেল মসজিদ করছেন। নারায়ণগঞ্জের মণ্ডলপাড়ায় ৮৩ শতাংশ জায়গা আছে ওয়াকফার। সেখানে ৫৪৮ বছর পুরানো একটা মসজিদ আছে। ওয়াকফার নেতাদের ডেকে জায়গার জন্য জেলা প্রশাসক অনুরোধ করলেন। তারা ওই মসজিদটি রেখে জায়গার অনুমতিও দিলেন। ওই মহিলা তখন ফোন করে জায়গাটা চাইলেন। তারা তখন বললেন এখানে হাত দিও না এটা আল্লাহর সম্পত্তি। যেই ওই লোক বিদেশে গেলেন, তারা সেখানে জোর করে ঢুকে গেলেন। তারা আমার কাছে এসে কাগজ দেখালেন। কোর্টও তাদের পক্ষে গেল। পরে তিনি বললেন সামনে তিনি পার্কিং স্পেস বানাবেন। আসলে তার লক্ষ্য দোকান বানানো। কারণ, দোকান হলেই বিক্রি করা যায়। নারায়ণগঞ্জের আলেমদের আওয়াজ নেই কেন? মোদির দেশে কী হইসে তা নিয়া হাত পা কাইটা ফালাইতে চান?’

তিনি আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে একটা নিষিদ্ধ পল্লি ছিল। আল্লাহ আমাকে দিয়ে সে পাপ মোচন করিয়েছেন। তখন থেকেই বিভিন্ন ইমাম আলেমদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। তাই তাদের ওপর এত আঘাত। কেন? ওইখানে কী আত্মীয় স্বজন বেশি ছিল? আউয়াল সাহেবকে (হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর) ট্র্যাপ করা হল। রেকর্ডেই তাকে কত কথা বলল আপনারা শুনেছেন। সেখানে তিনি বললেন মাদরাসা একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আমিতো জানি মাদরাসায় আল্লাহর কোরআন শিক্ষা হয়। মাদরাসায় মানুষের সদকায়ে জরিয়া হয়। সেখানে কোনো কথা নাই, কোন রাশিয়ায় কী হয় তা নিয়ে তুলকালাম হয়ে গেল। নারায়ণগঞ্জের এতো আলেম গেল কই? ভেবেছিলাম কথাগুলো পরে বলবো। আজকে বললাম কারণ কালকে নাও থাকতে পারি।’

শামীম ওসমান আরও বলেন, ‘যারা সংখ্যালঘু তাদের রক্ষার দায়িত্ব মুসলমানদের। ওয়াকফার সম্পত্তি যেমন রেজিস্ট্রার হয় না তেমনি দেবোত্তর সম্পত্তিও রেজিস্ট্রার হয় না। একাত্তরে কয়েক ধরনের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। কেউ দেশ বাঁচাতে যুদ্ধ করেছেন, কেউ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, কেউ লুটেরা মুক্তিযোদ্ধা। আমি সব দেখেছি, মনে আছে। এত ভুয়া সম্পদ কোথা থেকে আসে। দেশকে নিয়ে খুব ষড়যন্ত্র হচ্ছে। খুব ভয়ংকর খেলা হচ্ছে। আপনারা সবাই এই দেশের জন্য কাজ করার চেষ্টা করবেন।

বক্তব্যের শেষে নিজের মৃত ভাই, বাবা ও মা এবং তার পরিবারের সুস্থতা কামনা করে সবার কাছে দোয়া চান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সস্পাদক বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী, আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, নারায়ণগঞ্জের ওলামা পরিষদ নেতা মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, হারুন অর রশিদ, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, জেলা পরিষদের সদস্য ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password