হাসপাতালে ঢুকে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে পিটিয়ে শাহনাজ বেগম মিম (৫০) নামের এক আয়াকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যার অভিযোগ উঠেছে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালকসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দেবীদ্বার সদর এলাকার জেলা পরিষদ মার্কেট সংলগ্ন মা-মনি প্রাইভেট হাসপাতালে।
নিহত শাহনাজ মিম (৪৫) দেবীদ্বার পৌর এলাকার ভূষণা গ্রামের মৃত সেকান্দর আলীর মেয়ে। ঘটনার পর আহত মিমকে মাথা ও মুখমণ্ডল থেঁতলানো অবস্থায় দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর দুপুর ২টায় সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই ঘটনায় নিহতের চাচাতো ভাই জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে দেবীদ্বার থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন।
জহিরুল জানান, মিমের একজন সৎভাই থাকলেও তিনি তার মতো করেই চলতেন। তার মা-বাবা, আপন ভাই-বোন কেউ নেই। তিনি বিয়ে করেননি। দেবীদ্বার মা-মনি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে সেখানে আয়া পদে কর্মরত ছিলেন। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রোগীরাই ছিল তার পরিবার। তার সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থও হাসপাতালসংশ্লিষ্ট কয়েকজন বিশ্বস্ত লোকের কাছে আমানত হিসেবে আছে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে তার আরেক চাচাতো ভাই আমিন আহমেদ বলেন, ‘আমার চাচাতো বোনের স্বজন বলতে আমরাই। তবে সে হাসপাতালেই থাকত। এটাকে সে নিজের বাড়ি মনে করেই থাকত। আমার জানা মতে তার কোনো শত্রু নেই। তাকে হত্যা করার কোনো কারণও দেখছি না। ডাকাতি কিংবা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তাকে এভাবে পিটিয়ে হত্যা করতে পারে না। তার উপার্জিত অর্থ লুট বা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘হত্যাকারী তৃতীয় তলা থেকে নিচতলা পর্যন্ত নামার সময় পায়ের ছাপে রক্তের চিহ্ন রেখে গেছে। এত বড় একটি হাসপাতালে তেমন কোনো নিরাপত্তা ছিল না, এমনকি সিসি ক্যামেরাও ছিল না। ঘটনার সময় নৈশপ্রহরী, নার্স, আয়াসহ চারজন স্টাফ ও আটজন রোগী ও রোগীদের সাথের লোকজনও ছিল।’ দেবীদ্বার পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার মো. মজিবুর রহমান বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক।
সঠিক তদন্ত করলে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য বেরিয়ে আসবে। এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নয়ন মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি স্পর্শকাতর। টাকা-পয়সা লেনদেন থেকে, নাকি অন্য কোনো কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা তদন্তের আগে বলা যাচ্ছে না। একটি অভিযোগ পেয়েছি। হাসপাতালের কয়েকজনকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটনে কাজ করছি।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন